সিলেট: মোবাইল চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। পুলিশ ঘটনাস্থল নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হলে সেনাবাহিনী ও র্যাব গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে শনিবার টানা ৪ ঘণ্টা ও রোববার প্রায় ২ ঘণ্টা উপজেলার থানা সদরে সংঘর্ষ চলে। এতে আহত হয়েছেন শতাধিকেরও বেশি মানুষ। এসময় ভাঙচুর করা হয় দোকানপাট ও পুড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি মোটরসাইকেল। আর সিলেট- ভোলাগঞ্জ সড়ক দিয়ে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে আসা-যাওয়ার গাড়িগুলো আটকা পড়ে। তবে এখনো মহাসড়কে ছুঁড়ে ফেলা ইটপাটকেল রয়েছে।
জানা যায়, শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরে উপজেলার বর্ণি গ্রামের এক ব্যক্তি কাঁঠালবাড়ী গ্রামের পরিচিত একজনের দোকানে মোবাইল চার্জে দেন৷ এর ঘণ্টাখানেক পরে সেখানে মোবাইল চাইতে গেলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারি শুরু হয়। সেখানে মারধরের ঘটনায় বর্ণি গ্রামের লোকজন সড়কে গাড়ি আটকে অবরোধ করেন। পরে থানা সদরে কোম্পানীগঞ্জ, বর্ণি ও কাঁঠালবাড়ী ৩ গ্রামের লোকজনের মধ্যে দেশি অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় ও সংঘর্ষে অন্তত ৫২ জন আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে তখন পরিস্থিতি শান্ত করে।
পরে রোববার সকালে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ও সেটা ফেসবুকে প্রচার করে আবারো সংঘর্ষে লিপ্ত হন বর্ণি ও কাঁঠালবাড়ি এলাকার বাসিন্দারা। সংঘর্ষের এই ঘটনা এক পর্যায়ে সিলেটি-আবাদিতে রূপ নেয়। বর্ণি ও কোম্পানীগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দারা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র সহ থানা সদরে গেলে সেখানে কাঁঠালবাড়ি ও আশপাশ এলাকার বাসিন্দারাও এসে সংঘর্ষে জড়ান। এসময় এক পক্ষ অপর পক্ষকে বৃষ্টির মতো চারদিক থেকে ইটপাটকেল ছুঁড়েন। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি পুলিশ শান্ত করতে না পেরে পরে সেনাবাহিনী ও র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে নিয়ন্ত্রণে নেয়। এসময় পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে আহত হয়ে আরও প্রায় ৭০ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নেন।
কোম্পানীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, শনিবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন আর রোববার ৬০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে এক জন এখানে ভর্তি আছেন আর ওসমানী হাসপাতালে ৫ জনকে পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের অবস্থা ততটা গুরুতর না৷ এছাড়া আরও ১০ জনের মতো চিকিৎসা নিয়েছেন কিন্তু নাম-পরিচয় দেন নি।
এবিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা জানান, মিটিংয়ে দুইপক্ষকেই সংযত থাকার আহ্বান জানানো হয়। তারা আর কোনো সংঘাতে জড়াবেন না বলে জানিয়েছেন এবং কোনো ঝামেলা হলে তার দায়-দায়িত্ব তারাই নিবেন বলে কথা দেন। তারা যার যার গ্রামে গিয়ে সবাইকে এটা জানিয়ে দিবেন যাতে আর কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে।
এসএস