কুমিল্লা: অভিনব কায়দায় র্যাব পরিচয়ে মোবাইল ব্যাংকিং গাড়িতে ডাকাতি যেন সিনেমাকেও হার মানাবে। চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর, সময় আনুমানিক বিকাল সাড়ে তিনটা। একটি বেসরকারী মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের দুই কর্মকর্তা তাদের সাথে থাকা টাকা নিয়ে প্রাইভেটকারযোগে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করে নগরীর কান্দিরপাড়ের উদ্দেশ্যে। একই সময়ে একটি মোটরসাইকেলযোগে ডাকাত দলের ২ সদস্য পূর্ব থেকেই মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির সেই প্রতিনিধিদ্বয়কে অনুসরণ করে ভূক্তভোগীদের অবস্থানের তথ্য ডাকাত দলের নেতাকে সরবরাহ করতে থাকে।
এদিকে, ডাকাতির উদ্দেশ্যে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কালী কৃষ্ণনগর এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী রাস্তার উপর আগে থেকে মাইক্রোবাস নিয়ে অবস্থান করছিল ডাকাতদলের বাকি সদস্যরা। মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির কর্মচারীদের গাড়ি সড়কে উঠলেই ডাকাতদলের সদস্যরা তাদের অনুসরণ করতে থাকে এবং সুযোগ বুঝে সেই কর্মচারীদের পথরোধ করে। এসময় ডাকাত দলের ৩/৪ জন সদস্য তাদের গাড়ি থেকে নেমে ব্যাংক কর্মচারীদের কাছ থেকে টাকা ভর্তি ব্যাগটি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয় ও কর্মচারীদ্বয়কে জিম্মি করে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। পরবর্তীতে কর্মচারীদ্বয়কে গাড়ির ভেতরে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে একসময় তাদের হাত-পা বেধে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানা এলাকায় ফেলে চলে যায়।
এসময় ডাকাত দল ওই কর্মচারীদের কাছ থেকে ২৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এই ঘটনায় মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানীর ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজার বাদী হয়ে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানায় অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে, ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি ও ছায়াতদন্ত শুরু করে র্যাব ১১ সিপিসি ২। পরে দীর্ঘ অভিযানের পর সোমবার (৪ নভেম্বর) র্যাব পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় মূলহোতাসহ ৯ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ১১ সিপিসি ২।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিকালে কুমিল্লা নগরীর শাকতলা র্যাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব ১১ সিপিসি ২ এর কোম্পানী অধিনায়ক মাহমুদুল হাসান।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন, গাইবান্দা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বজ্রাকুঞ্চিবাড়ি এলাকার কাছু শেখের ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম (৩২), একই উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকার মোঃ নাসির আলীর ছেলে মোঃ সাজু মিয়া (৩৩), কালিরখামার গ্রামের গয়সল বেপারীর ছেলে মোঃ সাজু (৪৪), মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর এলাকার রবিউল আওয়ালের ছেলে মোঃ রিয়াদ (১৯), একই এলাকার আজিজুর রহমানের ছেলে মোঃ সজিব ৩৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার থানারকান্দি এলাকার তপদর হোসেনের ছেলে মোঃ রবিউল (২৬), মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার টেংরামারী এলাকার আলী আকবরের ছেলে মোঃ মানিক (৪০), নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর থানার দক্ষিণ কুলচরিত্র এলাকার আবুল কালামের ছেলে মোঃ রিপন সর্দ্দার (২৯)।
র্যাব অধিনায়ক মাহমুদুল হাসান বলেন, ডাকাতির ঘটনার পরপরই আমরা তদন্ত শুরু করি৷ পরে, ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত কয়েকজন ডাকাতদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। বিভিন্ন সূত্র ধরে, পরবর্তীতে সোমবার রাতে জেলার দাউদকান্দি টোল প্লাজা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মূলহোতাসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র্যাব৷ এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা, তিনটি র্যাবের জ্যাকেট, একটি নকল পিস্তল, একটি পিস্তল কভার, একটি স্বর্ণের চেইন, দুটি আংটি, একটি ইলেকট্রিক শকার, দুটি ওয়াকিটকি, সাতটি মোবাইল, দুটি র্যাব মনোগ্রামযুক্ত স্টিকার, একটি লাঠি, তিনটি টর্চলাইট, একটি ওয়ারলেস টকিং টুল, একটি হ্যান্ডকাফ, আটটি মানিব্যাগ, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি নোহা প্রাইভেটকার ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ করলে গ্রেপ্তারকৃতরা উক্ত ডাকাতির সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে স্বীকার করে। তারা ডাকাত দলের নেতা সাইফুলের নেতৃত্বে প্রায় ১/২ বছর ধরে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় র্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করে আসছিল বলে জানা যায়। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান ওই র্যাব কর্মকর্তা।
এসএস