সিরাজগঞ্জ: গত ১০ নভেম্বর সোনালী নিউজ অনলাইন সংস্করণে ‘কাটা হবে তাড়াশ-রানীরহাট সড়কের চার হাজার গাছ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ ওই সড়কের বিদ্যমান ৩ হাজার ৮৯০ টি গাছ কাটার দরপত্র স্থগিত করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান। তিনি মুঠোফোনে বলেন, রায়গঞ্জ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুজ্জামানকে গাছ কাটার দরপত্র স্থগিত করার নির্দেশনা দিয়েছি।
সম্প্রতি পরিবেশ বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা দেশের রাস্তা বা সড়কে থাকা কোন ধরনের গাছ না কাটার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তা তা সত্ত্বেও উপদেষ্টার নির্দেশ উপেক্ষা করে পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং জীব ও বৈচিত্র্যের কথা না ভেবে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের তাড়াশ-রানীর হাট আঞ্চলিক সড়কের বেড়খাড়ি থেকে রানীর হাট পর্যন্ত আট কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়কের ৩ হাজার ৮৯০ টি গাছ কাটার দরপত্র আহবান করে তা কাটার আয়োজন হয়। এর আগে গাছ কাটার জন্য উপজেলার তালম ইউনিয়ন ‘বৃক্ষরোপন ও পরিচর্যা সমিতি’ গত ৪ নভেম্বর পত্রিকায় গাছ কাটার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন। তারা তাড়াশ উপজেলা বন বিভাগ থেকে গাছগুলোর মূল্য ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকা নির্ধারণও করে নেন। পাশাপাশি আগামী ২০ নভেম্বর দরপত্র জমাদান শেষ তারিখ ছিল। ২০ তারিখের পর সর্বোচ্চ দরদাতা প্রায় চার হাজার গাছ কেটে নিয়ে যেতেন।
এ বিষয়ে গত ১০ নভেম্বর সোনালী নিউজের অনলাইন সংস্করণে ‘কাটা হবে তাড়াশ-রানীরহাট আঞ্চলিক সড়কের চার হাজার গাছ’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ হয়। যা জেলা পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমানের নজরে আসে। আর ১০ নভেম্বর বিকালে ওই দরপত্র আহবান স্থগিত করেন তিনি।
এদিকে সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকালে তাড়াশ-রানীর হাট আঞ্চলিক সড়কের বেড়খাড়ি থেকে রানীর হাট পর্যন্ত আট কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়কের ৩ হাজার ৮৯০ টি গাছ পরবর্তীতেও যেন আর কাটা না হয়, যার জন্য উপজেলা সচেতন ও পরিবেশবাদী জনগণের পক্ষে মো. সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যাক্তি তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা’র মাধমে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।
অপরদিকে গাছ কাটার দরপত্র স্থগিত হওয়ায় কৃজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সাংবাদিক হাদিউল হৃদয়। তিনি জানিয়েছেন, ব্লেজিং এন্ড মার্ককিং করা অনন্ত ২৫০ টি গাছ আছে যার বয়স কোন ভাবেই ২১ বছর নয়। অথাৎ সমিতি যে গাছ গুলো ২০০৩ সালে লাগিয়েছিল তার বয়স হয়েছে এখন ২১ বছর। কিন্তু ২১ বছর নয়, এমন গাছও ব্লেজিং এন্ড মার্ককিং করে বিক্রির মাধ্যমে অনৈতিক ভাবে তা কাটার চেষ্ট চলছে। আর জুন থেকে আগষ্ট পর্যন্ত গাছ লাগানোর মৌসুম ধরা হয়। এখন গাছ কাটলে আর গাছ লাগানোও যাবে না। যাতে করে সড়কের পাশের আট দশটি গ্রামের ৪০০০ হাজার হেক্টর তিন ফসলি জমিতে কাজ করতে আসা শত শত কৃষক, কৃষি শ্রমিক, ভ্যান চালক, পথচারী রোদ, ঝড়, বৃষ্টি, গরমে কোন ছায়া বৃক্ষ না পেয়ে দাঁড়ানোর জায়গাটাও পেত না।
রায়গঞ্জ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুজ্জামান বলেন, তালম ইউনিয়ন বৃক্ষরোপন ও পরিচর্যা সমিতি’ কে পত্র মারফত দরপত্র স্থগিতের নির্দেশনার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান জানান, দরপত্র স্থগিত করা হয়েছে। এলাকাবাসির গাছ না কাটার আবেদন ও পত্রিকার সংবাদে প্রকাশিত অভিযোগ গুলো সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইএ