• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

৮০ হাজার দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে ঋণ সুবিধা দেবে গ্রামীণ আমেরিকা


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৬, ২০২১, ০৪:৪৫ পিএম
৮০ হাজার দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে ঋণ সুবিধা দেবে গ্রামীণ আমেরিকা

ফাইল ফটো

ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থা গ্রামীণ আমেরিকা ‘এলিভেটিং ব্ল্যাক উইমেন এনট্রাপ্রেনার্স’ নামে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০ হাজার দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে।

গ্রামীণ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘু দরিদ্র নারীদের ব্যবসায় পুঁজি সরবরাহ করে থাকে। সংস্থাটি জাতিগত সমতা অর্জনের প্রতিশ্রুতি ত্বরান্বিত করতে এই বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

এই কর্মসূচীর আওতায় নারীরা ঋণ পাবেন জামানতবিহীন। এর সঙ্গে দেওয়া হবে আর্থিক বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ। গত ১৩ মে গ্রামীণ আমেরিকা আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেয়।

দরিদ্র নারী উদ্যোক্তাদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তাদেরকে সরাসরি ঋণ প্রদানে সংস্থাটির যে কর্মপদ্ধতি তা এরই মধ্যে সফল ও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে গ্রামীণ আমেরিকা কার্যক্রম শুরুর পর এরই মধ্যে এক লাখ ৩৬ হাজারের বেশী দরিদ্র নারী উদ্যোক্তাকে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশী ঋণ প্রদান করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশী নারী উদ্যোক্তার কাছে ঋণ সুবিধা পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছে সংস্থাটি।

যুক্তরাষ্ট্রের ১৭টি নগরীতে অবস্থিত ২৪টি শাখার মাধ্যমে পরিচালিত গ্রামীণ আমেরিকার সামাজিক পুঁজি মডেল এরই মধ্যে কার্যক্রমের পরিধি, আর্থিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও সেবাগ্রহীতা সদস্যদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্কের কারণে একটি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে।

গ্রামীণ আমেরিকার হিসাব মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ঋণ সুবিধা ও পুঁজির স্বল্পতায় ভুগছেন এমন অন্তত ১৪ লাখ স্বনিয়োজিত দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ নারী উদ্যোক্তা গ্রামীণ আমেরিকা থেকে বিনা জামানতে পুঁজি ও অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি করতে পারবেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, কৃষ্ণাঙ্গ নারী উদ্যোক্তারা পদ্ধতিগত কারণে বহুকাল ধরে ঋণ ও পুঁজি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। গ্রামীণ আমেরিকা এই নতুন কর্মসূচির মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানে কাজ করবে।

এই লক্ষ্যে দ্য স্টুডিও@ব্লু মেরিডিয়ানের দেওয়া একটি সহায়তা তহবিলের মাধ্যমে গ্রামীণ আমেরিকা আগামী তিন বছরে নতুন শাখাগুলোতে একটি উদ্ভাবনশীল নেটওয়ার্ক চালু করবে। যা কৃষ্ণাঙ্গ নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ পুঁজি ও আর্থিক প্রশিক্ষণ প্রদানের মধ্যমে ব্যবসায়িক আয়, ক্রেডিট স্কোর, ব্যক্তিগত সঞ্চয় ও জীবনমান বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।

নতুন নেটওয়ার্কটি ২০২১ সালে মেমফিস, টেনেসি থেকে যাত্রা শুরু করবে এবং ক্রমান্বয়ে নেটওয়ার্কটিকে সুবিধাবঞ্চিত সংখ্যালঘু নারী উদ্যোক্তাদের এলাকাগুলোতে সম্প্রসারিত করা হবে।

এছাড়াও নিউ ইয়র্কের হারলেম ও নিউ জার্সির নিউয়ার্কের বর্তমান কর্ম এলাকায় কর্মসূচিটি চালু করা হবে। এরপর বৃহত্তর নিউ ইয়র্ক নগরী ও বৃহত্তর নিউয়ার্ক এলাকায় তা সম্প্রসারিত করা হবে। পুরো দেশটিতে কৃষ্ণাঙ্গ নারী উদ্যোক্তাদেরকে এই কর্মসূচির আওতায় আনতে বিভিন্ন কর্মসূচিগত সমাধান তৈরি ও বাস্তবায়ন করা হবে।

কর্মসূচির সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ আমেরিকার লক্ষ্য হবে পুনর্বিনিয়োগ ও ঋণ পুনঃপ্রদানের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০ হাজার কৃষ্ণাঙ্গ নারী উদ্যোক্তাকে সরাসরি ১৩০ কোটি ডলার ঋণ প্রদান করা।

