Menu
বগুড়া : ‘পরের ধন নাহি নিব, চিরদিন সুখে রবো’— এই প্রবাদ বাক্যটিকে বাস্তবে রূপ দিলেন বগুড়ার অটোরিকশা চালক খাইরুল ইসলাম। প্রায় ২৫ লাখ টাকার গহনা ও নগদ টাকা ফেরত দিয়ে তিনি শুধু একজন সৎ নাগরিক হিসেবেই নয়, বরং একজন মানবিক তরুণ হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন।
শাজাহানপুর উপজেলার বেতগাড়ি হাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা খাইরুল ইসলাম শুক্রবার (৪ এপ্রিল) রাত ১১টায় বগুড়া সদর থানায় গিয়ে পুলিশের মাধ্যমে পাবনার জুয়েলারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহিনের হাতে ফেরত দেন ১৮ ভরি সোনার গহনা ও নগদ ১৫ হাজার টাকা।
ঈদের দুই দিন আগে, ২৯ মার্চ ব্যবসায়িক কাজে বগুড়ায় আসেন মোহাম্মদ শাহিন। নিউমার্কেট থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা মূল্যের সোনার গহনা কেনেন তিনি এবং একটি কালো ব্যাগে রেখে সাতমাথা মোড় থেকে সিএনজিতে করে বনানী যান। পরে পাবনাগামী একটি বাসে উঠে রওনা দেন।
বাসটি মাঝিরা পৌঁছালে তার মনে পড়ে যায়, কালো ব্যাগটি তিনি সিএনজিতে ফেলে এসেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাস থেকে নেমে পড়েন এবং শাজাহানপুর ও সদর থানার পুলিশের সহযোগিতা চান। পরে শাজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন। এর পরদিনগুলোতে শাহিন সাতমাথা এলাকায় সিএনজির খোঁজ করতে থাকেন, কিন্তু পাননি।
অন্যদিকে, খাইরুল ব্যাগটি খুঁজে পেলেও তা না খুলেই যাত্রীর খোঁজে নেমে পড়েন। যেহেতু কোনো সন্ধান পাননি, তাই ব্যাগটি বাড়িতে নিয়ে যান এবং তার মাকে বিস্তারিত জানান। তখন তার মা ব্যাগটা ফিরিয়ে দিতে বলেন। মায়ের কথা রেখেই ব্যাগটি নিয়ে থানায় হাজির হন খাইরুল।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম মইনুদ্দিন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে জিডির সূত্র ধরে মোহাম্মদ শাহিনকে থানায় ডেকে আনেন। ওসির কক্ষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে সিএনজি চালক খাইরুল নিজের সেই যাত্রীকে শনাক্ত করেন।
পুলিশ ব্যাগ খুলে গহনা ও টাকা যাচাই করে আবার তা ব্যাগে ভরে খাইরুলের হাত দিয়ে মালিক শাহিনকে বুঝিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সকলে খাইরুলের সততায় মুগ্ধ হন।
খাইরুল বলেন, ‘আমি একজন ছাত্র। আজিজুল হক কলেজে অনার্স পড়ছি। পড়াশোনার খরচ চালাতে সিএনজি চালাই। মা বলেছিলেন ফিরিয়ে দিতে— তাই দিয়েছি। সৎ থাকলে পরকালেও শান্তি পাওয়া যাবে। আমি শুধু দায়িত্ব পালন করেছি।’
ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহিন বলেন, ‘খাইরুল সততার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। আমি তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দিতে চেয়েছি, কিন্তু সে তা নেয়নি।’
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মইনুদ্দিন বলেন, ‘এই যুগেও এমন সৎ মানুষ আছে, এটা দেখে সত্যিই ভালো লাগছে। খাইরুলকে স্যালুট।’
এমটিআই
© 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সোনালীনিউজ.কম
Powered By: Sonali IT