ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের বিভিন্ন সড়কে এখন আতঙ্কের নাম বালু বোঝাই ড্রাম ট্রাক। ড্রাম ট্রাক ছাড়াও ট্রাক, মিনি ট্রাকের ওভার লোড, বেপরোয়া গতি ও খোলা অবস্থায় বালু নিয়ে যাওয়ায় হারহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিভিন্ন সংগঠন থেকে ট্রাকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিলেও নীরব থাকছে প্রশাসন। সড়ক বিভাগ বলছে, এক্সেল লোড মেশিন স্থাপনের কাজ শেষ হলেই নিয়ন্ত্রণে আসবে ট্টাকগুলো।
ময়মনসিংহের সড়কগুলোতে রাত দিন বেপরোয়া গতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বালু-মাটি বোঝাই শত শত ট্রাক। ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বৈধ আর অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। সেই বালুগুলো জেলার ভেতর সহ আশেপাশে জেলাগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গফরগাঁও, ত্রিশালের বালিরপাড়া, কালির বাজার, সদরের বাবখালি, সুতিয়াখালি, কাচারীঘাট সহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বালু আনা নেওয়া হচ্ছে ড্রাম ট্রাক, ট্রাক, মিনি ট্রাকে করে। সরু রাস্তা ও বালু ঢেকে না নিয়ে যাওয়ায় বাড়ছে দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ।
সড়কের পাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট বাজার থাকায় ট্রাকের কারণে সড়কে চলাচলকারীরাও থাকেন চরম আতঙ্কে। হর্ণ, ধুলা আর কালো ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সড়ক।
সুতিয়াখালির স্থানীয় বাসিন্দা জলিল মিয়া বলেন, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে হাজার হাজার ট্রাক চলাচল করে। কোন নিয়ম মানে না এরা। বেপরোয়া গতিতে চালায় গাড়ী। এতে অনেকেই দুর্ঘটনায় পড়ছেন প্রতিনিয়ত।
মোটরসাইকেল চালক বশির আহমেদ জানান, ট্রাকগুলো বালু নেওয়ার সময় পর্দা দিয়ে ঢেকে নিয়ে যায় না। এতে বাতাসে বালুগুলো উড়ে আমাদের চোখে মুখে এসে পড়ে। বালুর কারনে শুধু আমাদের বাইক চালকদের না, সব ধরনের যানবাহনের চালকদের সমস্যা হয়।
অটোরিকশা চালক বাবু মিয়া বলেন, সড়ক হলো চিপা, আর ট্রাকগুলো অনেক বড়। এই গুলোট্রাক সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারীচালিত অটোরিকশাকে কোন পাত্তা দেয় না। এই ট্রাকগুলোর কারনে সড়কে যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে সমস্যা হয়।
শেষ মোড় বাসিন্দা স্বপন আহমেদ জানান, বালু উড়ে ঘরে ঢুকে। জানলা দরজা সব সময় বন্ধ রাখতে হয়। বাইরে ভেজা কাপড় শুকানো যায় না বালুর কারনে। আমরা অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারি না। কখন দুর্ঘটনা ঘটে সেই আতঙ্কে থাকি। কয়েকদিন আগে এখানে ড্রাম ট্রাক একটি সিএনজি অটোরিকশাকে চাপা দিলে গর্ভবতী এক নারী সহ দুইজন মারা যায়। এখন এই সড়কে ভয় কাজ করে চলাচল করতে।
নিরাপদ সড়ক চাই এর ময়মনসিংহ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রতন জানান, ড্রাম ট্রাকগুলো এখন মহাসড়ক থেকে শুরু করে আঞ্চলিক সড়কগুলোর জন্য একটা আতঙ্কের নাম। এই বেপরোয়া গতি, বালু ঢেকে না নিয়ে যাওয়া বিষয়ে আমাদের সংগঠন থেকে সেমিনার, মানববন্ধন, গোল টেবিল বৈঠক হয়েছে। প্রশাসনের কাছে দাবিও তুলেছি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু প্রশাসন সব সময় নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। প্রশাসন কেন নীরব সেটা আমাদের জানা নেই।
এদিকে ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন জানান, ট্রাকের ওভার লোড ও গতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালে এবং ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কে এক্সেল লোড মেশিন স্থাপনের কাজ চলছে। এছাড়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে, বালু না ঢেকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমরা প্রশাসককে জানাব। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, এমনটাই প্রত্যাশা ময়মনসিংহবাসীর।
এসএস