Menu
বরগুনা: বরগুনার তালতলী উপজেলার বঙ্গোপসাগর উপকূল ঘিরে নিষিদ্ধ ছোট ফাঁসের বেহন্দি জাল দিয়ে দেদারছে ভুলা চিংড়ি (ছোট চিংড়ি) আহরণ করছেন জেলেরা। এই ভুলা চিংড়ি ধরার সঙ্গে নির্বিকারে নিধন হচ্ছে নানান প্রজাতির পোনা মাছ ও জলজ প্রাণী। একই সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির জীব বৈচিত্র্য।
ছোট জাতের চিংড়িগুলো বড় মাছের খাদ্য শৃঙ্খল হিসেবে পরিচিত। নিষিদ্ধ জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার অব্যাহত থাকলে এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদসহ সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্য বিলুপ্তের আশঙ্কা রয়েছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্ট বিভাগের গবেষকদের।
অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ জাল ধরতে ফকিরঘাট কোস্টগার্ড, নিদ্রা নৌ-পুলিশ, তালতলী মৎস বিভাগ নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করে। এদের উদাসীনতার কারণেই বন্ধ হচ্ছে না ভুলা চিংড়ি শিকার।
বছরের নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চিংড়ি ভুলা (ছোট চিংড়ি) আহরণ করে থাকেন এই অঞ্চলের জেলেরা। এই জাতের চিংড়ি মাছ গুলো আকারে খুবই ছোট হয় এবং তাদের সর্বোচ্চ আকার হয় ১ ইঞ্চি পর্যন্ত। এই চিংড়ির বেঁচে থাকার বয়স হয় ৯০ দিন পর্যন্ত। শুঁটকি তৈরিতে এর সর্বাধিক চাহিদা থাকায় ছোট জাতের চিংড়ি ধরতে সাগর ও সাগর মোহনায় এবং নদীতে পেতে রাখে নিষিদ্ধ বেহুন্দী জাল। এই জালে অধিকতর ক্ষতির শিকার হয় বিভিন্ন মাছের রেণু, জলজ প্রাণী সহ সমুদ্রে থাকা জীব বৈচিত্র্যের। একই সঙ্গে খাদ্যের ঘাটতি হওয়া সাগরের এসকল এলাকায় মাছের অবাধ বিচরণ না থাকায় জেলেদের জালেও ধরা পড়বে না বড় বড় মাছের। এতে লোকসানের মুখে পড়বে এই অঞ্চলের জেলে ও মৎস ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তালতলীর ফকির ঘাট, হাঁসার চর, নিশানবাড়িয়া, নিদ্রাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নিষিদ্ধ বেহন্দি জাল দিয়ে ভুলা চিংড়ি আহরণ করছেন অন্তত চার শতাধিক জেলে।
স্থানীয় আড়ৎদার ও চাতাল মালিকরা দাদন দিয়ে জেলেদের সাগরে পাঠাচ্ছে এ ভুলা চিংড়ি শিকারের জন্য। আবার অনেক আড়ৎদার ট্রলার জাল ও জালানি তেলসহ সকল সরঞ্জামাদি কিনে দিয়ে সাগরে পাঠাচ্ছে জেলেদের। বঙ্গোপসাগরের অনতিদূরে উপকুল এলাকায় জাল ফেলে এ মাছ শিকার করে জেলেরা। স্থানীয় অড়ৎদারের মাধ্যমে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঢাকাসহ সারা দেশে চালান করে বিক্রি করছে এ চিংড়ি। আবার কিছু মাছ চাতাল-মালিকরা শুটকি করেও বাস-ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করছেন।
স্থানীয়দের মতে, এভাবে ছোট চিংড়ি শিকার করলে একদিকে বড় মাছের খাদ্য শৃঙ্খলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, অন্যদিকে বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছের পোনা মারা যাবে।
তালতলীর সোনাকাটা ইউনিয়নের ফকিরঘাট বাজারের বিএফডিসি উপ কেন্দ্রের ঘাট থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭০/৮০ টন ভুলা চিংড়ি (ছোট চিংড়ি) স্থানীয় আড়ৎদারের মাধ্যমে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঢাকাসহ সারা দেশে চালান করে বিক্রি করছে। ফকিরঘাট ছাড়াও অন্যান্য আশপাশের আড়ৎ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫ টন মাছ বিক্রি হচ্ছে। জেলেরা সমূদ্র থেকে অন্য মাছের পোনা ও জলজ প্রাণি বেছে ফেলে দিয়ে শুধু চিংড়ি নিয়ে আসেন। বিপুল পরিমাণ এ সব ভুলা চিংড়ির সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে নানা প্রজাতির মাছের পোনা ও জলজপ্রাণী।
তালতলী উপজেলার ফকিরঘাটের কয়েকজন জেলে বলেন, ‘আমরা সারা বছর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। বর্তমানে অন্য মাছ না থাকায় ভুলা মাছ ধরি।’ ফকিরঘাটের একাধিক জেলে জানান, ‘সাধারণত প্রতি আমাবস্যা-পূর্ণিমা গোনে এই মাছ বেশি ধরা পড়ে। তবে এই মাছ গুলো মারার ফলে বড় মাছের খাদ্য সংকট থাকায় সাগরে তাদের দেখা যায় না। যার ফলে জেলেদের জালেও ধরা পড়ে না বড় মাছ।’
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর ভাইন বলেন, ‘ছোট ফাঁসের বেহুন্দি জাল দিয়ে ভুলা মাছ শিকার করা অবৈধ। আমরা অভিযান পরিচালনা করলে মাছ পাই। কিন্তু মাছ শিকারের জাল পাওয়া যায় না। এ সব অবৈধ জাল পেলে আমরা আগুন দিয়ে বিনষ্ট করি।’
বরগুনা জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. মহসিন বলেন, ‘ভুলা চিংড়ি বেঁচে থাকে ৯০ দিন পর্যন্ত এবং এরা আকারে ছোট। এই মাছ ধরতে অবৈধ বেহুন্দী জালের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান সব সময়। তবে তিনি দাবি করেন অভিযান চলমান সময়ে অজ্ঞাত কারণে জাল খুঁজে পাওয়া যায় না। আগামী সপ্তাহ থেকে আমাদের অভিযান জোরদার করা হবে জেলায় সর্বত্র।’
আইএ
© 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সোনালীনিউজ.কম
Powered By: Sonali IT