এ বিষয়ে গ্রামীণ আমেরিকার প্রধান নির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রিয়া জাং বলেন, ‘এলিভেটিং ব্ল্যাক উইমেন এনট্রাপ্রেনার্স উদ্যোগটি পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ উদ্যোক্তা নারীদের জন্য জাতিগত ও আর্থিক সমতা নিশ্চিত করতে আমাদের প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন। দলগত পদ্ধতি অর্থাৎ গ্রুপ গঠনের মাধ্যমে ঋণদানের যে অনন্য মডেল ও অবকাঠামো আমরা গত ১৩ বছরে গড়ে তুলেছি তা ব্যবহার করে এই কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষ্ণাঙ্গ নারী ব্যবসায়ীদের কাঠামোগত অসমতার সমস্যাটি কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা যাবে বলে আমরা আশা করছি। যা একই সঙ্গে দেশজুড়ে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজ ও অর্থনীতিতে একটি মৌলিক পরিবর্তনের সূচনা করবে।’

গ্রামীণ আমেরিকার এলিভেটিং ব্ল্যাক উইমেন এনট্রাপ্রেনার্স বিভাগটি পরিচালনা করবেন এর বিভাগীয় প্রেসিডেন্ট অ্যালেথিয়া মেন্ডেজ। মেন্ডেজ ২০০৮ সালে গ্রামীণ আমেরিকায় যোগদান করেন। তিনি গ্রামীণ আমেরিকার জ্যাকসন হাইটস শাখার প্রথম কেন্দ্র ব্যবস্থাপক এবং সংস্থাটির জন্মলগ্ন থেকে এর সঙ্গে কাজ করে আসছেন।

মেন্ডেজ বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অন্য উদ্যোক্তারা যে সুযোগ পেয়ে থাকেন তা থেকে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের দুরে রাখার জাতিগত অসমতামূলক যে ব্যবস্থা, এলিভেটিং ব্ল্যাক উইমেন এনট্রাপ্রেনার্স তার একটি সমাধান। আমাদের টিমের কাজ হচ্ছে দেশ জুড়ে কৃষ্ণাঙ্গ নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ঘটাতে ও তাদের কমিউনিটিকে উদ্দীপ্ত করতে ব্যবসায়িক প্রতিভা ও মনোবলকে সহায়তা দিয়ে যাওয়া।’

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, গ্রামীণ আমেরিকার কো-চেয়ার এবং নোবেল লরিয়েট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এই কর্মসূচি জরুরি ভিত্তিতে শুরু করা উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ নারী উদ্যোক্তাদের ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়তা করতে আমাদের আর বিলম্ব করার সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের জন্য একটি সফল ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি তৈরি করে আমরা তাদেরকে দারিদ্রের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হওয়ার সেরকম সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারবো যা পৃথিবীর সর্বত্র গ্রামীণ ঋণগ্রহীতাদের বেলায় আমরা করেছি।’

গ্রামীণ আমেরিকা একটি অলাভজনক ক্ষুদ্রঋণ সংগঠন। নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০১ (সি)(৩) আইনে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

এই সংগঠনের লক্ষ্য, যুক্তরাষ্ট্রের দরিদ্র নারীদের পুঁজি সরবরাহ করে সফল ব্যবসা উদ্যোক্তায় পরিণত করা এবং এভাবে তাদের ও তাদের পরিবারের জন্য উন্নততর জীবন নিশ্চিত করা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটস কুইন্সে কার্যক্রম শুরু করার পর বর্তমানে অস্টিন, টেক্সাস; বোস্টন, ম্যাসাচুসেটস; ক্যামডেন, নিউ জার্সি; শার্লোট, নর্থ ক্যারোলাইনা; শিকাগো, ইলেনয়; ফ্রেসনো, ক্যালিফোর্নিয়া; হিউস্টন, টেক্সাস; ইন্ডিয়ানাপোলিস, ইন্ডিয়ানা; লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া; মায়ামি, ফ্লোরিডা; নিউয়ার্ক, নিউ জার্সি; নিউ ইয়র্ক সিটি, নিউ ইয়র্ক; ওমাহা, নেব্রাসকা; ওকল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়া; সান জোসে, ক্যালিফোর্নিয়া; ট্রেনটন, নিউ জার্সি; এবং ইউনিয়ন সিটি, নিউ জার্সিতে এর কার্যক্রম বিস্তৃত। সূত্র-ডেইলি স্টার

সোনালীনিউজ/এমএইচ

Wordbridge School
Link copied!