লালমনিরহাট: হত্যা মামলার আসামী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক নেতার নৈশভোজে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। এসময় দুইজন যুবক সেই আমাসীর সাথে পুলিশের নৈশভোজের ছবি তুলতে গেলে পুলিশ তাদের আটক করে মারধর করেন। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনতা ও বিএনপি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এগিয়ে এলে পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ করে। এঘটনায় প্রায় ১২জন নেতা-কর্মী আহত হন।
গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারী) রাত ১১টার দিকে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোস্তাফিহাট বাজারের একটি হিমাগারে জুলাই ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের হত্যাচেষ্টা মামলার আসামী সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ও হিমাগারের পরিচালকের দায়িত্বে থাকা আখেরুল ইসলামের নৈশভোজে যোগ দেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী। সেখানে প্রোটোকল অনুযায়ী সেই দাওয়াতে যুক্ত ছিলেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ফিরোজ হোসেন। এসময় দুই/তিনজন যুবক পুলিশের সাথে আসামীর নৈশ্যভোজের বিষয়টি জানতে পেরে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় তারা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে চাইলে রুমের বাহিরে থাকা পুলিশের সাথে যুবকদের বাগ্বিতণ্ডা বাধে। এসময় পুলিশ তাদের আটক করে বেধড়ক মারপিট করে। পরে বিষয়টি স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতা ও বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে এগিয়ে আসেন। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের উপর চড়াও হন ও লাঠিচার্জ করেন। এতে প্রায় ১২জন নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের মধ্যে দু'জনকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতারা পুলিশের সাথে আসামীর নৈশভোজ ও সদর থানার ওসি ও ডিবি ওসির প্রত্যাহার চেয়ে লালমনিরহাট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় প্রায় পাঁচ ঘন্টা যাবত লালমনিরহাটের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ আবারো তাদের উপর লাঠিচার্জ করে। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী এসে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিলে মধ্যরাতে অবরোধ তুলে নেয় আন্দোলনকারীরা।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গোকুন্ডা ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ওরফে নয়ন (৩৫) ও লালমনিরহাট সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বিপ্লব হোসেন (২৫) বর্তমানে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আহত ওই দুই ব্যক্তি জানান, ওই রাতে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার আবদুল মজিদ মিয়া, লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম, লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদের এবং রংপুরের কাউনিয়া থানার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা গোকুন্ডা ইউনিয়নের মোস্তফি বাজারের একটি হিমাগারে এক নৈশভোজে অংশ নেন। ওই হিমাগারের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আখেরুল ইসলাম। এ সময় আখেরুল ইসলামের সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নৈশভোজের দৃশ্য দেখতে পেয়ে তাঁরা মুঠোফোনে ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা ও আটক করে। পরে গভীর রাতে তাঁদের স্থানীয় মণ্ডলেরহাট এলাকায় এনে ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা আরো জানান, আখেরুল ইসলামের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট সদরের মহেন্দ্রনগরের ঢাকনাই গ্রামের মিজানুর রহমান নামের এক যুবককে ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত ২১ আগস্ট মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় সে ৬৯ নাম্বার আসামী।
গোকুন্ডা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলতাব হোসেন ব্যাপারী বলেন, হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আখেরুল ইসলামের সঙ্গে পুলিশের নৈশভোজের ছবি ওঠাতে গেলে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করে।
এ ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আখেরুল ইসলামের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার আবদুল মজিদ মিয়া সেখানে আমন্ত্রিত হিসেবে উপস্থিত হন। আমি ওনার প্রটোকলে সেখানে উপস্থিত ছিলাম মাত্র। আখেরুল ইসলাম ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি, সেটা আমার আগে জানা ছিল না। মহাসড়ক অবরোধসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাধ্য হয়ে পদক্ষেপ নেয়।’ ‘আমরা অনেকে এখানে নতুন, অনেকের রাজনৈতিক পরিচয় আমরা সেভাবে অবগত নই। আমি আজ বিকেলে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত হাবিবুর রহমান ও বিপ্লব হোসেনকে দেখতে গিয়েছি। খোঁজখবর নিয়েছি।’ পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। গতকালের ঘটনায় আমরা প্রাথমিকভাবে ওসি ডিবি এবং ওসি সদরকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করেছি। এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। কমিটির সদস্যরা আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেবেন। রিপোর্ট পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসআই