ঢাকা : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের লাশ স্তূপ করার ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দুই পুলিশ সদস্য যখন লাশের স্তূপ করতে ব্যস্ত তখন পাশ দিয়ে জ্যাকেট পরিহিত একজনকে হেটে যেতে দেখা যায়।
জানা গেছে, তিনি ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়ন। তার বাবা আরিফ হোসেন ওই এলাকার বদরটুনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও হরিনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে লেখাপড়া শেষ করে পুলিশে যোগ দেন আরাফাত। বর্তমানে তিনি ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে কর্মরত। এর আগে দীর্ঘদিন আশুলিয়া থানায় এসআই হিসেবে কাজ করেছেন। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে আরাফাত আত্মগোপনে চলে গেছেন। তার মোবাইল ফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মুঈন। রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আশুলিয়া থানা পরিদর্শন শেষে এসব তথ্য জানান তিনি।
পুলিশ সুপার বলেন, ফেসবুকে যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেটি আমাদের নজরে এসেছে। আমাদের জায়গা থেকে যা করণীয় তা আমরা করছি। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করছে। আমরা সবার সহযোগিতায় পেয়ে গেছি, কারা কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, কারা উপস্থিত ছিলেন। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য নামগুলো প্রকাশ করছি না। খুব তাড়াতাড়ি আপনাদের সামনে বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে।
আহম্মদ মুঈদ বলেন, যেগুলো ভিডিওতে এসেছে সেগুলো দেখেছি, তবে ফিজিক্যাল এভিডেন্স এখনও পাইনি। এগুলো নিয়েও আমাদের কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই গতকাল একটি নিখোঁজ ডায়েরি হয়েছে। আমরা এটি নিয়েও কাজ করছি। আশা করছি খুব ভালো একটা ফলাফল আসবে।
তিনি বলেন, অপরাধী সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। পুলিশও আইনের বাইরে নয়। এছাড়া শুধু ছাত্র-জনতা না, আমাদের অনেক পুলিশ সদস্যকেও আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। পুলিশ হত্যার বিষয়েও মামলা হবে। প্রধান উপদেষ্টার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে গুরুত্বের সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভ্যানে লাশের স্তূপের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, দুইজন পুলিশ সদস্যের একজন হাত ও একজন পা ধরে ভ্যানে থাকা লাশের ওপর নিক্ষেপ করছেন। ভিডিওটির শেষের অংশে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়।
ভিডিওর ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডে একটি পোস্টার দেখা যায়, যা স্থানীয় যুবলীগের আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি প্রার্থী ও ধামসোনা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের। সেই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার সামনেই। আরেকটি ৩০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা গেছে, আশুলিয়া থানার সামনে একটি পুলিশের পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ সদস্যরা তা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ও একটি মামলার বাদীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেষ সময়ে থানায় হামলা চালায়। সে সময় পুলিশ সদস্যরা এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ে। এ সময় কয়েকজন আন্দোলনকারী মারা গেলেও খোঁজ পাওয়া যায়নি তাদের। পরবর্তীতে ৬ আগস্ট সকালে একটি পিকআপে পুড়ে যাওয়া কয়েকটি লাশের খোঁজ মিলে। ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা লাশগুলো গুম করতে পুলিশ পিকআপে তুলে পুড়িয়ে দেয়। তবে অনেকের লাশ অতিরিক্ত পুড়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া পুড়ে যাওয়া মৃতদেহের হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুর রহমান বলেন, সেদিন আমরা ভয়ংকর চিত্র দেখেছি। একপাশে আন্দোলনকারীরা অন্যপাশে পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই কয়েকজন মারা যান। এরপর ছয়টি মরদেহ একটি ভ্যানে তোলে পুলিশ। কিছু সময় পরই সেসব মরদেহ পুলিশের গাড়িতে দেখা যায়। তখন মরদেহগুলোসহ সেই গাড়িটি আগুনে জ্বলছিল।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :