রাজশাহী: রাজশাহীর অঞ্চলে কৃষকের পকেট কাটছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) বিএমডিএর গভীর নলকুপ অপারেটরের আবেদন ফরম উত্তোলনে এক হাজার টাকা করে (অফেরতযোগ্য) নেয়া হচ্ছে। এতে বরেন্দ্র অঞ্চলে ফরম বিক্রি করেই কৃষকের কাছে থেকে প্রায় শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় দীর্ঘদিন পর কৃষিবান্ধব এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে কৃষকদের মাঝে মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার দেখা দিয়েছে। সমালোচনার ঝড় বইছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীসহ বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলে বিএমডিএ’র প্রায় ১৯ হাজার গভীর নলকুপ রয়েছে। একেকটি গভীর নলকুপের বিপরীতে যদি গড়ে ৫টি করে ফরম উত্তোলন হয়। তাহলে সেই হিসেবে ১৯ হাজার গভীর নলকুপের বিপরীতে ৯৫ হাজার ফরম উত্তোলন করা হয়েছে। ফরম প্রতি এক হাজার টাকা হিসেবে ৯৫ হাজার ফরমের বিপরীতে ৯৫ কোটি টাকা। একই সঙ্গে জামানত বাবদ গভীর নলকুপ প্রতি কুড়ি হাজার টাকা হিসেবে, ১৯ হাজার নুলকুপের বিপরীতে আদায় হবে ৩৮০ কোটি টাকা। সাধারণ কৃষকের পকেট থেকে বেরিয়ে যাওয়া এই বিপুল অঙ্কের টাকার বছরে যে মুনাফা হবে কৃষকের কপালে তা কি জুটবে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, শুধুমাত্র ফরম বিক্রি করেই বিপুল পরিমাণ টাকার অবৈধ বাণিজ্যে করা হচ্ছে। কৃষকের স্বার্থে গভীর নলকুপ। কাজেই স্কীমভুক্ত কৃষকের মতামতের ভিত্তিতে অপারেটর নিয়োগ ও সমিতির মাধ্যমে পরিচালনা করা হলেই তো অপারেটর নিয়োগে কোনো সমস্যা হয় না, এভাবে কৃষকের পকেট কাটাও লাগে না। যাকে অপারেটর নিয়োগ দেয়া হবে কেবলমাত্র তার কাছে থেকেই জামানত ও ফরমের দাম নেয়া যেতে পারে। আর আবেদন করতে ফরমের জন্য ফেরতযোগ্য টাকা নেয়া যেতেই পারে।
এদিকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নতুন নীতিমালা নিয়ে কৃষকদের মাঝে মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। চলতি মৌসুমে গভীর নলকূপ অপারেটর নিয়োগে নতুন নীতিমালা করেছে বিএমডিএ। এতে আগের তুলনায় বেশি জামানত দিতে হবে অপারেটরদের। কিন্তু কমবে সেচ ঘণ্টা। ফলে শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলে আবাদ কমার আশঙ্কা করছে কৃষকরা। তবে বিএমডিএ বলছে, অপারেটর নিয়োগে দুর্বৃত্তায়ন কমানোর লক্ষ্যেই নতুন নীতিমালা। এদিকে, নতুন এই নীতিমালা বোর্ড সভায় আলোচনা ছাড়াই কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন পরিচালনা বোর্ডের সদস্যরা।
তারা বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্ত বোর্ড সভায় আলোচনা করে নিলে বিতর্ক হতো না। চেয়ারম্যান একাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে সার্কুলার দিয়েছেন। বোর্ড সভায় এনিয়ে কথা বলব। কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, তেমন সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখব। জানা গেছে, নতুন নীতিমালায় অপারেটর হতে চাইলে পুরুষের জন্য ২০ হাজার টাকা ও নারীদের জন্য ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। আগে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য ছিল সাড়ে ৭ হাজার টাকা। নারী-পুরুষ উভয়কে গভীর নলকূপের ঘরে রাতেও থাকা বাধ্যতামূলক, অপারেটরের শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে এসএসসি পাস, ফরমের দাম ১০০ টাকার পরিবর্তে এক হাজার। কমানো হয়েছে নলকূপ চালানোর সময়। এতে করে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে, দাবি চাষিদের।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, বিএমডিএর এমন সিদ্ধান্ত শস্য উৎপাদনে অন্তরায়। কারণ এতে সেচ খরচ বাড়বে। আবার প্রয়োজনীয় পানি না পেলে অনেক জমি পতিত থাকবে। এতে শস্য উৎপাদন কমে আসবে। এদিকে, বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, গভীর নলকূপ অপারেটর নিয়োগে যে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে, সেটি ভাঙতে নতুন নীতিমালা। এ ছাড়া এতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমবে। বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান ড. মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগে অপারেটর নিয়োগে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। কারও হেদায়েত হয়ে এখানে অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেটি ভাঙতে নতুন নীতিমালা। এতে করে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারও কমে আসবে। উৎপাদন বাড়বে। কৃষকরা উপকৃত হবেন বলে আশাবাদী তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রায় ১৯ হাজার গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করে বিএমডিএ।
স্থানীয় কৃষকদের দাবি, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭ বছর যারা খোলস পাল্টিয়ে, ক্ষমতার প্রভাববিস্তার করে বা নানা উছিলায় গভীর নলকুপের অপারেটর হয়ে, কৃষকদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে টাকার কুমির হয়েছেন। এবার তারা যেনো কোনো অবস্থাতেই অপারেটর হতে না পারে। কারণ সেসব খোলস বদলকারি ব্যক্তি অপারেটর হলে গভীর নলকুপের দখল নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বা খুন জখমের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ফরম বাণিজ্যের পাশাপাশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে জম্পেশ তদ্বির বাণিজ্যে শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি বিএমডিএর একশ্রেণীর কর্মকর্তা তদ্বির বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
এসআই