ঢাকা: চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ ২০২১) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গ্রামীণফোন লিমিটেড। এসময় কোম্পনিটি ৩,৪৮১ কোটি টাকা রাজস্ব অর্জন করেছে। তবে, আগের বছরের তুলনায় রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে ৩.৭ শতাংশ কম। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ১৭ লাখ নতুন গ্রাহক অর্জনে সফল হয়েছে। যার ফলে, বছর প্রতি ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এ প্রান্তিক শেষে গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৭ লাখ। এর মধ্যে ৪ কোটি ১৭ লাখ গ্রাহক অর্থাৎ মোট গ্রাহকের ৫১.৭ শতাংশ ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারকারী।
এবিষয়ে গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন,‘২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে বেশ কয়েকটি মাইল ফলক অর্জিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত নিলামে ১০.৪ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম অধিগ্রহণ করার ফলে গ্রামীণফোনের মোট স্পেকট্রাম এর পরিমাণ দাড়িয়েছে ৪৭.৪ মেগাহার্টজ। বাংলাদেশ এর স্বাধীনতার ৫০ বছরের পূর্তি করেছে। গ্রামীণফোনও এর ২৪ বছরের দীর্ঘ যাত্রা অতিক্রম করেছে। এ যাত্রায় ১৫,৫৯০টি টাওয়ারের মাধ্যমে দেশের সব থেকে বিস্তৃত ফোরজি/এলটিই নেটওয়ার্ক নিয়ে মানুষের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখার বিষয়ে নিজেদের প্রতিশ্রুতির পুনর্ব্যক্ত করছে গ্রামীণফোন। প্রথম প্রান্তিকে ১৭ লাখ নতুন গ্রাহক নিয়ে আমরা ৮ কোটি গ্রাহকের মাইল ফলক অর্জন করেছি। একই সাথে, বছর তুলনায় ৫০.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমাদের ফোর জি গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ১৫ লাখ।’
ইয়াসির আজমান আরো বলেন, ‘বাজার পরিচালন, উদ্ভাবন, সহজ সেবাও গ্রাহক স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়ে আমরা ধারাবাহিক ভাবে কাজ করছি এবং গ্রাহকদের সক্ষমতা বৃদ্ধিও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের পরিবেশ তৈরিতে আমাদের প্রযুক্তি গত উন্নয়নে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশের কোভিড ১৯ পরিস্থিতির কারণে আমরাও ক্রমবর্ধমান নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছি। বৈশ্বিক মহামারি রক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধারে আমরা সহযোগিতা মূলক সমাধান নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো। একই সাথে, আমরা আমাদের সেবার পরিধি সমৃদ্ধ করে যাবো এবং দেশের প্রবৃদ্ধিও ডিজিটালাইজেশনের যাত্রায় নিরলস কাজ করবো।’
গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিএফও ইয়েন্স বেকার বলেন, ‘প্রথম প্রান্তিকে এক হাজার ৫১০টি ফোরজি সাইট চালু, শক্তিশালী বাজার পরিচালন কার্যক্রমের ফলে আগের বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি গ্রাহক অর্জন এবং ডেটা ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে ৩.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমরা ভালোভাবে ২০২১ সাল শুরু করেছি। বাংলাদেশে কোভিড সংক্রমণের একবছর হয়ে গিয়েছে, এবং সংক্রমণের হার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে; যার ফলে, সরকার বর্তমানে বিধি নিষেধমূলক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ‘এ প্রান্তিকের শেষভাগে আমাদের মোট রাজস্বে আগের বছরের তুলনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ৩.৭ শতাংশ, যার ফলেই বিআইটিডিএ (পরিচালন আয়) মার্জিন দাঁড়িয়েছে ৬২.৭ শতাংশ। এসময়ে ২৫.৬ শতাংশ মার্জিন নিয়ে কর পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৮৯০ কোটি টাকা।’
২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে গ্রামীণফোন লিমিটেড ১০.৪ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম অধিগ্রহণ করেছে। নেটওয়ার্ক উন্নয়নে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৩৬১ কোটি টাকা (লাইসেন্সও লিজ ছাড়া)। গ্রামীণফোনের মোট সাইটের সংখ্যা ১৬,৮৫২টি। প্রতিষ্ঠানটি কর, ভ্যাট, ডিউটি, ফি, ফোরজি লাইসেন্স এবং তরঙ্গ বরাদ্দ ফি বাবদ ২,৭৩২কোটি টাকা সরকারি কোষগারে জমা দিয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের মোট রাজস্বের ৭৮.৫ শতাংশ।
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত গ্রামীনফোন ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য নগদ মোট ২৭৫ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন করেছে।
গত ১৯ এপ্রিল কোম্পানিটির ২৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এই লভ্যাংশ অনুমোদন দেয়া হয়।
পরিশোধিত মূলধনের ১৪৫ শতাংশ হারে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা ১৪ টাকা ৫০ পয়সা করে পাবেন। যার মধ্যে রয়েছে পূর্ববর্তী ১৩০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ দেয়া হয়েছে। এই হিসাবে ২০২০ সালে কর পরবর্তী মুনাফা দাঁড়ায় ৯৯.৮৬ শতাংশ।
কোম্পানিটির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৭ টাকা ৫৪ পয়সা। একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদের পরিমান (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ৩৮ টাকা ৫৯ পয়সা। শেয়ার প্রতি নীট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) ২৪ টাকা ৮৬ পয়সা।
সোনালীনিউজ/আরএইচ
আপনার মতামত লিখুন :