Menu
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ১৪ বছর আগে মাত্র ৪৮০ শিক্ষার্থী নিয়ে ছয়টি বিষয়ে পথচলা শুরু করলেও বর্তমানে ছয়টি অনুষদে ২৫টি বিষয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়েছে।
কিন্তু, প্রয়োজনীয় শিক্ষক সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন থমকে গেছে। শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে এবং বাড়ছে সেশনজট। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা ৬ থেকে দেড় বছর পর্যন্ত সেশনজটে পড়ছে, যার ফলে মানসিক অস্থিরতা ও হতাশা বাড়ছে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও এখানে প্রতি ৬৪ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।
ফলস্বরূপ, শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং সেশনজট বেড়েছে। কিছু বিভাগের সিলেবাস কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২৫টি বিভাগ রয়েছে, যেখানে দশ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। তবে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২১০ জন। এর মধ্যে ৫৪ জন উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশ-বিদেশে অবস্থান করছেন, ফলে বর্তমানে কার্যত ১৫৬ জন শিক্ষক পাঠদান দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে জনবল কাঠামো অনুযায়ী ৪৯৩ জন শিক্ষক প্রয়োজন হলেও ইউজিসি অনুমোদন দিয়েছে মাত্র ২৬৬ জন শিক্ষক, যার মধ্যে ২১০ জন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। অবশিষ্ট ৫৬টি পদ এখনও শূন্য রয়েছে।
শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষকদের ওপর অসহনীয় চাপ পড়ছে, তবে তবুও তারা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় পাঠদান দিতে পারছেন না। ২০২৪ সালের মার্চ ও জুনে ৫২ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও বোর্ড সভার অভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত পাঠদান এবং অন্যান্য কার্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে। ইংরেজি, রসায়ন, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, লোক প্রশাসন, উপকূলীয় অধ্যয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলসহ বিভিন্ন বিভাগে তীব্র সেশনজট দেখা যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন, সহযোগী অধ্যাপক ধীমান কুমার রায় বলেন, শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষ সংকটও একটা বড় সমস্যা। দুইটি বিষয়ই সমাধান করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগ এবং শ্রেণিকক্ষ বাড়ানো প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শূচিতা শরমিন বলেন, দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি, তবে খুব শিগগিরই বিষয়ভেদে শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পর প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয় আজ ১৪ বছর পার করলেও অবকাঠামো, আবাসন, পরিবহন, গ্রন্থাগার ও গবেষণা কার্যক্রমে সংকটের কারণে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
এআর
© 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সোনালীনিউজ.কম
Powered By: Sonali IT