খুলনা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা বুলেট দিয়ে মানুষ খুন করে ক্ষ্যান্ত হয়নি। মানুষ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাকে এ দেশের মানুষ ক্ষমা করবে না।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ডুমুরিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
পরওয়ার বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও তার ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। তার বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে বসিয়ে রাখা দোসরদের কাজে লাগিয়ে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের এসব ষড়যন্ত্র রুখতে সকল কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ডুমুরিয়া ও ফুলতলা এক সময় সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। তখন জীবন বাজি রেখে সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী দমনে জনগণকে সাথে নিয়ে নির্মূল করেছি। আজ আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর এতো বড় সমস্যা সমাধানে এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। এ জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারকে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে সংস্কার করে একটি যৌক্তিক সময়ে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহবান জানান তিনি।
খুলনা জেলা মজলিসে শূরার সদস্য ও ডুমুরিয়া উপজেলা দক্ষিণের আমীর মাওলানা মুখতার হুসাইনের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মাস্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, খুলনা জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা, খুলনা জেলা ছাত্র শিবির সভাপতি বেলাল হোসাইন রিয়াদ প্রমুখ।
সম্মেলনে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এত বেশি ছাত্র-জনতা হত্যা করেছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে আর ঘটেনি। শিশুদের কী অপরাধ ছিল? তারা শতাধিক শিশুকে হত্যা করেছে। নব্বই বছরের বৃদ্ধ রাস্তায় আসেনি, বৃদ্ধদের ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এত জঘন্যতম, নির্মমতা ও পৈশাচিকতা প্রদর্শন করেছে আওয়ামী লীগ। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পরে তাদের শাসনামলের সবচেয়ে নির্যাতিত-মজলুম দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনো প্রতিশোধ নেয়নি। কারণ, জামায়াত এভাবে প্রতিশোধ গ্রহণ করবে না। আমরা এই জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই প্রতিশোধ নেব ইনশাআল্লাহ। আমরা জানমাল দিয়ে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে পরকালের মুক্তি নিশ্চিত করতে চাই।
মাওলানা এমরান হুসাইন বলেন, আমরা পরাধীন ছিলাম। এবার দ্বিতীয়বারের মতো ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা লাভ করেছি। স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছি। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে আমরা নিজের ভোট নিজে দিতে পারিনি। দিনের ভোট রাতে হয়ে যেত। ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যেতে হতো না। মানুষজন পরাধীন ছিল। সাংবাদিকরা সত্যকে তুলে ধরতে পারেননি। শাসকগোষ্ঠী ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠনালি চেপে ধরেছিল।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন শেখের বেটি দেশ ছেড়ে পালায় না। কিন্তু উনি দেশ ছেড়ে তো পালিয়েছেনই, এমনকি নিজ দলের কর্মী সমর্থকও পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়েছেন। এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সৎ, দক্ষ, দেশ প্রেমিক নাগরিক তৈরি করতে হবে। মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :