বরগুনা: বরগুনার আমতলীতে বিএনপির বহিস্কৃত সভাপতির বেপরোয়া ছেলের নেতৃত্বে দূরপাল্লার বাস কাউন্টার ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন সংবাদকর্মী, কাউন্টার ইনচার্জ, টিকেট বিক্রেতাসহ ১০ যাত্রী। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও নৌবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভুক্তভোগীদের দাবি ভাংচুরসহ হামলাকারীরা কাউন্টারে থাকা ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও নগদ টাকা লুটপাট করে নিয়ে গেছে। আহতদের মধ্যে ৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালীতে করা হয়েছে।
জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের বটতলা বাস স্ট্যান্ড শুক্রবার রাত ৭টার সময় উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মোঃ জালাল উদ্দিন ফকিরের ছোট ছেলে রাহাত ফকিরের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে দূরপাল্লাগামী পরিবহন কাউন্টার দখল নিতে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা বাসস্ট্যান্ডে তাণ্ডব চালিয়ে ৮ কাউন্টারে ভাংচুর করে তালা ঝুলিয়ে দেয়। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাত ৭টার দিকে আমতলী পৌরসভার নতুন বাজার বটতলা নামক এলাকায় দূরপাল্লার পরিবহনের টিকেট কাউন্টারে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলরত দূরপাল্লার পরিবহন বাসের ১০ থেকে ১২টি কাউন্টারে দেশীয় অস্ত্রসহ লাঠিসোটা নিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক দুর্বৃত্ত ওই হামলায় অংশ নেয়। এতে রয়েল পরিবহন কাউন্টার ইনচার্জ খায়রুল ইসলাম রিপন, রাজিব পরিবহন কাউন্টারম্যান কায়েস, শ্যামলী পরিবহন কাউন্টারের টিকেটম্যান মোঃ নাজমুল হোসেন, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব জনি গাজী, সংবাদকর্মী এইচএম রাসেলসহ ৬জন সহ অজ্ঞাত যাত্রী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনাস্থলের ছবি সংগ্রহ করতে গেলে সংবাদকর্মী এইচএম রাসেলকে পিছন দিক থেকে সন্ত্রাসীরা এতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে জখম করে এবং তার ফোনটিও কেড়ে নিয়ে যায়। এতে রাসেলের মাথায় ও হাতের একটি আঙ্গুলে গুরুতর জখম হয়। এইচ এম রাসেলকে রক্ষায় স্হানীয় বিএনপির এক কর্মী জনি গাজী এগিয়ে গেলে তাকেও কুপিয়ে জখম করে। স্থানীয়রা গুরুতর আহত রাসেল ও জনি গাজীকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ মনিরুজ্জামান খাঁন এইচ এম রাসেল, জনি গাজী ও কায়েসকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।
সংবাদকর্মী এইচ এম রাসেলকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখমের ঘটনায় শনিবার সকালে আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ সভা করা হয়েছে। আহত সংবাদ কর্মী আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাহিত্য ও গবেষণা সম্পাদক। আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার স্টাফ রিপোটার মোঃ জসিম উদ্দিন সিকদারের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন আমতলী প্রেসক্লাব সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিন পান্না, বাসস বরগুনা জেলা প্রতিনিধি একেএম খায়রুল বাশার বুলবুল, আমতলী প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক অ্যাড, সৈয়দ নুহু-উল আলম নবীন, উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি এম সাইদ খোকন, আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক মোঃ হোসাইন আলী কাজীর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক ইউনিয়ন সাবেক আহবায়ক পরিতোষ কর্মকার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচএম কাওসার, সাইফুল্লাহ নাশির, প্রেসক্লাব সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম নাশির মাহমুদ, সাংবাদিব ক্লাব সভাপতি সুমন রশিদ, উপজেলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক সজিব আহমেদ, নারী সাংবাদিক নাসরিন শিপু, মনিরুজ্জামান মনির, ইকবাল তালুকদার, মাহবুব বিশ্বাস টিটু, রিপন মুন্সি, রাসেমুল হক রিমন ও পিএম সাজ্জাদ শরীফ।
হামলার প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, আমতলী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জালাল আহমেদ ফকিরের ছোট ছেলে রাহাত ফকিরের নেতৃত্বে শতাধিক সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বাস স্ট্যান্ডে তান্ডব চালায়। তারা আরো বলেন, সন্ত্রাসীরা বাস স্ট্যান্ডের ৮ টি কাউন্টার ভাংচুর করে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এসময় এক সাংবাদিক ভিডিও ধারন ও ছবি তুলতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে আহত করেছে।
সেবা গ্রীনলাইন কাউন্টার ইনচার্জ আরিফ বলেন, আমি আমার কাউন্টারে বসে টিকিট কাটছিলাম। হঠাৎ রাহাত ফকিরের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে যুবদলের মামুন, রাজ্জাক, জামাল বিহারী, সবুজসহ প্রায় দেড় শতাধিক দুর্বৃত্ত লাঠি সোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের দূরপাল্লার কাউন্টারে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের টিকেটম্যান মোঃ নাজমুল বলেন, আমি যাত্রীদের টিকেট দিচ্ছিলাম। এমন সময় এক থেকে দেড় শতাধিক লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে আমার কাউন্টারে ঢুকলে আমি ভয়ে সরে যাই। তারা আমার কাউন্টারে থাকা দুটি ল্যাপটপ, একটা প্রিন্টার, একটি কম্পিউটার, সিসি ক্যামেরাসহ আমার টিকেট বিক্রির প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা নিয়ে আমাদের চেয়ার টেবিলসব ভেঙে বাইরে ফেলে দিয়ে। তাদের দুটি টেবিল ভিতরে রেখে কাউন্টারের বাহির থেকে তালা দিয়ে চলে যায়।
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ তুহিন মৃধা বলেন, বিএনপি থেকে বহিস্কৃত সাবেক সভাপতি জালাল উদ্দিন ফকিরের ছেলে রাহাত ফকির একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রর টাকা হাইজ্যাক, ছিনতাই, ডাকাতি মামলাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। তার নেতৃত্বেই সন্ত্রাসীরা লাঠিসোঠা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দূরপাল্লার কাউন্টারে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে ওই রাহাত ফকিরের নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্নস্থানে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কার্যকলাপ করে আসছে। সকল ঘটনার সাথে রাহাত ফকির সরাসরি জড়িত থাকলেও আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। দিনদিন সে বেপরোয়া হয়ে উঠছে, এতে আমাদের দলেরও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। দ্রুত তাকে গ্রেফতারের দাবী জানাই।
আহত সংবাদ কর্মী এইচএম রাসেল বলেন, বাস স্ট্যান্ড দখলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিডিও ধারন ও ছবি তুলতেছিলাম। এ সময় পিছন থেকে সন্ত্রাসীরা এসে আমাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। আমি এ ঘটনার শাস্তি দাবী করছি।
আমতলী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এ বিষয় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা জালাল আহমেদ ফকির বলেন, ওই স্থানে কি হয়েছে আমি জানি না। আমি একটি সালিশীতে ছিলাম। ঘটনার খোঁজ খবর নিয়ে দেখি কি হয়েছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মনিরুজ্জামান খাঁন বলেন, আহত সাংবাদিক রাসেলের মাথা, বাম হাতের আঙ্গুল ও পায়ে গুরুতর জখম হয়েছে। আহত দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুর রহমান আরিফ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠনো হয়। পুলিশ এবং নৌবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিক আহতের ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আইএ