• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

আদালতের এজলাস থেকে লোহার খাঁচা সরাতে আইনি নোটিশ


নিজস্ব প্রতিবেদক  অক্টোবর ১৬, ২০২৩, ০১:২৩ পিএম
আদালতের এজলাস থেকে লোহার খাঁচা সরাতে আইনি নোটিশ

ঢাকা: ঢাকাসহ দেশের অনেক জেলা আদালতে কাঠগড়ার পরিবর্তে লোহার খাচা রয়েছে। এখন এই খাচাকে অমানবিক আখ্যা দিয়ে তা অপসারণে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সোমবার (১৬ অক্টোবর) জি এম মুজাহিদুর রহমান, মুহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন ও জোবায়দুর রহমানসহ সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে মোহাম্মদ শিশির মনির এ নোটিশ পাঠান।

আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নোটিশটি পাঠানো হয়। নোটিশ পাওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কোনো আইনে কাঠগড়ায় লোহার খাঁচার ব্যবহার নিয়ে কোনো বিধান নেই। তবে কারা আইন ১৮৯৪-এর ৫৬ ধারা মতে, জেলে বন্দি কয়েদি সরকারের অনুমোদনক্রমে লৌহ-শৃঙ্খলে আটক করে রাখার বিধান রয়েছে। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই অভিযুক্তকে প্রকাশ্য আদালতে লোহার খাঁচায় বন্দি করে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার ভঙ্গ করা হচ্ছে। যা একই সাথে দেশের প্রচলিত আইন এবং আন্তজার্তিক বিধিবিধানের পরিপন্থী।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল কনভিনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (আইসিসিপিআর) ১৯৬৬-এ নাগরিকদের অধিকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব-কর্তব্য বিবৃত করা হয়েছে। আইসিসিপিআরের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, স্বাধীন মানুষের নাগরিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং ভয় ও চাওয়া থেকে মুক্তির আদর্শ কেবল তখনই অর্জন করা যেতে পারে, যখন এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়- যেখানে প্রত্যেকে তার নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করতে পারে।

আইসিসিপিআর-এর অনুচ্ছেদ ৭-এ বলা হয়েছে, কাউকে নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তি দেওয়া যাবে না। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রকাশ্য আদালতে লোহার খাঁচায় বন্দি করে তার প্রতি অমানবিক ও অবমাননাকর আচরণ করা হচ্ছে, যা স্পষ্টভাবে অনুচ্ছেদ ৭-এর লঙ্ঘন। অনুচ্ছেদ ১০ (২) এ বলা হয়েছে, ব্যতিক্রম ব্যতীত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দোষী ব্যক্তিদের থেকে আলাদা রাখতে হবে এবং তাদের মর্যাদা অনুযায়ী আলাদা ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু আদালত চলাকালীন একই সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং দোষী ব্যক্তিদের লোহার খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়, যা এই অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।

উচ্চ আদালতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, আনোয়ার হোসেন বনাম বাংলাদেশ মামলায় হাইকোর্ট অভিযুক্তকে শুনানিকালে কাঠগড়ার পরিবর্তে লোহার খাঁচায় দাড় করানোকে রোমান দাসদের সাথে তুলনা করেছেন। ৭৫-পরবর্তী সেনা অভ্যুত্থান, সরকার উৎখাতের চেষ্টাসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত সামরিক কর্মকর্তাদের বিচারকার্যে গঠিত সামরিক আদালতের কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট পিটিশনটি দায়ের করা হয়। সামরিক আদালতে বিচারকার্য চলাকালে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের খালি পায়ে লোহার খাঁচায় করে এজলাসে উপস্থাপন করা হতো।

নোটিশে আরও বলা হয়, আদালতে কাঠগড়ার পরিবর্তে লোহার খাঁচার ব্যবহার অমানবিক। মানুষের স্বাভাবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আদালতে লোহার খাঁচার অপসারণ একান্ত প্রয়োজন।

এমএস

Wordbridge School
Link copied!