• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১
প্রশ্নফাঁস

বুয়েট শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে ১০ কোটি টাকা লেনদেন


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৩, ২০২১, ১১:২৬ এএম
বুয়েট শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে ১০ কোটি টাকা লেনদেন

ঢাকা : গত ৬ বছরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। একজন শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে এত টাকা কোথা থেকে এলোা- সেই অর্থের সন্ধান করতে গিয়ে গোয়েন্দারা প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে এই শিক্ষকের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন।

এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এমনকি প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার একজনের স্বীকারোক্তিতেও এসেছে ওই শিক্ষকের নাম।

রাষ্ট্রায়ত্ব পাঁচ ব্যাংকের সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় নাম আসা শিক্ষক বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান নিখিল রঞ্জন ধর। গোয়েন্দা পুলিশের কাছ থেকে তার বিষয়ে জানতে পেরে বুয়েট কর্তৃপক্ষ তাকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ব্যাংকে লেনদেনের বিষয়ে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম সোমবার (২২ নভেম্বর) বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার একজনের জবানবন্দিতে বুয়েট শিক্ষকের নাম এসেছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের টাকা তার ব্যাংকে লেনদেন হয়েছে কি না, সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেব।

বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ আমাদের যোগাযোগ করে কিছু তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই এই ব্যবস্থা। আমরা তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবস সময় দিয়েছি। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশকেও বিষয়টি জানাব।

তবে নিখিল রঞ্জন তার বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে তার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। দায়িত্ব থেকেই তিনি প্রেসে গেছেন এবং কাজটি তদারকি করেছেন।

ছয় বছরে আপনার অ্যাকাউন্টে ১০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, গত তিন বছরে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন ১ কোটি ৮২ লাখ টাকার। এই টাকা কোথায় পেলেন?

জানতে চাইলে এই অধ্যাপক বলেন, আমি ১৯৮৬ সাল থেকে বুয়েটে শিক্ষকতা করি। এটা সারা জীবনের সঞ্চয়। পাশাপাশি পারিবারিকভাবে মাছের ঘেরসহ কিছু ব্যবসাও আছে। সেখান থেকেও টাকা আসে। এসব টাকা দিয়েই আমি সঞ্চয়পত্র কিনেছি। সব টাকার হিসাব আছে।

রাষ্ট্রায়ত্ব পাঁচ ব্যাংকের সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্ব পেয়েছিল আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এইউএসটি)। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর। গত ৬ নভেম্বর এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

কিভাবে এই শিক্ষকের নাম প্রশ্ন ফাঁসচক্রের মধ্যে এলো জানতে চাইলে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ব পাঁচ ব্যাংকের সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষার পর প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠে। তখন গোয়েন্দা পুলিশ এটা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে আমরা জানতে পারি আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস থেকেই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এই ঘটনায় আমরা ১১ জনকে গ্রেফতার করি। তাদের মধ্যে একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ওই শিক্ষকের নাম বলেছেন। পাশাপাশি আরও কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। এগুলো নিয়েই এখন আমাদের অনুসন্ধান চলছে। তিনি সম্পৃক্ত থাকলে আইনের আওতায় আনা হবে।

গোয়েন্দা পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর নিয়োগ পরীক্ষা কমিটিতে ছিলেন না। কিন্তু তিনি প্রশ্ন ছাপার দিন সকাল থেকে ভোর পর্যন্ত আহছানিয়া মিশনের ঢাকার আশুলিয়ার ছাপাখানায় অবস্থান করতেন। ফেরার সময় দুই কপি প্রশ্ন তিনি সঙ্গে আনতেন। প্রশ্ন ব্যাগে ঢুকিয়ে দিতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ন দেলোয়ার হোসেন। গ্রেফতারের পর দেলোয়ার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিতে এই তথ্য জানিয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, একজন অধ্যাপকের একাউন্টে ৬ বছরে ১০ কোটি টাকার লেনদেন অস্বাভাবিক। আমরা এই টাকা উৎস খোঁজারও চেষ্টা করছি। সবকিছু একত্রিত হলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দেলোয়ারের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ২ নভেম্বর আহছানিয়া মিশন ছাপাখানায় সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকের প্রশ্নপত্র ছাপা হয়। সেদিন সকাল থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত নিখিল রঞ্জন ধর ওই ছাপাখানায় ছিলেন। আসার সময় প্রশ্নের দুইটি কপি তিনি নিয়ে যান। পাশাপাশি নজরদারি ও নিরাপত্তা না থাকায় দেলোয়ার নিজেও লুকিয়ে প্রশ্ন নিয়ে বের হতেন। তাকে সহযোগিতা করতেন টেকনিশিয়ান মুক্তারুজ্জামান ও ল্যাব সহকারী পারভেজ মিয়া। এভাবে তিনি পাঁচ-ছয়বার প্রশ্ন ছাপাখানা থেকে নিয়ে এসেছেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক নিখিল বলেন, মূলত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ডাকে তিনি ছাপাখানায় যেতেন।

পরীক্ষা কমিটিতে না থেকেও কেন যেতেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত পরীক্ষার সিটপ্ল্যান করতাম, অন্য শিক্ষকরাও থাকতেন। সবাই মিলে একসঙ্গে সিটপ্ল্যান তদারক করতাম। আর ছাপা প্রশ্নে কোনও ভুল আছে কিনা সেটা দেখার জন্যই দুই কপি ব্যাগে আনতেন। তার কাছ থেকে এটা বাইরে যায়নি বলে দাবি তার।

তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত নই। বলা হচ্ছে, আমি ছাপাখানা থেকে প্রশ্নপত্র ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে আসতাম। ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!