লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকা দেওয়ার পর ১৭ জন মাদ্রাসাছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে তাদেরকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রী।
তবে চিকিৎসকরা বলছেন, টিকা দেওয়ার পর ভয়ে ওই ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
অসুস্থ ছাত্রীদের সহপাঠিদের দাবি, টিকা প্রদানকারীরার বলছেন, ছাত্রীরা সকালে খাবার না খাওয়ায় টিকা দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। যদি এটি সত্য হয়, তাহলে টিকা দেওয়ার আগে কেন তাদেরকে খাবারের কথা জিজ্ঞেস করা হয়নি? কয়েকজন নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। কয়েকজন প্রচন্ড ব্যাথায় হাত-পা নাড়াতে পারছে না। তাদের কিছু হলে দায় নেবে কে?
এদিকে হাসপাতালে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের তথ্য-ছবি সংগ্রহকালে টিকা কার্যক্রমে ওয়ার্ল্ড হেল্থ অরগানাইজেশনের লক্ষ্মীপুরে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেওয়া ডা. খাদিজা আহমেদ গণমাধ্যম কর্মীদের বাঁধা দেওয়া চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি রোগীর সঙ্গে থাকা লোকজনকে বলেন, ছাত্রীরা অসুস্থ হয়নি। ভয়ে তাদের মাথা ঘুরাচ্ছে। এর বেশি কিছু নয়। একপর্যায়ে সাংবাদিকরা তার বক্তব্য নিতে গেলে, তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বিনা অনুমতিতে আমার ভিডিও বক্তব্য নেবেন না বলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তিনি।
অসুস্থ ছাত্রীরা হলেন- মিথিলা (১৩), আখি আক্তার (১২), আফিফা (১২), প্রীতি (১২), জান্নাতুল আকলিম মিপ্তা (১২), মাইশা (১৩), মাহি (১২), মাহিয়া আক্তার (১২), আছমা (১২), সুমাইয়া (১২), মারিয়া আক্তার (১২), মীম (১২), খাদিজা (১২), তামান্না (১৪), নুসরাত (১৩) ও আকলিমাসহ (১২) ১৭ জন।
মাদ্রাসা সূত্র জানায়, বুধবার দুপুরে সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরকে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধের এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়। টিকা দেয়ার আধা ঘণ্টা পর কয়েকজন ছাত্রী মাথাঘুরে পড়ে যায়। এরপর একে একে ১৭ জন ছাত্রী বমি ভাব ও মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
জান্নাতুল আকলিম মিপ্তা নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবা শামছুল আলম বলেন, টিকা দেওয়ার পর প্রথমে আমার মেয়েসহ ৪ জন অসুস্থ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তাদেরকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। আমার মেয়ের ডান পা ব্যাথা হয়ে প্রায় অবশের মতো অবস্থা হয়েছে। ধরাও যাচ্ছিল না। নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হয়েছে, বুকেও ব্যাথা ছিল।
মাদ্রাসার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. মাহবুব আলম বলেন, টিকা দেওয়ার আধাঘণ্টার মধ্যেই শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদেরকে আমরা হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কয়েকজনের নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল। তাদেরকে অক্সিজেন দিয়েছে ডাক্তাররা।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক কমলাশীষ রায় বলেন, টিকা দেওয়ার পর ভয়ে ওই ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা তাদেরকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিচ্ছি। এটা টিকার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নয়। ভয় থেকে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
গত ২৪ অক্টোবর থেকে লক্ষীপুরে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং স্কুলের বাইরে থাকা ১০ থেকে ১৪ বছরের এক লাখ ১২ হাজার কিশোরীকে বিনামূল্যে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (গ্যাভি), ইউনিসেফ এবং ডাব্লিউএইচও’র সহায়তায় এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এসএস