কক্সবাজার: কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের আগমণ সীমিতকরণ ও রাত্রিযাপন নিয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন পুনঃবিবেচনার দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের নেতৃবৃন্দ। কক্সবাজারের বিশিষ্টজন এবং স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা না করে মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন জানান, ‘পুরো পর্যটন মৌসুমের মাঝে কোন সময় রাত্রি যাপন, আবার কোন সময়ে রাত্রি যাপন নয় এ ধরনের বৈষম্য দেশের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক সীমিতকরণ নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সরকারের মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য কিছু বিধিনিষেধ থাকবে। নভেম্বরে পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি থাকলেও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতিদিন মাত্র দুই হাজার পর্যটক রাত্রিযাপনের সুযোগ পাবেন, এবং ফেব্রুয়ারিতে পুরোপুরি বন্ধ রাখা হবে পর্যটন কার্যক্রম। সরকারি সিদ্ধান্তের পুনঃবিবেচনার জন্য সম্প্রতি দ্বীপবাসী এবং পর্যটন সংশ্লিষ্টরা দাবি জানিয়েছে। একই সাথে কক্সবাজার নাগরিক ফোরাম সরকারের এরকম সিদ্ধান্ত পুন:বিবেচনার দাবি জানাচ্ছে।
সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, মূলত দ্বীপটির পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য। তবে কক্সবাজার নাগরিক ফোরাম মনে করে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পর্যটকদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা এবং দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব। পর্যটন পুরোপুরি বন্ধ না করে, বরং সুশৃঙ্খল ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে পরিবেশ সুরক্ষা এবং দ্বীপবাসীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা যেতে পারে। দ্বীপের বাসিন্দাদের জীবিকা পর্যটনের উপর নির্ভরশীল।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরাম মনে করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষার জন্য পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সময় পর্যটকদের দায়িত্বশীল আচরণ সম্পর্কে শিক্ষিত করা যেতে পারে, যেমন- প্লাস্টিক ব্যবহার না করা, ময়লা না ফেলা ইত্যাদি। স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রবর্তন পর্যটক সংখ্যা পুরোপুরি সীমিত না করে একটি স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে। যেমন, প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক পর্যটককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া অথবা নির্দিষ্ট মৌসুমে পর্যটকদের আসার সুযোগ প্রদান করা। এর ফলে পর্যটন অব্যাহত থাকবে এবং পরিবেশও সুরক্ষিত থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে উখিয়া উপজেলার ইনানী সমুদ্র সৈকতে নৌবাহিনীর জেটি অপসারণ করার দাবি জানিয়ে নাগরিক ফোরাম নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশেষজ্ঞ মহলের কোন ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই এই জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। নাগরিক ফোরাম ইনানী সমুদ্র সৈকতে নির্মিত বিতর্কিত নৌবাহিনীর জেটি অপসারণ নিয়ে শুরু থেকে দাবি জানিয়ে আসছে। এই জেটি অপসারণ নিয়ে নাগরিক ফোরাম ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চে রিট আবেদন করলে রুল ইস্যু করা হয়। এই জেটি পরিবেশ সংরক্ষিত এলাকা (ইসিএ) আইন ভঙ্গ করে নির্মাণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। জেটি ব্যবহার করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পর্যটক পরিবহন চলছে, যদিও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী জেটি অপসারণ করা উচিত ছিল। পরিবেশবিদ ও স্থানীয় সংগঠনগুলোর মতে এটি সৈকতের পরিবেশ ও মেরিন ড্রাইভ সড়কের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার জেলায় পর্যটনের নতুন স্পট সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দিন বাহারি, প্রফেসর আনোয়ারুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ টুয়াকের উপদেষ্টা মফিজুর রহমান প্রমুখ।
এসএস