• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

এলডিসি উত্তোরণে নেগোশিয়েশনের দক্ষতা বৃদ্ধির আহ্বান


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৯, ২০২১, ০৬:০৩ পিএম
এলডিসি উত্তোরণে নেগোশিয়েশনের দক্ষতা বৃদ্ধির আহ্বান

ফাইল ফটো

ঢাকা: আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেগোশিয়েশনের দক্ষতা বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণ, মানবসম্পদ ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা উন্নয়ন, কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োজনীয় সংষ্কারের পাশাপাশি এর যথাযথ বাস্তবায়ন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুবিধা গ্রহণ, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা এবং সর্বোপরি সরকারী ও বেসরকারীখাতের একযোগে কাজ করা প্রভৃতি বিষয়গুলো বাংলাদেশের এলডিসি উত্তোরণের চ্যালেঞ্জ মোকবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন ডিসিসিআই আয়োজিত ‘স্বল্পোনত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তোরণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী আলোচকরা।
   
শনিবার (২৯ মে) বেলা ২টায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তোরণ : অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

স্বাগত বক্তব্যে, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, স্বল্পন্নোত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণের ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের অবস্থান আরো দৃঢ়কল্পে ব্যবসা-বাণিজ্য সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী। তিনি উল্লেখ করেন, এলডিসি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে খাত ও বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠন করতে হবে। ঢাকা চেম্বার সভাপতি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, বিনিয়োগ-ডিজিপি হার বৃদ্ধি, করহার-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধিও জন্য একটি রূপরেখা প্রণয়নের উপর জোরারোপ করেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ঘাটতি কমাতে রিজিওনাল কানেক্টিভিটিসহ কৌশলগত পিটিএ এবং এফটিএ স্বাক্ষরের উপর জোরারোপ করেন।

ডিসিসিআই সভাপতি উল্লেখ করেন, এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণের পরও সিএমএসএমই খাতের গুরুত্বের বিষয়টি নিরূপনকল্পে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিডা, এসএমই ফাউন্ডেশন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ঢাকা চেম্বার ‘এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণের পরবর্তী সময়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সিএমএসএমইদের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিতকরণ ও করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক একটি জরিপ পরিচালনায় আগ্রহী এবং এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেন।    

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, আমাদের উদ্যোগী জনগনের উদ্যোমের কারণে বাংলাদেশ আজ এলডিসি হতে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে এবং এলডিসি উত্তোরণের বিষয়টি নিয়ে ভীত হওয়ার কোন কারণ নেই। তিনি জানান, চীন একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও সারা পৃথিবীতে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছে।

তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব একটি বৃহৎ বাজার রয়েছে এবং দেশের নাগরিকদের আরো ভালো সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সকলকে কাজ করতে হবে এবং এলডিসি হতে উত্তরণের পরবর্তী সময়ে আমাদের পণ্য উৎপাদন ব্যয় খুব বেশি বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, তবে আমাদের কে প্রতিযোগী সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এশিয় ও আঞ্চলিক দেশেগুলোর বাজারের প্রতি আরো বেশি হারে মনোনিবেশ করার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

মুখ্যসচিব বলেন, পরিবেশ সুরক্ষা ও শিল্পায়নে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে, যার ফলে সারাবিশে^র ১০টি সেরা সবুজ কারখানার মধ্যে ৭টিই আমাদের দেশে রয়েছে। ড. কায়কাউস উল্লেখ করেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সকলের সহযোগিতা নিশ্চিতকল্পে ইতোমধ্যে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং আশা প্রকাশ করেন, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উক্ত কমিটি সঠিক দিক-নির্দেশনা প্রদানে সক্ষম হবে।    

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বেসরকারীখাতের অবদান থাকবে প্রায় ৮১% এবং এ অবস্থার আলোকে তিনি দেশীয় উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন। তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদেরকে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে, যদিও এজন্য বাংলাদেশের আরো পাঁচ বছর সময় রয়েছে। তিনি দেশের মানব সম্পদ ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা গ্রহণের জন্য সকলকে প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের প্রতি আরো বেশি হারে মনোনিবেশ করার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জানান, ২০২৬ সালের পর আরো ১২ বছর বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য সরকার ডব্লিউটিও-এর সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং ১১টি দেশের সাথে পিটিএ এবং এফটিএ চুক্তির জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।      

এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন সরকার ঘোষিত ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের উপর জোরারোপ করেন। তিনি নিটওয়্যার ও ওভেন শিল্পের ভ্যালু এ্যাডিশনের মাধ্যমে বিনিয়োগ আকর্ষনের প্রস্তাব করেন। এছাড়াও এলডিসি পরবর্তী সময়ে টিকে থাকার জন্য ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের আরো বিকাশ একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি সকল বিষয়ে বেসরকারীখাতের অংশগ্রহণের উপর জোরারোপ করেন।    

নির্ধারিত আলোচনায় এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর, ডব্লিউটিও-এর এলডিসি ইউনিট অফ দি ডেভেলপমেন্ট ডিভিশন-এর প্রধান তৌফিকুর রহমান, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতি’র সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন।

তৌফিকুর রহমান বলেন, গত ১ দশকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, তবে এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক আরো জোরদারের পাশাপাশি নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করার উপর জোরারোপ করেন। এছাড়াও তিনি গবেষণা কার্যক্রম সম্প্রসারণ, রপ্তানিমুখী পণ্যকে সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান।

মেট্রাপলিটন চেম্বার অব কমার্সে (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর বলেন, এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী সময়ে বেসরকারী খাতের উন্নয়নের সরকারের দিক-নির্দেশনা খুবই জরুরী, সেই সাথে সরকারী এবং বেসরকারীখাতের মধ্যে ডায়ালগ আরো বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণ আমাদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ, তবে এর জন্য আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করার আহ্বান জানান এমসিসিআই সভাপতি। এছাড়াও ডাটাবেইজ তৈরি, ডাটা বিশ্লেষনে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা উন্নয়ন, এবং সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে বলে তিনি মত প্রকশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অধীনে বাণিজ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য চীফ নেগোশিয়েটর নিয়োগ করারও প্রস্তাব করেন।

ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষনে আমাদেরকে র্দূনীতি কমানো এবং বিদেশে পুঁজি পাচার রোধ করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি রপ্তানিমুখী পণ্যের জন্য সহায়ক নীতিমালা প্রদানের পাশাপাশি বাংলাদেশের নতুন সমুদ্রসীমায় গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। তিনি কৃষিখাতের আধুনিকায়ন ও বহুমুখীখরনের উপর আরো বেশি জোরারোপ করেন।      

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন, এফসিএস, এফসিএ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ঢাকা চেম্বারের সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ উক্ত ওয়েবিনারে যোগদান করেন।

সোনালীনিউজ/আরএইচ

Wordbridge School
Link copied!