Menu
বরগুনা: উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনার পাথরঘাটায় ১৯৭২ সালে নির্মাণ করা হয় ৩১ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ২০১০ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে শয্যা বাড়লেও স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে রয়েছে চিকিৎসক সংকট। ২৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র দুজন। ৩ লাখ মানুষের ভরসার স্থান চলছে দুই জন চিকিৎসক দিয়ে। অবশ্য তিনজনকে পদায়ন করা হলেও তারা এখনো কাজে যোগদান করেননি।
এছাড়া লোকবল না থাকায় অপারেশন থিয়েটারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতিও দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে দুজন চিকিৎসক রয়েছেন তারাও নিয়মিত হাসপাতালে আসছেন না বলে অভিযোগ রোগীদের। এ কারণে প্রত্যাশিত সেবা না পেয়ে অনেকেই ফিরে যান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার (ইউএইচ অ্যান্ড এফপিও) একটি পদ থাকলেও সেটি শূন্য রয়েছে। এছাড়া জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১০টি পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র একজন। মেডিকেল অফিসার বা সহকারী সার্জনের পদ রয়েছে ১৭টি। তবে কর্মরত রয়েছেন চারজন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতেও হাসপাতালে ১৫ জন চিকিৎসক ছিলেন। তিন বছরের ব্যবধানে চিকিৎসকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচজনে।
চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপজেলায় চিকিৎসকদের চাহিদামতো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় উচ্চতর প্রশিক্ষণের কারণ দেখিয়ে চলে যান তারা। পরে আর নতুন করে কাউকে পদায়ন করা হয়নি। আবার কোনো চিকিৎসককে পাথরঘাটায় বদলি করা হলেও তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আদেশ বাতিল করিয়ে নেন।
ডা. রাফিউল হাসানের কর্মস্থল পাথরঘাটার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অথচ মাসে পাঁচদিন আসেন পাথরঘাটায়। কোনো মাসে আসেন না।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বলছে, পাথরঘাটা উপজেলায় নামমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যেতে হয় তাদের। হাসপাতাল থেকে পরামর্শ দেয়া হয় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে রোগে ভুগতে হচ্ছে উপকূলীয় এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আরিফ বলেন, ৫ আগস্টের পর সবকিছু পরিবর্তন হলেও হাসপাতালের তেমন পরিবর্তন হয়নি। তিন লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২ জন। আমাদের এখানে সুপেয় পানির সমস্যাও রয়েছে। এ কারণে অনেক শিশু প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। অসুস্থ হলে তাদের বরিশাল বা ঢাকায় নিয়ে যেতে হয়।
এ বিষয়ে শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের অ্যাটেনডেন্ট মনজিরুল আলম বলেন, প্রায় ১৭ বছর এখানে কাজ করছি। আমিও চাইলে ভালো কোথায় যেতে পারতাম। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে রয়ে গেছি। এখানে অ্যাটেনডেন্ট পদে তিনজন থাকার কথা। অথচ আছি শুধু আমি একা। ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। আমার সহযোগী হিসেবে ওয়ার্ড বয়কে নিয়ে কাজ চালাচ্ছি। দৈনিক বহির্বিভাগে ১২০-১৫০ রোগী আসে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসহ জনবল নিয়োগ দেয়া হলে মানুষের ভোগান্তি কমে আসবে বলে মনে করেন সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন। তিনি বলেন, ‘পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। প্রতিদিন ২০০-২৫০ রোগী এখানে আসে চিকিৎসা নিতে। তবে চিকিৎসক সংকট থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছে না তারা। এমনকি অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে অন্যত্র চলে যায়।’
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শাহদাত হোসেন বলেন, ‘আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য। ২৪ ঘণ্টা জরুরি বিভাগ চালু রাখতে হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয় মাঝে মাঝে। জনবল কম থাকলেও রোগীদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে জনবল না থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবাবঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা।
সিভিল সার্জন প্রদীপ চন্দ্র মণ্ডল বলেন,পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১-৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল সংকট রয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় সেবাদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেখানে চিকিৎসকের মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ৩৭, সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক রয়েছেন দুইজন। চিকিৎসক পদায়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে।’
এসআই
© 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সোনালীনিউজ.কম
Powered By: Sonali IT