• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ডিবি পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ, মামলা নিতে অনিহা পুলিশের


লালমনিরহাট প্রতিনিধি নভেম্বর ২০, ২০২৪, ০৬:২২ পিএম
ডিবি পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ, মামলা নিতে অনিহা পুলিশের

অভিযুক্ত রাজিব। ফাইল ছবি।

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় রায়হানুল ইসলাম রাজিব (৩৮) নামে ডিবি পরিচয়ে দেয়া এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় একাধিক চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এরই মধ্যে থানায় অভিযোগ দিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় বাড়ি ছাড়া হয়ে ঘুরছেন ভুক্তভোগী আমিনুর রহমান নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। 

অভিযুক্ত রায়হানুল ইসলাম রাজিব উপজেলার পশ্চিম বেজগ্রাম এলাকার তাইজুল হকের ছেলে। রাজনৈতিক কোনো পরিচয় না থাকলেও সর্বদাই ক্ষমতাসীনদের ব্যানারে নিজেকে জাহির করেন তিনি। ক্ষমতাসীনের ব্যানার ব্যবহার করে ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছেন রাজিব।

 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ নভেম্বর রাতে হাতীবান্ধা উপজেলা সদরে বৈশাখী হোটেলে বসে নাস্তা করছিলেন একই উপজেলার পুর্বসিন্দুর্না গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান (৪৩)। তার পাশে গিয়ে বসে নিজেকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দেন রাজিব। আস্তে আস্তে রাজিবের কয়েকজন সহযোগীও ওই টেবিলে বসেন। 
এসময় ব্যবসায়ী আমিনুরের ধন সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন করেন রাজিবের লোকজন। পরে অবৈধ সম্পদের মামলা থেকে বাঁচতে হলে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। এসময় আমিনুর রহমান তাদের কাছে ডিবি’র পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে তাকে বেধড়ক মারপিট করে তার কাছে থাকা ভুট্টা বিক্রির এক লাখ ৪৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। এক পর্যায়ে হোটেলের লোকজন এগিয়ে এলে তারা কৌশলে পালিয়ে যায়। 

পরে স্থানীয়রা ব্যবসায়ী আমিনুর রহমানকে উদ্ধার করে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে রাজিব ও তার লোকজনদের চিহ্নিত করেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় রাজিবকে প্রধান করে ৫ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনের বিরুদ্ধে হাতীবান্ধা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান। তবে অভিযোগের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এই বিষয়ে তদন্ত করে কোন মামলা গ্রহণ করেনি পুলিশ। বরং রাজিব বাহিনীর অব্যাহত হুমকীতে নিরাপত্তাহীনতায় বাড়ি ছাড়া হয়ে রয়েছেন ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান।

সিসিটিভি থেকে ধারণ করা আমিনুর রহমানকে মারধরের ছবি।

এর আগে গত ৪/৫ মাস আগে হাতীবান্ধা উপজেলার জেআরএস ইটভাটায় গিয়ে ভাটা ম্যানেজার খয়বর হোসেনের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন রাজিব ও তার লোকজন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় ম্যানেজার খয়বর হোসেনকে মারপিট করেন তারা। তার হামলায় আহত ম্যানেজার খয়বর হোসেন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে হাতীবান্ধা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগও নথিভুক্ত বা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি পুলিশ। 

ভাটার ম্যানেজার খয়বর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দলবল নিয়ে এসে রাজিব ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। তারা আমার মালিকের সাথে কথা বলতে জোর করেন। আমি এতে রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে মারপিট শুরু করেন। এসময় তারা আমাকে টাকা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকী দেন। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ নিলেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। সেই থেকে ভাটা বন্ধ রয়েছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, যখন যে দলই ক্ষমতায় থাকে তখন সেই দলের লোক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন রাজিব। ক্ষমতাসীন দলের লোকদের সাথে মিশে চাঁদাবাজি করেন। প্রতিবাদ করলে হেনস্থার স্বীকার হতে হয়। ক্ষমতাসীনদের সাথে চলায় ভয়ে কেউ মুখ খুলে না। 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আমিনুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, থানায় অভিযোগ দেয়ায় আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে রাজিব বাহিনী। পুলিশকে সিসিটিভি ফুটেজ দিয়েছি। এসব দেখেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। 

তবে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে রায়হানুল ইসলাম রাজিব সাংবাদিকদের জানান, ব্যবসায়ী আমিনুর স্থানীয় অনেকের সাথে প্রতারণা ও জরবদস্তি করে সম্পদ গড়েছেন। জোরপূর্বক জমি লিখে নেয়ার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। সেইসব ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়াতে হোটেলে আমিনুরের সাথে কথা কাটাকাটি হয় মাত্র। চাঁদা নয়, ইটভাটায় আমার শেয়ার ছিল, যা আপোষও হয়েছে।

হাতীবান্ধা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুন্নবী বলেন, রাজিবের বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগই তদন্ত চলছে। আমলযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে এবং অভিযোগ দু’টি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মামলা নিতে বিলম্ব হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

এসএস

Wordbridge School
Link copied!