• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
এমটিএফই

ধরা-ছোয়ার বাইরে মূল হোতারা, মামলা হলে আইনগত ব্যবস্থা


লাইজুল ইসলাম আগস্ট ২১, ২০২৩, ০৯:৫১ পিএম
ধরা-ছোয়ার বাইরে মূল হোতারা, মামলা হলে আইনগত ব্যবস্থা

ঢাকা: অনলাইন কিপটো ট্রেডিং সাইট এমটিএফই। যেখানে টাকা ইনভেস্ট করলেই স্বল্প সময়ের মধ্যে পাওয়া যেত দ্বিগুণ বা তিনগুণ টাকা। এই লোভ থেকে সাইটটিতে ইনভেস্ট করে প্রতারিত হয়েছেন বহু যুবক। ধারণা করা হচ্ছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি বাজার থেকে তুলে নিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এমটিএফই নামের কিপটো ট্রেডিং সাইটটি। এই সাইটটি এমএলএম ব্যবসার মতোই মুনাফা দিয়েছে বলেই দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মনে করেন, অতি লোভ ও দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় কিছু যুবক এসব বেটিং সাইটে টাকা ইনভেস্ট করে। পরে প্রতিটি বেটিং সাইট টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে ইনভেস্ট হওয়া এই টাকা ফেরত পাওয়া বেশ কষ্ট সাধ্য বিষয়। আইন অনুযায়ী মামলা করলে দোষীদের খুঁজে বের করতে কাজ করবেন তারা। এজন্য ভুক্তভোগীদের মামলা করার পরামর্শ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। 

তবে এখন পর্যন্ত দেশের কোনো থানায় এ বিষয়ে কোনো মামলা বা অভিযোগ পরেনি বলে জানা গেছে। আর এই এমটিএফই এর মূল হোতা কারা তা এখনো কেউ নিশ্চিত করেতে পারেনি। তবে বেশ কয়েকজনের নাম এসেছে। কিন্তু তাদের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি সয়ং এই ট্রেডিংয়ের সঙ্গে জড়িতরাও। 

এমটিএফইতে ইনভেস্ট করার নিয়মটি বেশ বিশ্বাস জন্ম দিয়েছিলো অনেকের মাঝে। শুরুতে প্লে-স্টোর থেকে এমটিএফই এ্যাপটি নামাতে হতো। এরপর আসতো রেজিস্ট্রেশনের পালা। রেজিস্ট্রেশন করতে হলে অবশ্যই ইমেইল বা মোবাইল নম্বর প্রয়োজন হতো। মোবাইল নম্বর বা ইমেইল দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হতো। রেজিস্ট্রেশন করার সময় পাসওয়ার্ডও নিজের মতো করে দিতে হতো। 

এরপর আরো একটি ধাপ রয়েছে। সেখানে যিনি এই আইডিটি খুলছেন তিনি ভোটার আইডি কার্ড নম্বর দিতেন অ্যাপটিতে। আইডিকার্ডে থাকা নামই দিতে হতো সেখানে। এরপর একটি ব্যাংক একাউন্ট দিতে হতো অ্যাপটিতে। যদিও ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে কোনো লেনদেন হতো না। কিন্তু একাউন্ট করতে হলে অবশ্যই ব্যাংক একাউন্ট দিতে হতো। 

এমটিএফই চালাতে হলে বাইনান্স থেকে ক্রিপটো কিনতে হতো। ক্রিপটো কেনার জন্য বিকাশ, নগদ ব্যবহার করতেন যুবকরা। এই বাইনান্সও একটি অবৈধ লেনদেনকারী বিদেশী প্রতিষ্ঠান। যদিও এটি সারা বিশ্বে ক্রিপটো ট্রেডিংয়ের জন্য প্রসিদ্ধ। এমটিএফই একাউন্টে ক্রিপটো পাঠাতে হোতো বাইনান্স থেকে। এরপর এমটিএফইতে এই ক্রিপটো ট্রেডিংয়ের জন্য বিনিয়োগ করা হতো। 

প্রতিদিন বিকেল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ফাইন্যান্সিং শুরু হতো। আর এই ট্রেডিং শেষ হতো রাত ১টায়। রোবটের মাধ্যমে ফাইন্যান্সিং করার সুযোগ থাকায় অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠে। এতে লাভও আসতো ভালো। ক্ষতির পরিমাণ ছিলো খুবই কম। এই এমটিএফইতে সর্বনিম্ন ট্রেডিং করা যেতো ২৫ হাজার বাংলা টাকা সমপরিমাণ ক্রিপটো। আর সর্বোচ্চ যত খুশি তত। 

