• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মেডিকেল ভর্তির প্রশ্ন ফাঁস চক্রের আরো ৫ চিকিৎসক গ্রেপ্তার


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২১, ২০২৩, ০৮:৩১ পিএম
মেডিকেল ভর্তির প্রশ্ন ফাঁস চক্রের আরো ৫ চিকিৎসক গ্রেপ্তার

ঢাকা: মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রের অন্যতম মূলহোতাসহ মোট ৫ চিকিৎসককে খুলনার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। 

সোমবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যায় সিআইডির পক্ষ থেকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম (৪০), ডা. লুইস সৌরভ সরকার (৩০), ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া (২৫), ডা. শর্মিষ্ঠা মন্ডল (২৬), ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা (২৪)। গ্রেপ্তারকৃতদের ২০ আগস্ট মিরপুর মডেল থানার মামলা নং- ৪৩ গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২২(২)/৩৩(২) সহ পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন ১৯৮০ এর ৪/১৩) এর অধীণে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। 

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ৬টি, ল্যাপটপ ২টি, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। খুলনা শহরের আলোচিত মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসের মালিক। ডাক্তারি পেশা বাদ দিয়ে জড়ান কোচিং ব্যবসায়। প্রতিষ্ঠা করেন থ্রি ডক্টরস কোচিং খুলনা। তিনি নিজেকে ডাক্তার তৈরীর কারিগর হিসেবে পরিচয় দেন। মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন তিনি।
 
সিআইডি আরো জানায়,  মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য শত শত শিক্ষার্থীকে এভাবে ভর্তি করিয়ে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার এবং তার স্ত্রীর একাউন্টে প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে। হাসপাতাল, ফ্লাট, জমি, মাছের ঘের, হোটেল শেয়ারসহ গড়েছেন বিপুল সম্পদ। ডা. তারিমের বিরুদ্ধে একাধিক গোয়েন্দ প্রতিবেদনে আগেও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। 

ডা. লুইস সৌরভ সরকার খুলনা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। খুলনা শহরের আলোচিত মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসের শিক্ষক। বর্তমানে একটি বেসরকারী এনজিও তে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত।

ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান অর্জন করেন। তিনি খুলনা থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক ডা. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিমের স্পেশাল ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়াও তাকে বাসায়ও পড়াতেন তারিম। কম মেধাবী হওয়ার পরও তারিমের কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়ে তিনি মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। তারিমের ঘনিষ্ঠজন ও তৎকালীন কোচিংয়ের ৩জন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। জাতীয় মেধায় ১১তম হওয়ার পরও সে ৪টি ফাইনাল প্রফেশনাল এক্সামিনেশনের সব সাবজেক্টেই ফেইল করেছে। পরবর্তীতে একাধিকবারের চেষ্টায় সে পাশ করেছে। লামিয়ার প্রশ্ন পেয়ে চান্স পাওয়ার বিষয়টি খুলনার চিকিৎসক মহলে ওপেন সিক্রেট। লামিয়ার ভর্তি জন্য তার স্বামী শেখ ওসমান গনি ও ডা. তারিমের মাঝে প্রায় ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানা যায়। 

এছাড়া ডা. শর্মিষ্ঠা মন্ডল ও ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা উভয়েই ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ডা. তারিমের ( মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসের মালিক) কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র ক্রয় করে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। 

চলতি মাসের ১৩ তারিখ মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত ৭ (সাত) জন ডাক্তার সহ প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডির সাইবার টিম। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৮ জন তাদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের চেক এবং এডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়।

এছাড়াও চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়রি উদ্ধার করা হয়, যেখানে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা তার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম পাওয়া যায়। সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূল উৎপাটনে ও অবৈধ উপায়ে চিকিৎসক এর মতো মহান পেশায় ভর্তি হওয়া ডাক্তারদের সন্ধানপূর্বক আইনের আওতায় আনার জন্যে সিআইডির কার্যক্রম চলমান রাখার ঘোষণা দেন।

সোনালীনিউজ/এলআই/আইএ

Wordbridge School
Link copied!