রাজশাহী: রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে এই রাস্তার উন্নয়ন হলেও সরকার পতনের পর তা যেন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। রাজশাহী নগরীর সড়কগুলো প্রশস্ত করার সঙ্গে ড্রেনও নির্মাণ করেছে সিটি করপোরেশন। তারপর ড্রেন পরিষ্কারের মুখে লোহার স্ল্যাবও বসানো হয়েছিল। কিন্তু এখন এই স্ল্যাবগুলো রাতারাতি চুরি হয়ে যাচ্ছে। ফলে ফুটপাতের ড্রেনে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে রাজশাহীর সড়কগুলো নতুন হলেও, ড্রেনে নেই ঢাকনা।
রাজশাহী শহরজুড়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য সড়কের দুই পাশে মাইলের পর মাইল করা হয়েছে বড় বড় ড্রেনও। কিন্তু চুরির কারণে এসব ড্রেনের ওপর স্ল্যাব ও ঢাকনা থাকছে না। বসানোর পর রাত হলেই এগুলো গায়েব হয়ে যাচ্ছে। ফলে ফুটপাত পরিণত হচ্ছে মরণফাঁদে।
জানা যায়, রাজশাহী নগরীর বিলশিমলা বন্ধ গেট থেকে সিটিহাট পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কের ড্রেন ও ফুটপাতের ওপরের ঢাকনাগুলোও চুরি হয়ে গেছে। নতুন করে এই সড়ক প্রশস্ত করে সড়ক বিভাজক, দৃষ্টিনন্দন আলোকায়নসহ ড্রেনের ওপর প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ করা হয়। কিন্তু স্ল্যাব ও ঢাকনা চুরি হওয়ায় সড়কটির দুপাশের ফুটপাত এখন হয়ে উঠেছে মৃত্যুফাঁদ।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা জানান, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) কাউন্সিলররাই আগে এসব দেখভাল করতেন। এখন রাসিকের পরিষদ নেই। পুলিশি টহলও নেই তেমন। ফলে চোরেরা এসব ঢাকনা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকনা না থাকায় ড্রেনে পড়ে আহত হচ্ছেন অনেকে। ঢাকনা না থাকায় এর আগে নগরের বিনোদপুর এলাকায় ড্রেনে পড়ে আহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী।
স্থানীয়রা আরও জানান, আগেও দু-একটি করে ঢাকনা চুরি হয়েছে। তবে ৫ আগস্টের পর সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কটির আড়াই কিলোমিটারের ফুটপাতের অধিকাংশ ঢাকনা চুরি হয়ে গেছে। নিরিবিলি এ সড়কের ফুটপাতে ভোরে ও রাতে হাঁটাচলা করতেন অনেক মানুষ। ফুটপাতের ঢাকনা চুরি হওয়ায় অনেকে ড্রেনে পড়ে হাত-পা ভাঙছেন। তাই মানুষ আর ফুটপাতে হাঁটছে না।
বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ী হোসেন আলী জানান, সড়ক প্রশস্ত করার সঙ্গে ড্রেনও নির্মাণ করে সিটি করপোরেশন। তারপর ড্রেন পরিষ্কারের মুখে লোহার স্ল্যাবও বসানো হয়েছিল। কিন্তু এগুলো রাতারাতি চুরি হয়ে গেছে। ড্রেনে পড়ে আহতের ঘটনা ঘটছে।
গত ২৮ অক্টোবর রাতে সড়কটির ফুটপাত ধরে ঢাকনাবিহীন ড্রেনে পড়ে পা ভেঙে যায় তেরখাদিয়া বিভাগীয় স্টেডিয়াম এলাকার বাসিন্দা তরিকুল ইসলামের। তিনি বলেন, এখন প্রতিদিনই কেউ না কেউ ড্রেনে পড়ে আহত হচ্ছেন। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানোর পরও তারা ঢাকনা চুরি বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
নগরীর তেরখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আবুল হাসনাত বলেন, স্ত্রীকে নিয়ে নিয়মিত তিনি এ পথে হাঁটতেন। কয়েক মাস আগেও সড়কের ফুটপাত দিয়ে অনায়াসে হাঁটাচলা করা গেছে। কিন্তু এখন ড্রেনের ওপর ফুটপাতের স্ল্যাব না থাকায় হাঁটা যায় না।
রাসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন জানান, সড়কটির ঢাকনা ও স্ল্যাব চুরির ঘটনার বিষয়টি তারা জানেন। ছয় শতাধিক ঢাকনা চুরি হয়েছে। এ বিষয়ে রাসিকের পক্ষ থেকে থানায় চুরির অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
এসএস