• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১
বছরে কঙ্কালের চাহিদা ১০ হাজার

নীরবে চলছে লাশ চুরি


নিউজ ডেস্ক মে ৬, ২০২১, ০৪:০৭ পিএম
নীরবে চলছে লাশ চুরি

ঢাকা : দেশে বছরে মানব কঙ্কালের চাহিদা ১০ হাজারের বেশি। চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরাই এসব কঙ্কালের অন্যতম ক্রেতা। কিন্তু দেশে বৈধভাবে কোনো কঙ্কাল তৈরি হয় না। বৈধভাবে কঙ্কাল পাওয়ার একমাত্র উপায় দানকৃত মৃতদেহ। কিন্তু এই কঙ্কালের পরিমাণ খুবই কম। তাই অধিকাংশ কঙ্কালই সংগ্রহ করা হচ্ছে অবৈধ পন্থায়। বিশেষ করে কবরস্থান থেকে লাশ চুরি করে কঙ্কাল সংগ্রহের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

অবৈধ এই কাজে সম্পৃক্ত আছে মেডিকেল কলেজেরই কিছু শিক্ষার্থী, ডোম, মর্গসংশ্লিষ্ট লোকজনসহ একাধিক চক্র। যদিও সংশ্লিষ্টরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে ইতঃপূর্বে কঙ্কাল চুরির সাথে সম্পৃক্তরা পুলিশের কাছে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। চলতি রমজান মাসে গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি কবরস্থান থেকে ৩টি লাশ চুরির ঘটনা ঘটে। যদিও এই ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।

জানা যায়, দেশে সরকারি ৩৭ টি মেডিকেল কলেজ, ৪টি ডেন্টাল কলেজ, ৬৯টি বেসরকারি মেডিকেল কলে, ৩টি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ এবং ৬টি বেসামরিক মেডিকেল কলেজ আছে। এসব মেডিকেল কলেজগুলোতে ১০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী প্রতি বছর ভর্তি হচ্ছে। তাদের সবার জন্যই প্রয়োজন হচ্ছে মানব কঙ্কালের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেডিকেলের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘আমাদের মেডিকেলের  শিক্ষার্থীরা যে কঙ্কাল ব্যবহার করে সেগুলো দান করা লাশের কঙ্কাল। আর ওই সব কঙ্কালের গায়ে নামও লেখা রয়েছে। আর অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাদের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কঙ্কাল ক্রয় করেন বলে আমরা জানি। তবে সিনিয়ররা শিক্ষার্থী বা ডাক্তাররা এগুলো কোথা থেকে সংগ্রহ করে তা আমার জানা নেই।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থীদের জন্য বেওয়ারিশ লাশ ব্যবহার করা হয়। তবে এখানে কোনো কঙ্কাল তৈরি করা হয় না। বেসরকারি মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা কোথা থেকে লাশ বা কঙ্কাল সংগ্রহ করে তা আমার জানা নেই। মেডিকেলের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের কঙ্কালের প্রয়োজন হয়। সাধারণত সিনিয়র শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জুনিয়ররা কঙ্কাল সংগ্রহ করে। তবে বাজারে কৃত্রিম কঙ্কালও (প্লাস্টিকের তৈরি) পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।

এদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায়ই কবর থেকে লাশ চুরির ঘটনা ঘটছে। কখনো কখনো এসব ঘটনায় আটকের ঘটনাও ঘটছে।

কয়েক বছর আগে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকায় র‌্যাব-১২ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে ১০টি কঙ্কালসহ তানভীর নামে এক চিকিৎসককে আটক করে। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জনিয়েছিলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক ডোমের কাছ থেকে তিনি কঙ্কালগুলো সংগ্রহ করেছেন।

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকার কবর থেকে লাশ চুরির পর তা সিদ্ধ করে কঙ্কাল তৈরি করছে বেশ কয়েকটি চক্র। এরপর শাহবাগ ও মিটফোর্ড ওষুধের ফার্মেসি, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসে মোবাইল নম্বরসহ কঙ্কাল বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে।

এরপর মেডিকেল কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা ওইসব নম্বরের যোগাযোগ করেন। পরে চুক্তি মোতাবেক নির্ধারিত টাকায় ওইসব মোবাইল নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে পাঠানোর পর নির্ধরিত জায়গায় কঙ্কালটি পৌঁছে যাচ্ছে।

ঢামেক মর্গ সূত্র জানায়, এখন আর মর্গে কঙ্কাল তৈরি হয় না। মেডিকেলের ছাত্র নেতারাই বাইরে বিভিন্ন চক্রের মাধ্যমে কঙ্কাল তৈরি করে বিক্রি করছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে একটি গ্রুপ কঙ্কাল ক্রয় বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত। কলেজের কোনো শিক্ষার্থী কঙ্কাল ক্রয় করতে চাইলে এই চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারাই লাশ চোরচক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব কঙ্কাল কলেজের নতুন নতুন শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করেন। আর এর বিনিময়ে তারা কঙ্কাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের কমিশন পেয়ে থাকেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কঙ্কাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এক শিক্ষার্থী জানান, মেডিকেলে পড়াশোনা করতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই মানুষের কঙ্কাল প্রয়োজন হয়। আর এসব কঙ্কাল বাইরে প্রকাশ্যে বিক্রি হয় না। আবার মেডিকেল থেকেও এসব কঙ্কাল সরবরাহ না করায় বিকল্প পথে অবৈধভাবে কঙ্কাল সংগ্রহ করেন তারা। পুরনো কঙ্কাল ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় আর নতুন ৬০ হাজার থেকে লাখ টাকায়ও ক্রয় করেন শিক্ষার্থীরা।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, মিটফোর্ডের মর্গে আগে প্রকাশ্যেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের লাশ থেকে কঙ্কাল তৈরি করে ছাত্রদের কাছে বিক্রি করা হতো। কয়েক বছর আগে সংবাদ মাধ্যমে এনিয়ে সংবাদ প্রচারের পর কিছুদিন তা বন্ধ ছিল। তবে এখনো গোপনে অজ্ঞাতনামা লাশ থেকে কঙ্কাল তৈরি করা হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেলের মর্গ সহকারী ডোম সেকান্দার জানান, এখানে কোন কঙ্কাল তৈরি হয় না। বেওয়ারিশ লাশগুলো যথাযথ কতৃপক্ষের মাধ্যমে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে দেওয়া হয়। এরপর সেই লাশগুলোর কি হয় তা তাদের জানা নেই।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!