ঢাকা : এগারো বছর আগে আশুলিয়ার পোশাক কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের প্রাণহানির মামলার বিচার এগোচ্ছে না রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী হাজির করার ব্যর্থতায়।
অভিযোগ গঠনের পর ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে আট বছর। রাষ্ট্রপক্ষে ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এই সময়ে সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হয়েছে মাত্র ১১ জনের।
সর্বশেষ গত বছরের ১৮ মে তাজরীন ফ্যাশনসের দুই কর্মী সাক্ষ্য দেন। এরপর গত দেড় বছরে আর কোনো সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। অথচ মামলার ১৩ আসামির মধ্যে কোম্পানির মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তারসহ ৯ জনই জামিন পেয়ে গেছেন।
মামলাটি বর্তমানে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শফিকুল ইসলামের আদালতে বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ১ নভেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় ২০১৪ সালের ২৫ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিধ ধার্য করেন বিচারক। সেই সঙ্গে ছয় সাক্ষীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ।
ওই ছয় সাক্ষী হলেন- পুলিশ পরিদর্শক এসএম বদরুল আলম, মঞ্জুর পাল, তাজরীন কারখানার লোডার সর্দার ধলা মিয়া, অপারেটর আকলিমা, রাবেয়া খানম ও আলী হোসেন।
এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি শেখ হেমায়েত হোসেন বলেছেন, গত তারিখে রাষ্ট্রপক্ষের ৬ জনের নামে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়না পাঠানো হয়েছে। আগামী তারিখের মধ্যে তা তামিল করতে পুলিশকে আমরা মনে করিয়ে দেব, চাপ দেব খুঁজে বের করার জন্য। আগামী তারিখে সাক্ষী হাজির করতে যা যা করতে হয় আমরা করব।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে আশুলিয়ায় নিশ্চিন্তপুরে তোবা গ্রুপের মালিকানাধীন তাজরীন ফ্যাশনসে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়; দুই শতাধিক শ্রমিক আহত ও দগ্ধ হন।
ওই ঘটনায় তাজরীন ফ্যাশনসের মালিক দেলোয়ার ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তারসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম। তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির পরিদর্শক এ কে এম মহসীন উজ জামান।
অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ ও ৩০৪ (ক) ধারা অনুযায়ী ‘অপরাধজনক নরহত্যা’ ও ‘অবহেলার কারণে মৃত্যুর’ অভিযোগ আনা হয়। সেখানে বলা হয়, কারখানা ভবনের নকশায় ত্রুটি ছিল, জরুরি নির্গমনের পথ ছিল না। আগুন লাগার পর শ্রমিকরা বাইরে বের হতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মীরা অগ্নিকাণ্ডকে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া বলে শ্রমিকদের কাজে ফেরত পাঠিয়ে কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেন।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার সময় ৯৮৪ জন শ্রমিক সেখানে কর্মরত ছিলেন। নিহত ১১১ জনের মধ্যে তৃতীয় তলায় ৬৯ জন, চতুর্থ তলায় ২১ জন, পঞ্চম তলায় ১০ জন এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ১১ জন মারা যান।শনাক্ত করা ৫৮টি লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি ৫৩ লাশ অশনাক্ত অবস্থায় জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান। পরে মামলাটি বিচারের জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে স্থানান্তর করা হয়।
এ মামলায় অভিযুক্ত ১৩ আসামির মধ্যে কারখানা মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক এবং কোয়ালিটি ম্যানেজার শহীদুজ্জামান দুলাল জামিনে আছেন।
এছাড়া স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, লোডার শামীম মিয়া, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর পলাতক।
আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, সাক্ষী আসছে না। রাষ্ট্রপক্ষের কোনো সাক্ষীই দেলোয়ার বা মাহমুদার বিরুদ্ধে কিছু বলেনি। এ মামলায় তাদের আটকানো যাবে না।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :