ঢাকা: রাজধানীর ডেমরা এলাকার একটি খালের কার্লভাটের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি লাশ। লাশটি এমন ভাবে পঁচেছে যে তার হাতের ছাপ নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করাও সম্ভব না। এমন অবস্থায় বেশ ঝামেলায় পরে যায় পুলিশ। শুরু হয় তদন্ত। কিন্তু কোনো ভাবেই এই লাশের পরিচয় পাচ্ছিলো না পুলিশ। এমনকি এটা কি হত্যা নাকি অন্যকিছু তাও বুঝতে পারছিলো না তারা।
ঘটনার শুরু হয় এক ব্যাক্তির ফোনকল থেকে। তিনি ৯৯৯-এ ফোন করে বলেন, একটি মানুষ ভাসছে খালের মধ্যে। ডেমরা মহাকাশ এলাকার পাশের লেকের একটি কার্লভাটের নিচে গলায় গামছা পেচানো অবস্থায় উল্টো হয়ে ভাসছিলো লাশটি। গত ১২ জুন লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তিদের আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করে ডেমরা থানা পুলিশ।
এদিকে গত ৩ জুলাই মহাকাশ সড়কে একটি রিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় রিকশা চালক বলেন, আমি মহাকাশ সড়কে যেতে চাইনি। বেশি টাকার কথা বলে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে ২২ দিন আগের মৃতদেহের বিষয়টি পুলিশের সামনে আসে। এরপরই শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ।
দুই ছিনতাইকারীকে ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। বেরিয়ে আসতে থাকে হত্যাকাণ্ডের তথ্য। এই হত্যায় দুই পুরুষ ছিনতাইকারীর সঙ্গে যুক্ত আছেন এক নারীও। ৮ বা ৯ জুন রাতে চক্রটির নারীসদস্য অসুস্থ হয়ে পরার ভান করে। এসময় তিনজনে মিলে টিএসসি থেকে একটি অটোরিকশা ভাড়া করেন। রিকশাটি ডেমরা মহাকাশ সড়কে আসলে গলায় গামছা পেচিয়ে রিকশা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হয়। এরপর ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ব্রিজ/কার্লভাটের রেলিংয়ের সঙ্গে মাথা বাড়ি দিয়ে হত্যা করা হয়। লাশ সেখানে ফেলে দিয়ে রিকশা নিয়ে পারিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
এই পুরো ঘটনা ঘটিয়েছে মো. ফরহাদ (২৫), সুমি (২৫) ও শাওন হাওলাদার। এই তিনজন দীর্ঘদিন ধরে রিকশা ছিনতাই করে আসছিলো। জুলাইয়ের ৩ তারিখ রিকশা ছিনতাইয়ের সময় গ্রেপ্তার করা হয় ফহাদ ও সুমিকে। ৬ জুলাই পটুয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শাওনকে। এই তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে রিকশা চালক হত্যাকাণ্ডে।
এ ঘটনায় পুলিশের ডেমরা জোনের এসি মধুসূদন সোনালীনিউজকে বলেন, ডেমরার মহাকাশ রোড একটি নির্জন এলাকা। এখানে মানুষের বসবাস খুবই কম। তাই এটাকে ছিনতাইকারীরা নিজেদের অপকর্মের জন্য নির্ধারণ করেছে। সেই হিসেবেই রিকশা চালকদের নিয়ে এসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা।
তিনি বলেন, ফরহাদ, শাওন ও সুমি যাত্রাবাড়ীর কাজলা ঢালে পাশাপাশি বাসায় ভাড়া থাকতেন। ফরহাদ ও শাওন আগে রিকশা চালাতেন। আর সুমি তার স্বামীর সঙ্গে থাকতেন। কিছুদিন আগে সুমির সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। সুমির আর্থিক দুরবস্থার কথা জানতেন ফরহাদ। এছাড়া ফরহাদ হয়তো সুমিকে কিছুটা পছন্দও করতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনজনই বলেন, তারা বেশ কিছু রিকশা ছিনতাই করেছে। যেই রিকশা চলককে হত্যা করে রিকশাটি ছিনতাই করা হয়েছে সেটি বিক্রি হয়েছে ২২ হাজার টাকায়। এর মধ্যে ৪ হাজার টাকা পায় সুমি। বাকিটা ফরহাদ ও শাওন ভাগ করে নেন। এই রিকশাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের পাশের একটি গ্যারেজের মালিক সোহেল কিনেছিলেন।
মামলাটি শেষ হলেও এখনো খোঁজ মেলেনি হত্যার শিকার ব্যক্তির। তার নাম পরিচয় জানাটা খুব প্রয়োজন। কিন্তু যেহেতু তার শরীর পুরো পঁচে গিয়েছিলো তাই হাতের ছাপ নেয়া যায়নি। লাশটি আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এই ঘটনায় একটি জিডি করা হয়েছে। বিভিন্ন থানায় তার দেহের আকৃতিসহ বিভিন্ন তথ্য পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য থানায় কোনো মিসিং জিডি আছে কি না তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন রিকশার গ্যারেজে খোঁজ নিয়েও পরিচয় পাওয়া যায়নি।
মধুসূদন বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার। তাদের খুঁজে বের করার। কিন্তু কোনো ভাবেই তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা তার খোঁজ পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
এলআই/আইএ