সোনালীনিউজের সঙ্গে এই অ্যাপটিতে বিনিয়োগকারী অন্তত পাঁচ জনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি দুই মাস আগে এখানে ২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। ফেরত পেয়েছেন ৭ হাজার টাকা। বিনিয়োগের বাকি টাকা তিনি তুলতে পারেননি। আর বাকি চারজন তাদের মূল বিনিয়োগসহ বেশ কিছু টাকা লাভও এসেছে। 

ক্ষতিগ্রস্ত একজন সালেহিন (ছদ্দনাম) জানান, গত দুই মাস আগে আমার পরিচিত এক ভাইয়ের মাধ্যমে এই অ্যাপটির সন্ধান পাই। অ্যাপটিতে টাকা বিনিয়োগের সব কিছু সেই করে দেয়। আমাকে একাউন্ট করায়। বাইন্যান্স থেকে ক্রিপটো কিনে দিয়ে এমটিএফইতে বিনিয়োগ করিয়ে দেয়। প্রথম তিন সপ্তাহে আমার ৭ হাজার টাকা চলে আসে। প্রতিদিন অন্তত ৫ ডলার বা ক্রিপটো লাভ আসতে থাকে। সপ্তাহে ৫ দিন। আশা করছিলাম তিন মাসের মধ্যে সব টাকা উঠে আরো লাভে থাকবো। কিন্তু বিধি বাম। সব টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে বিদেশী এই কোম্পানিটি। 

তিনি বলেন, বিকাশের মাধ্যমে ক্রিপটো কেনা যায়। আবার বিকাশের মাধ্যমে ক্রিপটো বিক্রিও করা যায়। নগদের মাধ্যমেও এই লেনদেন করা যায়। এতে কোনো সমস্যা হচ্ছিলো না। উপার্জিত ক্রিপটো বিক্রি করতে হতো বাইন্যান্সের মাধ্যমে। এটির ক্রেতা ছিলো এরকমই অন্য ব্যবহারকারীরা। 

তিনি আরো বলেন, এইখানে ট্রেডিং করে শতশত মানুষ। তাদের সহায় সম্বল হারিয়েছে। তবে এটার প্রধান কারা সেটা তিনি সোনালীনিউজকে নিশ্চিত করতে পারেননি।

ভুক্তভোগি শিহাব (ছদ্মনাম) এই এমটিএফই ২ হাজার ক্রিপটো ইনভেস্ট করেন। এতে প্রতিদিন তিনি ৩৫ ক্রিপটো বা ডলার আয় করতেন। অতিলোভে তিনি আরো ১৫’শ ক্রিপটো বিনিয়োগ করেন। কিন্তু যেদিন তিনি এই ১৫’শ ক্রিপটো বিনিয়োগ করেন তার পরের দিন থেকেই সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে তিনি এখন নিঃস্ব।

আরেক ভুক্তভোগী জানান, ২৫ হাজার টাকার ক্রিপটো ইনভেস্ট করার পরের দিন থেকেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই অনলাইন ব্যবসাটি নিয়ন্ত্রণ হতো দুবাই থেকে। তবে কেউ এটি নিশ্চিত করতে পারেনি। বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন সিইও আছে। যাদের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এই টাকা ফেরত পাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। 

বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ আগস্ট বলেছিলো দেশ থেকে টাকা চলে যাচ্ছে এই ক্রিপটো ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে। এসব প্রতিষ্ঠান যেকোনো সময় পালিয়ে যেতে পারে। তাই সবাইকে এতে বিনিয়োগ না করার কথাও বলা হয়। সেই কথাই সত্য হলো।  

এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং বিভাগ। যদিও তারা কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ এখনো পায়নি। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সোস্যাল মিডিয়াতে দেখে তারা কাজ শুরু করেছে। 

এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সোনালীনিউজকে বলেন, যারা এখানে প্রতারিত হয়েছেন তারা আইন অনুযায়ী মামলা করেন। আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অবশ্যই আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সাইবার টিম ইতোমধ্যে এটি নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

সোনালীনিউজ/এলআই/আইএ

Wordbridge School
Link copied!