ঢাকা : শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার রায় জানতে শ্রম আদালতে উপস্থিত হয়েছেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার কর্মকর্তা
ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা সোমবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
গ্রামীণ টেলিকমের ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করা, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়ার অভিযোগে ইউনূসসহ চার আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত দেবেন বিচারক।
আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিজয় নগরের টাপা প্লাজায় শ্রম আদালত ও আশেপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। রায়ের খবর সংগ্রহ করতে দেশের বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মীর পাশাপাশি বিবিসি, আল জাজিরা, ডয়চে ভেলেসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিও উপস্থিত হয়েছেন।
দুপুর ১ টা ৪৩ মিনিট ইউনূস ওই ভবনের পঞ্চম তলায় ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের এজলাসে উপস্থিত হন। ততক্ষণে পরিপূর্ণ হয়ে যায় এজলাস।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ফরিদা আখতার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, আইনজীবী সারাহ হোসেনও রায় দেখতে এসেছেন।
দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ২৪ ডিসেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করে দেন বিচারক।
সেদিন আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, আমি বা আমরা কোনো অন্যায় করিনি, তাই আশা করি; সত্যই প্রমাণিত হবে। শিগগিরই এই মামলা থেকে খালাস চাই; কারণ আমাদের নির্দোষ প্রমাণ করার কিছু নেই। আমাদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ আনা হয়েছে- সব মিথ্যা।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান এ মামলার আসামি।
মামলা বৃত্তান্ত : কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।
শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
এ মামলা বাতিলের আবেদন নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতেও গিয়েছিলেন ইউনূস। কিন্তু গত মে মাসে তার আবেদন আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে গেলে মামলা চালানোর বাধা দূর হয়।
এরপর চলতি বছরের ৬ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা।
গত ২২ অগাস্ট থেকে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বাদীসহ চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ৮ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেন আসামিরা।
৩৪২ ধারার আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত বক্তব্যে ইউনূস বলেছিলেন, শ্রম আইনের ২৩৪ ধারার বিধান লঙ্ঘিত হলে ২৩৬ ধারায় অনেকগুলো প্রতিকারের বিধান রেখেছে। শ্রম আইনের ২৩৬ ধারার উপরোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ না করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বিবাদী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ আইনের লঙ্ঘন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।আমি নিজের স্বার্থে কোনো কিছু করিনি। আমি অপরাধ করিনি।
সেদিন শুনানি শেষে ইউনূস সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমি তো নিজে এ প্রতিষ্ঠানের মালিক নই। আমার আদর্শ কর্মসূচিতে কোনো ত্রুটি ছিল না। এত বড় কাজ করতে গেলে কিছু ভুল হতে পারে। আমরা তো ফেরেশতা নই। কিন্তু ভুল হলে তা ইচ্ছাকৃত নয়।
এমটিআই