• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩০

কাশিপুর ইউপির ভিজিএফ চালের কার্ড বাতিল, নতুন তালিকার নির্দেশ ইউএনওর


বরিশাল প্রতিনিধি: মার্চ ১৮, ২০২৫, ১০:০৩ পিএম
কাশিপুর ইউপির ভিজিএফ চালের কার্ড বাতিল, নতুন তালিকার নির্দেশ ইউএনওর

ছবি : প্রতীকী

বরিশাল: বরিশাল সদর উপজেলার ২নং কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা ও আওয়ামী পন্থি ইউপি সচিবের গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন সাবেক সচিব আবুল হোসেন হাওলাদারের ভাই বিএনপি নেতা মো. দেলোয়ার হোসেন। ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মো. আলী আহম্মেদ মিয়া ও সদস্য সচিব মো. হুমায়ুন কবির ওয়াসিম সহ ইউপি সচিব মো. আব্দুল করিম ভিজিএফ এর বরাদ্দকৃত ৪ মেট্রিকটন চালের ৪শ কার্ড আত্মসাৎ করতে গিয়ে স্থানীয় জনতার হাতে ধরা পরেন।

বিষয়টি সম্পর্কে সোমবার (১৭ মার্চ) বেলা বারোটায় স্থানীয় গণ্যমান্য প্রায় এক ডজন মানুষ সদর উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস ও বরিশাল জেলা প্রশাসক ও ছাত্র প্রতিনিধিদেরকে অবহিত করেন। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিএফ এর বরাদ্দকৃত সকল চালের কার্ড বাজেয়াপ্ত করেছেন এবং পরবর্তীতে নতুন করে কার্ড বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে ইউপি সচিব মো. আব্দুল করিম।

ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হক সিকদার বলেন, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে সরকার কর্তৃক কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদে অসহায় গরিবদের মাঝে ১৪ মেট্রিকটন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ আসে। ১৪শ ৩০টি কার্ডের মাধ্যমে চালগুলো দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হবে। ইউপি সচিব মো. আব্দুল করিম চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নাম উল্লেখ করে একটি রেজুলেশন তৈরি করে। রেজুলেশনের ১৪ ও ১৫ নং সিরিয়ালে রয়েছে- বিএনপি নেতা আলী আহম্মেদ মিয়া ও হুমায়ুন কবির ওয়াসিমের নাম ও স্বাক্ষর। এক নম্বরে কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন লিটন মোল্লার নাম থাকলেও তার স্বাক্ষর নেই।  
একইভাবে নাম থাকলেও স্বাক্ষর নেই মেম্বার মো. সুমন মীর, মো. রাসেল মল্লিক ও মো. আতিকুর রহমান সহ কয়েকজনের। যাদের স্বাক্ষর আছে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে অনেকে।

কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন- শনিবার (১৫ মার্চ) সকাল ১১ টার সময় ইউনিয়ন পরিষদে আসি। গিয়ে দেখি ভিজিএফ কার্ড বিতরণের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকার প্রথমেই চেয়ারম্যানের নামে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪শ কার্ড। চেয়ারম্যান ৫ আগস্টের পর পলাতক থাকায় ইউপি সচিব মো. আব্দুল করিমকে প্রশ্ন করি- রেজুলেশনে চেয়ারম্যানের নামে বরাদ্দ রাখা ৪শ কার্ডের অনুকূলে রাজন নামের এক ব্যক্তি স্বাক্ষর দিয়েছে। এই রাজন কে ? ইউপি সচিব সুউত্তর দেয়নি। পরে জানতে পারি স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা হল রাজন। ফ্যাসিবাদীদের ভিজিএফ চালের কার্ড দিলেন? বিষয়টি জানাজানি হলে চাকুরি বাঁচাতে ইউপি সচিব ওই ৪শ কার্ড এনে নিজের কাছে রাখেন।

দেলোয়ার আরো বলেন, রোববার (১৬ মার্চ) সকাল ১১ টায় ইউপি সচিব পরিষদে বসে সাংবাদিকদের সামনে ওই ৪শ কার্ড বিতরণের জন্য আমার নাম লিখে স্বাক্ষর নেয়। বিকেলে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমার মুঠোফোনে কল করে বলেন, আপনি একা ৪শ কার্ড নিয়েছেন কেন? উত্তরে আমি পুরো ঘটনার বিষয়টি অবগত করে বলি, কার্ডগুলো আমাকে সবার মাঝে বিতরণ করার জন্য দেয়া হয়েছে। তিনি আমার কথা শুনে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ঘটনার বিষয়টি জানানোর নির্দেশ দেন। সোমবার (১৭ মার্চ) বেলা ১২ টায় স্থানীয় গণ্যমান্য ১২/১৩ জনকে নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাই। নির্বাহী কর্মকর্তাকে না পেয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বিষয়টি সর্ম্পকে অবগত করি। অফিস থেকে চলে আসার পথে দেখতে পাই আলী আহম্মেদ মিয়া, হুমায়ুন কবির ওয়াসিম ও আব্দুল করিম একসাথে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রবেশ করছেন।

দুইদিনের টানটান উত্তেজনা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা বিষয়টি ছাত্র সমাজকে জানায়। 
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক ও মহানগর যুগ্ম সদস্য সচিব লাবণ্য আক্তারকে অবগত করলে তারা বিষয়টি নিয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসককে অবগত করেছেন বলে জানান। আবার কয়েক বাসিন্দা ঘটনাটি বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।

কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আবু তাহের খোকন মুন্সী বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে ইউনিয়ন বিএনপির দায়িত্বে থাকা মো. আলী আহম্মেদ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক (বর্তমান সদস্য সচিব) মো. হুমায়ুন কবির ওয়াসিম নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল এবং আ.লীগের সাথে উঠবস করত। যা সংগঠনের নিয়ম পরিপন্থি। বিএনপির কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা থাকলেও কাশিপুর ইউপি নির্বাচনে মেম্বার পদে অংশ নিয়েছিল আলী আহম্মেদ মিয়া তার ভাইয়ের ছেলে মো. জাকির হোসেন, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান ফারুক তালুকদার, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানাউল কবির রেজভী ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী এমদাদ হোসেন। এরা সকলেই আ.লীগের সাথে আঁতাত করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আবার তাদেরকে নিয়েই কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন হওয়ায় ভিজিএফ সহ নানা বরাদ্দকৃত প্রকল্পে এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। যা বেশির ভাগ প্রকাশ্যে আসে না।  

ইউপি সচিব মো. আব্দুল করিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন লিটন মোল্লার নামের অনুকূলে আগে থেকেই রাজন সব সময় স্বাক্ষর দিয়ে অনুদানগুলো নিতো। সেই সুবাদে দেয়া হয়েছিল। পরে ইউএনও স্যারের নির্দেশে সব বাদ দিয়ে নতুন করে কার্ড করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মো. আলী আহমেদ মিয়া বলেন,  কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিএফ এর কার্ড বরাদ্দের বিষয় নিয়ে ইউপি সচিব আমাদের ডাকে। আমরা দলমত নির্বিশেষে এলাকার দুস্থদের মাঝে কার্ড বিতরণের কথা বলি। পরে একপক্ষ এসে চেয়ারম্যানের এই ৪শ কার্ড নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু করে।

কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব হুমায়ূন কবির ওয়াসিম বলেন, চেয়ারম্যানের ৪শ কার্ড নিয়ে এলোমেলো পরিস্থিতির সৃস্টি হয়েছিল। এখন সব কার্ড বাতিল করা হয়েছে নতুন করে কার্ড দেয়া হবে।

আইএ

Wordbridge School
Link copied!