ঢাকা : রপ্তানিকারকসহ স্থানীয় বাজারে ১০ বছর ধরে ব্যবসারত যে কোনো কোম্পানির জন্য বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেবে সরকার। এমনকি শর্তপূরণে সক্ষম ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং এনজিও বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে।
এ লক্ষে ‘বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি বিনিয়োগ নীতিমালা ২০২১’ চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠাবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। পরে মন্ত্রিসভার অনুমোদন শেষে এটি কার্যকর করা হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, রপ্তানিকারকরা তাদের পূর্ববর্তী পাঁচ বছরের গড় রপ্তানি মূল্যের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত এবং অন্য কোম্পানি বা এনজিওগুলো তাদের সর্বশেষ নিরীক্ষিত ব্যালেন্স শিট অনুযায়ী নিট সম্পদের ২ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে। যে দেশে বিনিয়োগ করবে, সেই দেশের স্টক মার্কেটেও তালিকাভুক্ত হতে পারবে কোম্পানিগুলো।
তবে কোনো কোম্পানি এর চেয়ে বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হলে তার যৌক্তিকতা উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে বিনিয়োগের সুযোগ দেবে সরকার। তবে কোনো নির্দিষ্ট অর্থবছরে বাংলাদেশ হতে বিদেশে বিনিয়োগের মোট অর্থের পরিমাণ ওই বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৫ মতাংশের বেশি হবে না।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল ডকুমেন্ট। এজন্য আমরা আমাদের পক্ষ থেকে এটি চূড়ান্ত করার আগে যত বেশি সম্ভব অংশীদারদের সাথে পরামর্শ করছি। একবার এটি অনুমোদিত হয়ে গেলে, আমি মনে করি এটি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ করবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের একটি উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তৈরি করতেও সাহায্য করবে।
তিনি আরো বলেন, নীতিমালাগুলো এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিডা থেকে শিগগিরই এটি চূড়ান্ত করা হবে। কিন্তু একে অন্যান্য বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও যেতে হবে। আমরা এটি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠাব। সেখানে এটি যাচাই-বাছাই করা হবে এবং তাদের পক্ষ থেকে এটি চূড়ান্তকরণের জন্য একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের ব্যবস্থা করা হতে পারে। এরপর এটি মন্ত্রিসভার আলোচনা ও অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাবে। পুরো প্রক্রিয়াটিতে ডকুমেন্টটির পরিবর্তন, পরিমার্জন এবং পুনর্গঠনও হতে পারে। যদি মন্ত্রিপরিষদ এটিকে ঠিক মনে করে এবং অনুমোদন দেয়, তবে নীতিমালাগুলো গেজেটে প্রকাশ করা হবে।
বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা নির্ধারণ হিসেবে নীতিমালার তৃতীয় সংশোধিত খসড়ায় বলা হয়েছে, যে কোনো কোম্পানির আগের ৫ বছরের নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী নিট মূলধন ৫ মিলিয়ন ডলার হতে হবে। তবে এসএমইর ক্ষেত্রে ব্যাংকের দেওয়া সচ্ছলতা সনদের ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
কোনো প্রতিষ্ঠান বিদেশে যে খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, সেইখাতে প্রতিষ্ঠানটির ন্যূনতম ৩ বছরের ব্যবসা বা উৎপাদনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই ৩ বছরের মধ্যে কমপক্ষে দুবছর লাভজনক হতে হবে। তবে তথ্য-প্রযুক্তিখাতের উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে এটি শিথিলযোগ্য হবে।
আমদানি দায় থাকা, ঋণ খেলাপি কিংবা রাজস্ব অপরিশোধিত থাকা কোনো কোম্পানি বিদেশে বিনিয়োগ সুবিধা পাবে না। আর বিনিয়োগের নামে তহবিল অপচয় করলে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে।
নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, বিদেশে বিনিয়োগের আবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশ করতে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি থাকবে। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় অনুমতি দেবে। তবে ১ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশের প্রয়োজন হবে না।
এতে আরো বলা হয়েছে, বিদেশে বিনিয়োগের জন্য অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে অবস্থিত মূল প্রতিষ্ঠান কিংবা বাংলাদেশ ও বিনিয়োগকৃত দেশে অবস্থিত বাণিজ্যিক ব্যাংক হতে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। প্রাথমিকভাবে ঋণ ও মূলধনের অনুপাত ৭০:৩০ হারে ঋণ গ্রহণ করা যাবে।
বিদেশে বিনিয়োগ করা প্রকল্পের অর্থায়নের বিপরীতে বাংলাদেশের করপোরেট বা ব্যক্তিগত গ্যারান্টি বা বাংলাদেশে অবস্থিত অন্য কোনো স্থাবর সম্পত্তির গ্যারান্টিও দেওয়া যাবে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :