ঢাকা : রাজধানীজুড়ে হঠাৎই বেড়েছে খুনের ঘটনা। পেশাদার কিলার, ছিনতাই ও ডাকাতের হাতে প্রাণ যাচ্ছে প্রভাবশালী নেতা থেকে শুরু সাধারণ মানুষ। গত ২৪ মার্চ জনবহুল এলাকাতে দুর্বৃত্তদের এলোপাথাড়ি গুলিতে খুন হন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু। একই ঘটনায় রাস্তায় রিকশায় থাকা ছাত্রী সামিয়া আফরিন জামাল প্রীতি। এর একদিন পার না হতেই সবুজবাগে এক নারীকে তার সন্তানদের বেঁধে কুপিয়ে হত্যা করে।
সর্বশেষ রোববার (২৭ মার্চ) ভোরে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে খুন হন চিকিৎসক ডা. আহমেদ মাহী বুলবুল। তিনি গরিবের দাঁতের ডাক্তার নামেও পরিচিতি ছিলেন। হঠাৎ খুন খারাবির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়িয়েছে।
তারা বলছেন, নগরবাসীকে নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে আরো কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় খুন, চাঁদাবাজি, গাড়ি চুরি ও দস্যুতার মতো অপরাধ বেড়েছে। কমেনি ছিনতাইয়ের ঘটনাও। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আওতাধীন ৫০টি থানায় গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে হওয়া বিভিন্ন মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করে অপরাধের এমন চিত্র পাওয়া যায়।
ডিএমপির সূত্র জানায়, এ বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীতে খুন হন নয়জন। ফেব্রুয়ারিতে খুনের ঘটনা ১২টি। এর মধ্যে পাঁচটি খুনের ঘটনাই মিরপুর এলাকায়। গত ২৭ দিনে আলোচিত একাধিক খুনের ঘটনা রয়েছে।
গরিবে চিকিৎসককে হত্যা : রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ছুরিকাঘাতে দন্ত চিকিৎসক ডা. আহমেদ মাহী বুলবুল নিহত হয়েছেন। পুলিশের ধারণা, ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে তিনি মারা গেছেন। গতকাল রোববার ভোর ৫টার পর শেওড়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাহতাব উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ভোর ৫টার পর শেওড়াপাড়া এলাকায় অজ্ঞাত ব্যক্তির ছুরিকাঘাতে বুলবুল গুরুতর আহত হন। পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ডিসি মাহতাব আরো বলেন, এটি ছিনতাইয়ের ঘটনা হতে পারে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি এবং কারা তাকে ছুরিকাঘাত করেছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
ডা. বুলবুল মগবাজারে রংপুর ডেন্টাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা দেন। সেখানে তিনি দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন। শুধু স্বাবলম্বীদের কাছ থেকে ফি নিতেন।
সবুজবাগে নারীকে কুপিয়ে হত্যা : রাজধানীর সবুজবাগ থানার দক্ষিণগাঁও বেগুনবাড়ি এলাকায় তানিয়া আফরোজ মুক্তা (২৮) নামে এক নারীকে নিজ ঘরে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় সবুজবাগ থানা পুলিশ। বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন মতিঝিল বিভাগের সবুজবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মনতোষ বিশ্বাস।
তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। নিহত ওই নারীর ঘাড়ে ও পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপের চিহ্ন রয়েছে।
মনতোষ বিশ্বাস বলেন, নিহত নারীর লাশ পাশে মুখে টেপ প্যাঁচানো অবস্থায় পড়ে ছিল তার দুই শিশু সন্তান। এদের মধ্যে একজনের বয়স বয়স ৩ ও আরেক জনের বয়স ১০ মাস। ১০ মাসের বয়সী শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ৩ বছর বয়সী শিশুটি সুস্থ আছে।
তিনি আরো বলেন, নিহত মুক্তার স্বামী ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট হিসেবে চাকরি করেন। মুক্তা তিন বছরের মেয়ে ও ১০ মাসের ছেলেকে নিয়ে ওই বাসার দ্বিতীয় তলায় থাকতেন। মুক্তার বাসার এসি মেরামত করতে কেউ এসেছিল। আমরা এসে ঘরের দরজা খোলা পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, এসি মেরামত করতে আসা কেউ হয়তো তাকে খুন করে থাকতে পারে।
এদিকে পুলিশ বলছে, করোনার কারণে রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় চুরি ও দস্যুতা কম ছিল। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এখন আগের মতোই রাজধানী কর্মব্যস্ত। এ ছাড়া ঢাকায় মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়েছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে চুরি, ছিনতাই ও দস্যুতার মতো অপরাধে জড়াচ্ছে মাদকসেবীরা।
খুনের সঙ্গে ঢাকায় মোটরসাইকেলসহ গাড়ি চুরির ঘটনাও বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ রকম ৩৬টি ঘটনায় মামলা হয়েছে। এর আগে জানুয়ারি মাসে মোটরসাইকেল বা গাড়ি চুরির মামলা হয়েছিল ৩১টি। চাঁদাবাজির ঘটনায় গত দুই মাসে ঢাকায় মামলা হয়েছে ১৬টি। গত মাসে নয়টি ও জানুয়ারি মাসে সাতটি। তবে অনেকে হয়রানি এড়াতে এবং চাঁদাবাজদের হুমকির কারণে মামলা করতে চান না।
রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গত জানুয়ারি মাসে পাঁচটি ও ফেব্রুয়ারিতে আরো পাঁচটি মামলা হয়েছে। তবে ডিএমপির এ মামলার তথ্যে প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। কারণ, ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা থানায় গিয়ে মামলা করেন না।
চলতি মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মৌচাকের অফিস থেকে মেরুল বাড্ডার বাসায় ফিরছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী খন্দকার পলাশ। রিকশায় করে বাসায় ফেরার পথে রাত আটটার দিকে রামপুরা বাজার এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন তিনি। খন্দকার পলাশ বলেন, ফোনে কথা বলছিলেন। হঠাৎ পেছন থেকে এক যুবক দৌড়ে এসে তাঁর ফোনটি কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যান। পুলিশের কাছে গেলে ঝামেলা হতে পারে। আবার ফোন উদ্ধার হবে কি না, সে নিশ্চয়তাও নেই। তাই থানায় গিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি তিনি।
পুলিশ বলছে, করোনার কারণে রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় চুরি ও দস্যুতা কম ছিল। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এখন আগের মতোই রাজধানী কর্মব্যস্ত। এ ছাড়া ঢাকায় মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়েছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে চুরি, ছিনতাই ও দস্যুতার মতো অপরাধে জড়াচ্ছে মাদকসেবীরা।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে থানাগুলোতে টহল জোরদার করা ও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসের অপরাধ পর্যালোচনা নিয়ে গত রোববার ডিএমপি সভা করেছে। সভায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে থানাভিত্তিক অপরাধীদের তালিকা তৈরি করে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :