বরগুনা: বরগুনায় অতিরিক্ত দামে এলপিজি গ্যাসের বিক্রির লাগাম কেউ থামাতে পারছেনা। সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে অতিরিক্ত দামে বিক্রির চলছে হিড়িক! সরকারের বেধে দেয়া নির্ধারিত দামের তোয়াক্কা না করে ওপেন সিক্রেট বিক্রি চলছে সর্রত্র। বাধ্য হয়ে গ্রাহকদের অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে কিনতে হচ্ছে রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাস। গ্যাসের অতিরিক্ত দাম বন্ধে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকারের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা আদায়ের পরও মিলছে না সুরাহা। ব্যবসায়ীদের দাবী কোম্পানির কাছ থেকে কিনে দোকান পর্যন্ত আনতে সরকারের বেধে দামের চেয়ে বেশী পড়ে যায়।
বাংলাদেশ এনার্জি এন্ড রেগুলেটরি কমিশন (বিসিআরসি) অক্টোবর মাসের দাম ১৪৫৫ টাকা গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির নির্দেশনা থাকলেও ব্যবসায়ীরা ১৬০০ টাকায় বিক্রি করছে শহর এলাকায়। সরকারের দেয়া দামের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শহর ছেড়ে শহরতলী ও গ্রামের বাজারে ১৬৫০ থেকে ১৭০০ টাকায় হরহামেশা বিক্রি হচ্ছে ১২ কেজির এলপিজি বোতল। গৃহস্থালিতে রান্নায় গুরুত্বপূর্ণ পূর্ণ হয়ে ওঠা এলপিজি গ্যাস বেধে দামের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা গ্রাহকদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে বিক্রেতারা।
বরগুনা শহরের বিভিন্ন এলাকার গৃহিনীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে রান্না বান্নায় এখন অনেকেই এলপিজি গ্যাস ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। নানান ব্যস্ততার ভীড় তাদের রান্নার কাজে সহজতর হচ্ছে গ্যাস ব্যবহার করে রান্না করা। বর্তমানে এলপিজি গ্যাসের মূল্য অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে তাদের কাছে একরকমের অস্বস্তি বিরাজ করছে। সরকারের কাছে তাদের দাবি দ্রুত সমায়ে গ্যাসের দাম সরকারের বেধে দেয়া দামে বিক্রির উদ্যোগ নেয়া। চরকলোনী এলাকার লাবনী আক্তার পপি জানান সরকারের দামের চেয়ে ১৬৫ টাকা বেশী দিয়ে গ্যাস কিনতে হয়। মূল্য নিয়ে কথা বলতে গেলে সরবরাহ কম বলে গ্যাস সংকট দেখায়। আসলে এরা সংকট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। চা বিক্রেতা কবির মিয়া বলেন, বেশি দাম দিয়ে গ্যাস কিনে চা বিক্রি করে এখন তেমন কোন লাভ করা যায়না। এমন চলতে থাকলে ব্যবসা করা দায়। আদাবাড়িয়া গ্রামের আবুল হোসেন বলেন গ্রামের বাজার থেকে ১৭৫০ টাকায় গ্যাস কিনেছি, তারপরে গাড়ি ভাড়া দিয়ে ঘরে আনতে ১৮০০ টাকার ওপর পড়ে যায়। বাড়িতে মেহমা আসলে কিংবা রাতে খাবার গরম করে খাওয়ার শখ মিটে গেছে এত টাকা দিয়ে গ্যাস কিনে।
বরগুনায় বেশ কয়েকটি কোম্পানির বোতল জাত এলপিজি গ্যাস বিক্রি হয়। বসুন্ধরা, টোটাল, সুন্দরবন, ওরিয়ন, ওমেরা, সেনা উল্লেখযোগ্য। এদের দামেও রয়েছে ভিন্নতা। বসুন্ধরা শহরের মধ্যে ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। অরিয়ন সহ অন্য কয়েকটি ১৫৫০ টাকায়। বরগুনা শহরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বসুন্ধরা ১২ কেজি এলপিজি গ্যাসের জন্য তারা ১৪৩৫ টাকা প্রতি সিলিন্ডারের জন্য ব্যাংকে জমা দেয়। এরপর ট্রাক ভাড়া, সিলিন্ডার ওঠা নামা খরচ, ঘর ভাড়া, কর্মী বেতন দিয়ে হিসাব করলে সরকারের বেধে দেয়া দামের চেয়ে অনেক বেশি পড়ে যায়। ফলে তাদেরও গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে দাম বেশি রাখতে হয়। কোম্পানি যদি দাম না কমায় তাহলে আমাদের কিছু করার থাকেনা।
বরগুনা এলপিজি গ্যাস বিক্রেতা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌম্য দাস বলেন, সরকারের উচিত কোম্পানি গুলোর সঙ্গে বসে ডিলার পর্যায়ে সরবরাহে দাম নির্ধারণ করা। সরকারের বেধে দামে গ্যাস বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের। এব্যাপারে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ভোক্তা অধিকার আয়োজিত সভায় আমরা আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট করেছি।
বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামীম মিঞা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায়ই এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়। এরপরও তারা অতিরিক্ত দামে বিক্রির খবর আসে আমাদের কাছে। অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে কেউ যদি বিশেষ ফায়দা নিতে চায় আইনের মাধ্যমে তাদের লাইসেন্স বাতিল সহ বড় ধরনের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এসআই