সিলেট: নগরের চারটি সড়কের সংযোগস্থল আম্বরখানা পয়েন্ট। এই পয়েন্টে রয়েছে চারটি মোড়। আর এখানকার প্রতিটি মোড়ে গড়ে উঠেছে একটি করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড।
চার রাস্তার আট পাশে রয়েছে অসংখ্য সিএনজি দাঁড়ানো আর চলছে প্যাসেঞ্জার উঠানো-নামানো। এছাড়াও সিলেট নগরের বিভিন্ন সড়কের ওপর অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনার অসংখ্য অবৈধ স্ট্যান্ড।
যত্রতত্র এসব পরিবহনের স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় নগরের বাসিন্দা, পথচারী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অনেক সড়কের দুই পাশেই রাখা হচ্ছে যানবাহন। এতে করে নগরজুড়ে বাড়ছে যানজট। আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। পরিবহন শ্রমিকদের কাছে নগরবাসী এক প্রকার জিম্মি বলেই মনে করেন অনেকে। এসব স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করে পৃথক পৃথক সমিতি বলে জানা যায়।
সিলেট নগরের গুরুত্বপূর্ণ কোর্ট পয়েন্ট ঘিরে রয়েছে চারটি স্ট্যান্ড। একইভাবে প্রায় সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে একাধিক স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে। পাশাপাশি নগরের যে সড়কই সম্প্রসারিত হচ্ছে সেখানেই গড়ে উঠছে অবৈধ স্ট্যান্ড। সিলেট সিটিতে কোনো বৈধ স্ট্যান্ড নেই বলে জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন ও মহানগরের ট্রাফিক বিভাগ। কতটি অবৈধ স্ট্যান্ড আছে জিজ্ঞেস করলে কেউই সঠিক তথ্য জানাতে পারেন নি। তবে সিএনজি অটোরিকশার শ্রমিকরা প্রভাব খাটিয়ে এসব স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছেন বলে জানা গেছে।
সিলেট জেলা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্যমতে নগরে তাদের ২৭টি সিএনজি স্ট্যান্ড রয়েছে। এগুলো বহুবছর থেকেই স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। নগরের কদমতলী, হুমায়ূন চত্বর ও কুমারপাড়া বাসন্ট্যান্ড এলাকায় গাড়ি রাখার জন্য রাস্তার পাশে জায়গা থাকলেও রাস্তাই যেন তাদের জন্য রাখা সংরক্ষিত বাসস্ট্যান্ড। রাস্তার দু’পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য বাস। এতে করে বাসস্ট্যান্ড এলাকা পার হতেই বাস ও অন্যান্য গাড়ির লেগে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
এছাড়া নগরের যেসব জায়গায় সিটি করপোরেশনের নগর বাস দাঁড়ায়, সেসব এলাকায় যানজট তো আর লেগেই আছে। বাস দাঁড় করানো ও ঘুরানোতেই বিপাকে পড়তে হচ্ছে অন্যান্য গাড়িকে। নগরের পাইকারি বাজার কালীঘাট, মহাজনপট্টি, লালদীঘির পাড় ও হকার মার্কেটের যাতায়াতের অন্যতম সড়কটির দুই পাশ দখল করে ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘুরতে আসা মানুষেরা। সেই সঙ্গে পাইকারি বাজারে মালামাল নিয়ে যাওয়া-আসার পথে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সিলেটের একমাত্র শিশু পার্ক রয়েছে ধোপাদিঘীরপার এলাকায়।
এখানে রয়েছে ধোপাদিঘীরপাড় ওয়াকওয়ে। এগুলোর সামনেও গড়ে তোলা হয়েছে গাড়ির স্ট্যান্ড। এখানে সবসময়ই মাইক্রোবাস ও লেগুনা পার্কিং করা থাকে। এই সড়কের একটি বিরাট অংশ জুড়ে গাড়ি পার্কিং থাকায় সব সময়েই এ এলাকায় যানজট লেগে থাকে। এছাড়া নগরের ব্যস্ততম চৌহাট্টা পয়েন্টকে ঘিরে আছে দুটি কার ও মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড। এছাড়া নগরের সুবিদ বাজার, আখালিয়া পয়েন্ট কার ও মাইক্রোবাসের দখলে।
