গাজীপুর: গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকার টিএনজেড অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের দাবিতে করা বিক্ষোভে অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। ৫৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে কোন সমঝোতা না হওয়ায় এর খেশারত দিতে হচ্ছে এ মহাসড়ক ব্যবহারকারী লক্ষাধিক মানুষদের।
জানা যায়, গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পোশাক কারখানা ছাড়াও বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কাজ করেন হাজার-হাজার মানুষ। তবে টিএনজেড অ্যাপারেলস পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভের প্রভাবে মহাসড়কটিতে দূরপাল্লার বাসসহ স্বাভাবিক ভাবে গণপরিবহন চলাচল করতে না পারায় চরম বিপাকে পড়েছে কর্মজীবী ও অফিসগামী মানুষেরা। এছাড়াও গাজীপুরের পাশের জেলা ময়মনসিংহ বিভাগ সমূহের ৪ জেলার হাজার-হাজার পেশাজীবি মানুষেরা রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ থেকে বিভিন্ন হয়ে পড়েছেন।
গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা মোড়ে ঢাকা অভিমুখী যাচ্ছিলেন রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। সোনালীনিউজকে তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেলে জরুরি প্রয়োজনের যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছেন। সকাল ৮ টার দিকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা মোড়ে এসে জানতে পারলেন ঢাকার দিকে যানবাহন চলাচল করছেনা। পোশাক শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। পরে তিনি বাধ্য হয়েই বিকল্প পথে রওনা দিয়েছে।
টঙ্গী মিলগেট এলাকায় একটি কারখানায় কাজ করেন সুমাইয়া আক্তার। তিনি বলেন, তিন দিনের জন্য ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। পরে আজ সোমবার ভোর সকালে ময়মনসিংহ থেকে সিএনজি দিয়ে রওনা দেন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। কিন্ত গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকা থেকে কোন গণপরিবহন তো দূরের কথা অটোরিকশা বা ভ্যান না পাওয়ায় প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় ধরে অপেক্ষা করছেন। তিনি আরও বলেন, আজকে যদি কারখানায় যোগদান করতে না পারেন, তাহলে তার কমপক্ষে এক হাজার টাকা লোকসান হবে। এর পাশাপাশি মালিক পক্ষের লোকজনের অনেক কথা শুনতে হবে।
জানা যায়, গাজীপুরে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ ও বন্ধ কারখানা চালুর দাবিতে রোববার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে টিএনজেড গ্রুপের ৫টি কারখানার পোশাক শ্রমিকরা। পরে রাত্রি কালীন সময়েও তারা এ বিক্ষোভ চলমান রাখে, যা সোমবার সকালেও চলমান রয়েছে। এ হিসেবে ৫৮ ঘণ্টারও অধিক সময় ধরে চলা এ অবরোধে কারণে ওই মহাসড়কে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
একই সঙ্গে এর প্রভাবে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা বাইপাস মহাসড়কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কগুলোতে পথচারী, দূরপাল্লার বাসসহ গণপরিবহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে জনসাধারণের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) সারোয়ার আলম জানান, শ্রমিকদের আন্দোলন চলমান থাকায় ও কারখানার নিরাপত্তার স্বার্থে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের কম পক্ষে ৩০ টি কারখানার কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে বন্ধের নোটিশ সাঁটিয়ে দিয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলো মধ্যে কয়েকটি হলো, কোনাবাড়ি-জিরানী এলাকার রেজাউল অ্যাপারেলস লিমিটেড, কেএম নোবলী গার্মেন্টস, বানিকা ফ্যাশন লিমিটেড, ডরিন গার্মেন্টস, ডরিন অ্যাপারেলস, লাইফ টেক্সটাইল, এবিএম ফ্যাশন, পিএন কম্পোজিট নিট লিমিটেড, ভোগড়া বাইপাস এলাকার টিএনজেড অ্যাপারেলস, বেসিক ক্লথ লিমিটেড, অ্যাপারেল পালাস ইকো লিমিটেড, বেসিক নিটওয়্যার লিমিটেড।
উল্লেখ্য, গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি মোগরখাল এলাকার টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেডের পাঁচটি কারখানার শ্রমিকদের গত দুই মাসের (সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর) বকেয়া বেতন বাবদ প্রায় ১৪/১৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আশ্বাস দিয়েও তা পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর নির্ধারিত তারিখে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের কথা থাকলেও ওইদিন তা পরিশোধ না করে কর্মকর্তারা কারখানা তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়।
এসএস