রংপুর: হকার বলতেই চোখের সামনে ভাসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুটপাতে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি করা ব্যক্তিকে। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাদেরকে।
শীতের আগমনের সাথে সাথেই ফুটপাতে গরম কাপড় বিক্রির ভ্রাম্যমাণ কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেছে হকাররা। রংপুর নগরীতে বর্তমানে প্রায় ৫০০ হকার ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ কাপড়ের ব্যবসা করছে।
রংপুর নগরীর সিগারেট কোম্পানির বাসিন্দা মোসলেম উদ্দিন তেমনি একজন হকার। চার বছর আগে ঋণ করে একটি ভ্যানগাড়ি ক্রয় করেন তিনি। এরপর মহাজনের কাছ থেকে বাকিতে কাপড় নিয়ে শুরু করেন ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ কাপড়ের ব্যবসা। নগরীর সোনালী ব্যাংকের সামনের ফুটপাতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রি করেন কাপড়। বিগত বছরগুলোতে ভালো ব্যবসা হলেও এখন তেমন ভালো ব্যবসা ও লাভ হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
মোসলেম উদ্দিন বলেন ,‘আগেতো ঠান্ডা তাড়াতাড়ি পড়তো। কিন্তু এখন নভেম্বর শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তেমন ঠান্ডা পড়ছে না। বেচা-কেনা খুব কম হচ্ছে। সারাদিন মিলে ১০০০ টাকার কাপড় বেচতে পারিনা। ২০০-৩০০ টাকা লাভ থাকে। এটা দিয়ে তো চলতে পাইনা। আজ সারাদিন এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০০ টাকা বেচা-কেনা হইছে। এই অবস্থায় আছি।’
নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়ের আরেক হকার বাবু মিয়া এক সময় কাজ করতেন টেইলার্সে। কিন্তু সময় মতো বেতন না পাওয়ায় সেই কাজ ছেড়ে দেন তিনি। এরপর মহাজনের কাছে বাকিতে কাপড় কিনে শুরু করেন ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ কাপড় ব্যবসা। সারাদিন যা বিক্রি করেন তার লাভ দিয়েই পরিবার চালান তিনি। বাকি টাকা দিতে হয় মহাজনকে। পুঁজির অভাবে এই ব্যবসা ছাড়া অন্য কোন ব্যবসা করার সামর্থ্য নেই তার।
এক রাশ হতাশা নিয়ে বাবু মিয়া বলেন ,‘গতবছর যে কাপড় কিনেছি ১০০ টাকায় এই বছরে সে একই কাপড় কিনতে হচ্ছে ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায়। এই ১০০ টাকার কাপড়টি ১৫০ টাকা বিক্রি করলে ৫০ টাকা লাভ থাকতো। কিন্তু এখন সেই লাভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। ক্রেতারা তো ১৫০ টাকার উপরে কিনছে না। তাই যে লাভ হওয়ার কথা ছিল সে লাভের সিকি ভাগও এখন হচ্ছে না। দিনশেষে মহাজনের টাকা দিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা টেকে। এই টাকা নিয়ে যখন বাজারে যাই তখন বুঝে উঠতে পারি না কি করব। এই কাপড়টি যদি ঢাকা থেকে সরাসরি কিনে আনতে পারতাম তাহলে হয়তো একটু বেশি লাভ থাকতো। মহাজনের কাছ থেকে কেনায় বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে বিক্রিতে দাম পাচ্ছি না। এই সমস্যার কারণে এবছর অনেকজনেই এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। কেমন চলতে থাকলে হয়তো আমাকেও ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে।’
বাবু মিয়া ও মোসলেম উদ্দিন এর মতোন রংপুর নগরীতে এরকম প্রায় ৫০০ হকার ব্যবসা করে। নগরীর মেডিকেল মোড় থেকে শুরু করে মর্ডান মোড় পর্যন্ত রাস্তার পাশে ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে এসব ব্যবসা করে তারা। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সীমিত আয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাদের।
এসএস