এছাড়া নগর ঘুরে দেখা যায়, নগরের তেমুখী, মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা, রিকাবীবাজার, শাহী ঈদগাহ, ওসমানী মেডিকেল, লাক্কাতুড়া ক্রিকেট স্টেডিয়াম, জিতুমিয়ার পয়েন্ট, পুরানপুল এলাকা, উপশহর, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, মেজরটিলা, শাহপরাণ, চন্ডিপুল, হুমায়ুন রশিদ চত্বর, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, শাহজালাল ব্রিজের নিচ, ক্বিনব্রিজের দক্ষিণ মুখ সহ নগরের এরকম শতাধিক এলাকায় অবৈধ সিএনজি-অটোরিকশা, বাস-মাইক্রোবাস ও লেগুনা স্ট্যান্ডের কারণে নগরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের।
এসব স্ট্যান্ডের একটিরও বৈধতা নেই। আর নগরে দিনদিন বাড়ছে প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা। যার ফলে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বাড়ছে। আর এতে করেও শুরু হচ্ছে যানজটের। যানজটের কারণে অপচয় হচ্ছে সাধারণ মানুষের মূল্যবান সময়। যার ফলে ৫/১০ মিনিটের রাস্তা যেতে লাগছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ ও নির্দিষ্ট গন্তব্য পৌছাতে পারতেছেন না শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষেরা। আর অনেকে সময় বাঁচানোর জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে শিকার হচ্ছেন দুর্ঘটনার।
নগরের আম্বরখানা বড়বাজারের বাসিন্দা মামুন আহমদ বলেন, ‘আম্বরখানায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ডের কারণে প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকে। রাস্তার প্রত্যেক পাশেই দাঁড় করিয়ে রাখা গাড়ি। এতে করে রাস্তার অর্ধেক জুড়েই আছে এই গাড়ি। প্রশাসন ও এব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যতদ্রুত সম্ভব এর একটা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
নগরের সুবিদ বাজার এলাকার সিএনজিচালক মোস্তাক আহমদ বলেন, ‘শুরু থেকেই দেখে আসছি নগরের সব জায়গায় স্ট্যান্ড। কোনটা বৈধ আর অবৈধ সেটা দেখবে পুলিশ আর আমাদের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। আর রাস্তার পাশে যদি স্ট্যান্ড না থাকে, তাহলে প্যাসেঞ্জাররা কোথা থেকে উঠানামা করবে।’
সিলেট জেলা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাকারিয়া আহমেদ জানান, ‘সিলেটে প্রায় ৪০/৫০ বছর ধরে ২৭টি সিএনজি স্ট্যান্ড রয়েছে।
এগুলো অনুমোদিত না হলেও অনেকটা অনুমোদিতই বলা যায়। এখানে আগে স্ট্যান্ডের আলাদা সাইনবোর্ড ছিল, সেটা দুই বছর আগে ট্রাফিকে তুলে নিছে স্থায়ীভাবে করে দেওয়ার জন্য। আমরাও সিটি কর্পোরেশন, ট্রাফিকে বারবার আবেদন করতেছি। কিন্তু, কোনো সুরাহা পাচ্ছি না। আমাদের ইচ্ছা না থাকা সত্বেও পয়েন্টে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করতে হয় তাদের সুবিধার্থে। সিটি বা ট্রাফিক পুলিশ থেকে যদি আমাদেরকে স্থায়ীভাবে কোনো ব্যবস্থা করিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আর যত্রতত্র এরকম স্ট্যান্ড হবে না।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মতিউর রহমান খান বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে এব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে এসব। আমরা যথা শিগগিরই অভিযানে নামবো।’
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (ডিসি-ট্রাফিক) আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, ‘সিলেট নগরে কোনো বৈধ স্ট্যান্ড নেই। এগুলো অনেক আগে থেকেই অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশন উদ্যোগ নিলে আমরা সহযোগিতা করবো। যত্রতত্র স্ট্যান্ড গড়ে উঠায় শহরে যানজট তৈরি হচ্ছে আর আমাদেরকে এগুলো সামাল দিতে কষ্ট করতে হচ্ছে।’
এআর