ঢাকা: সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নানান উদ্যোগে উর্ধ্বমূখী ধারা বিরাজ করছে দেশের শেয়ারবাজারে। গত সপ্তাহ থেকে হঠাৎ বড় পতনে নতুন আশায় বুক বাধা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এখন হতাশায় ভুগছেন।
বিদায়ী সপ্তাহে চার কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৩৪.১৬ পয়েন্ট বা ২.১৪১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৩৪.৬৯ পয়েন্টে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবার বেশি হারে বাড়তে থাকায় দেশব্যাপী লকডাউন হতে পারে বলে গুজব বা গুঞ্জন রয়েছে বাজার-সংশ্নিষ্টদের মধ্যে। এটি দরপতনকে উস্কে দিয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন। যদিও সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, নতুন করে লকডাউন ঘোষণার কোনো পরিকল্পনা নেই।
শীর্ষস্থানীয় এক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা জানান, সংক্রমণ বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি সরকারকে লকডাউনের পরামর্শসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে। ইউরোপসহ কয়েকটি দেশেও নতুন করে লকডাউনে গেছে। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতি বাড়ছে। এ কারণে বড় বিনিয়োগকারীদের অনেকে শেয়ার বিক্রি করছেন। অযথা ভীত না হতে পরামর্শ দেওয়া হলেও তারা শুনছেন না, যা দরপতনকে উস্কে দিচ্ছে।
ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, আগাম সতর্কতা হিসেবে কিছু মানুষ স্রেফ 'ভীতি' থেকে শেয়ার বিক্রি করছেন। গত বছর লকডাউনে ব্যবসা-বাণিজ্যে সাময়িক স্থবির হলেও দ্রুতই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে এত ভীত হওয়ার কারণ আছে বলে মনে হয় না। এ ক্ষেত্রে গুজবই হলো মূল সমস্যা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব বড় বিনিয়োগকারীর হাত ধরে লেনদেনে গতি থাকে, তাদের বেশিরভাগই নিষ্ক্রিয়। এতে বাজারের গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে এমন শেয়ারগুলো দর হারাচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। এতে শেয়ার চাহিদা ও দর কমছে।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, এমন দরপতনের যৌক্তিক কারণ জানা নেই। তবে আবার লকডাউন ঘোষণা হতে পারে এবং এ কারণে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকতে পারে বলে গতকাল বাজারে গুজব ছড়িয়েছে। এ বিষয়ে বিএসইসির সুস্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে, ব্যাংকের লেনদেন চালু থাকলে যে কোনো অবস্থায় শেয়ারবাজারের লেনদেনও চালু থাকবে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে ২ হাজার ৬২৭ কোটি ৮৫ লাখ ৮২ হাজার ১২১ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের সপ্তাহ থেকে ১৬৮ কোটি ১১ লাখ ৯৭ হাজার ১২৫ টাকা বা ২৬.৯২ শতাংশ কম হয়েছে। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৫৯৫ কোটি ৯৭ লাখ ৭৯ হাজার ২৪৬ টাকার।
ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে ৬৫৬ কোটি ৯৬ লাখ ৪৫ হাজার ৫৩০ টাকার। আগের সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছিল ৭১৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৯ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে গড় লেনদেন ৬২ কোটি ২৩ লাখ ১০ হাজার ৩১৯ টাকা কম হয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৬৮টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৭২টির বা ১৯.৫৭ শতাংশের, কমেছে ২১০টির বা ৫৭.০৬ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৮৬টির বা ২৩.৩৭ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর।
বিদায়ী সপ্তাহে অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪১৪ পয়েন্ট বা ২.৫৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭৫০.১২ পয়েন্টে।
সোনালীনিউজ/এলএ/এমএইচ
আপনার মতামত লিখুন :