• ঢাকা
  • শনিবার, ০১ মার্চ, ২০২৫, ১৬ ফাল্গুন ১৪৩০

চিকিৎসায় পা হারিয়ে দিশেহারা সালমান চান একটি কর্মক্ষেত্র


পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, ০৭:০০ পিএম
চিকিৎসায় পা হারিয়ে দিশেহারা সালমান চান একটি কর্মক্ষেত্র

ছবি : প্রতিনিধি

নেত্রকোনা: মাদরাসার লেখাপড়া ছেড়ে জীবিকার তাগিদে পরিবারের হাল ধরতে ঢাকায় যায় সালমান (২৯)। সেখানে গিয়ে প্রথম অবস্থায় টাইলস মিস্ত্রির সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন। ধীরে ধীরে নিজে কাজ শিখে হয়ে উঠেন দক্ষ টাইলস মিস্ত্রি। সেই থেকে আর পিছনে ঘুরে তাকাতে হয়নি তাকে। ৭ বছর ধরে ঢাকায় কাজ করে পরিবার নিয়ে ভালোই চলছিল তার পরিবার।  গ্রামের বাড়িতে একটা হাফ বিল্ডিং করার পাশাপাশি কিছুদিন পর বিয়ে করেন। স্ত্রী লিপি আক্তার (২৫) ও  তার সংসারে আসে নতুন অতিথি আব্দুল্লাহ (২)। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান ও এক ভাইকে নিয়ে আনন্দে কাটছিলো তাদের জীবন।   

বলছি নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার ঘাগড়া চরপাড়া গ্রামের আব্দুল হেকিম ও জরিনা দম্পতির বড় ছেলে সালমান এর কথা। সালমানের জীবনে হঠাৎ নেমে আসে ঘন কালো মেঘ। প্রথম অবস্থায় বাম পায়ের হাঁটুর পাশে সামান্য ব্যথা অনুভব করে। ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে পারে পায়ে টিউমার হয়েছে। এরপর আরো কিছু পরীক্ষা করে সেখানে আবার ধরা পড়ে ক্যান্সার। চিকিৎসকরা জানান দ্রুত অপারেশন করে পা কেটে ফেলতে হবে। তা না হলে জীবনও চলে যেতে পারে। তখন হাতে থাকা কিছু টাকা ছিল, তার পাশাপাশি বাড়ির জমি বর্গা দিয়ে সেই টাকায় অপারেশন করে পা কেটে ফেলে দেয়।

পা হারিয়ে সালমান বলেন, সংসারের কথা চিন্তা করলে চোখে আর কিছুই দেখতে পাই না। আমার জানামতে কারো সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করিনি। আল্লাহ আমাকে এমন পরীক্ষায় ফেললো। পা হারিয়ে এখন আর আগের কর্মে ফিরতে পারছি না। চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়েছে, টাকা যোগাতে গিয়ে নিজেদের কিছু জমি ছিল তা বর্গা দিতে হয়েছে। পা কাটার পর থেকে ৭ টা কেমোথেরাপি দিতে হবে এর মধ্যে ৫ টা দিয়েছি। এতে করে মাথার চুল, দাড়ি ও শরীরের পশম পড়ে যাচ্ছে। চিকিৎসা বাবদ এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ টাকার উর্ধ্বে খরচ হয়েছে। এখন যদি কেউ একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিত কিংবা অটোরিকশা কিনে দিত তার মাধ্যমে কিছু আয় করে নিজের স্ত্রী সন্তান ও মা বাবাকে নিয়ে বাকী জীবনটা কোনো মতে কাটাতে পারতাম।

সালমানের মা জরিনা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেড়ার যখন ক্যান্সার ধরা পড়ে তহন আমার মাথায় আকাশ ভাইঙ্গা পড়ে। আমরা গরিব মানুষ, মাইনসের বাড়ী কাম কইরা খাওয়া লাগে। চাষবাসের যে জমি আছিন সব বন্ধক দিয়া চিকিৎসা করাইছি। ছেলেডার বাম পাওডা কাইট্টা লাইছে। এহন চলাফেরার সমস্যা। পরিবারে ইনকাম করার কেউ রইলো না। সবার যদি একটু দয়া লাগে আমার ছেলেডারে একটা কামের ব্যবস্থা কইরা দেন।

এলাকাবাসী জানান,  সালমানের মা বাবা খুবই সাদাসিধা জীবনযাপন করেন। আর্থিক ভাবেও অতটা ভালো ছিল না তাদের পরিবার। বড় ছেলে সালমান শহরে গিয়ে টাইলসের কাজ করে ভালোই উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ এমন একটা অসুখ তার বাম পা কেড়ে নিল। বড় ছেলের এমন অবস্থায় কর্ম হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে তারা। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা ব্যয় করে তার পরিবার। এখন পরিবারের হাল ধরার মতো কেউ রইলো না। ব্যক্তি সহায়তার পাশাপাশি সরকারি সহায়তা পেলেই ঘুরে দাঁড়াবে তার পরিবারটি।

এসআই

Wordbridge School
Link copied!