• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া

টিসিবির ট্রাকে ক্রেতার ভিড়


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৫, ২০২১, ১০:২১ পিএম
টিসিবির ট্রাকে ক্রেতার ভিড়

ঢাকা : বিগত এক বছর ধরে দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। এতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা পণ্যের চাহিদা অনেক বেড়েছে। আর টিসিবির পণ্য কিনতে ট্রাকের সামনে ভোর থেকে লাইন ধরছে মধ্য ও নিম্নবিত্তের হাজারো মানুষ। তবে এসব লাইনে মানা হচ্ছে না সামাজিক বা শারীরিক দূরত্বের বিধিনিষেধ।

টিসিবির পণ্য কিনতে ক্রেতারা ফজরের নামাজের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও ট্রাক আসে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে। তখন লোকজন হুড়োহুড়ি দৌড়াদৌড়ি করে আবার নতুন করে লাইনে দাঁড়ায়। এতে ঠেলাঠেলি ধাক্কাধাক্কিও হয়। তবে অনেক স্থানে স্থানীয় আইন শৃংখলাবাহিনী স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্থাৎ সামাজিক দূরত্ব মেনে ক্রেতাদের লাইনে দাঁড় করাচ্ছেন।

বাজারে নিত্যপণ্যের আগুন দাম। প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়লেও মানুষের আয় বাড়েনি। তাই টিসিবি খোলা ট্রাকে বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছেই। বরং করোনায় আয় কমেছে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের।

এই অবস্থায় প্রয়োজনের সাথে আপোষ করেই টিকে থাকতে হচ্ছে অনেককে। যদিও সরকারি হিসাবে সব নিত্যপণ্যের উৎপাদনই চাহিদার চেয়ে বেশি। অথচ বাজারে দাম আকাশ ছোঁয়া। যার কোনো হিসাব মিলছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যবিত্তের আধিপত্যের কারণে চোখের পলকেই খালি হয়ে যাচ্ছে টিসিবির ট্রাক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে বেশির ভাগ ক্রেতাকে। এ অবস্থায় দাবি উঠছে টিসিবির পণ্য সরবরাহ বাড়ানোর।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই সব সামগ্রী শেষ হয়ে যায়।

বুধবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে বংশাল প্রধান সড়কের সামনে ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু করেন এক ডিলার। বেলা ২টার মধ্যেই ট্রাকে মজুত তেল ও ডাল শেষ হয়ে যায়। চিনি শেষ হয়ে যায় ৩টার মধ্যে। পণ্য শেষ হওয়ার পরও ছিল নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন।

এ ডিলার বলেন, আগে টিসিবির লাইনে নিম্নবিত্ত মানুষেরই প্রাধান্য ছিল বেশি। কিন্তু সম্প্রতি মধ্যবিত্তের ভিড় বাড়তে থাকে। এখন দৃশ্য এমন হয়েছে যে নিম্নবিত্তের চেয়ে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যাই বেশি।

রামপুরা এলাকার ডিলারের প্রতিনিধিরা জানান, টিসিবির পণ্য মধ্যবিত্তরাই বেশি কিনছেন। প্রতি লিটার তেলের দাম ১০০ টাকা। শুধু ৫০০ টাকায় ৫ লিটারের এ বোতল তেল কেনার সামর্থ্য তো নিম্নবিত্তদের নেই। এখন দেখা যায়, বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত ক্রেতাই একসঙ্গে পাঁচ লিটার তেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য সর্বোচ্চ পরিমাণে কিনে নেন। আগে শতকরা ২০ জন ক্রেতা মধ্যবিত্ত থাকলে এখন শতকরা ৮০ জনই মধ্যবিত্ত।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে কথা হয় আনামুল হকের সঙ্গে। পেশায় ব্যবসায়ী আনামুল বলেন, করোনার কারণে ব্যবসায় ক্রমাগত লোকসান হয় আসছে। আগে দুটো দোকান ছিল। এখন একটি চালাচ্ছি। লকডাউনে রোজগার বন্ধ ছিল। ওই সময় ধারদেনা করে চলতে হয়েছে। এখন লকডাউন না থাকলেও ব্যবসা খুব মন্দা, তার মধ্যে পূর্বের ঋণ শোধ করতে হয়। তাই অর্থ সংকটের পরেই টিসিবির ট্রাক থেকে কম টাকায় নিত্যপণ্য কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি।

পরিবারে পাঁচ সদস্য নিয়ে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় এক নারী গুণে গুণে পাঁচ টুকরা মাছ রান্না করছেন। অথচ দুই মাস আগেও মাছ কিনতেন এক কেজি। এখন আধা কেজিতে তাকে প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে।  নিম্নবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্তের মানুষরা প্রয়োজনের সাথে আপস করলেও দেশে নিত্যপণ্যের যোগান বা উৎপাদন কোনোটাতেই কোনো ঘাটতি নেই।

২০২০-২০২১ সালে মাছের উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪৬ লাখ মেট্রিক টন। পেঁয়াজের উৎপাদন ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার মেট্রিক টন। অথচ চাহিদা ২৬ লাখ মেট্রিক টন। শাক-সবজির উৎপাদন এক কোটি ৯৭ লাখ এক হাজার টন। আলুর উৎপাদন এক কোটি ছয় লাখ টন। কিন্তু চাহিদা ৮০ লাখ মেট্রিক টন।

একটু কম দামে ভোগ্য পণ্য কিনতে টিসিবির খোলা ট্রাকে স্বস্তি খুঁজছে মানুষ। সেখানেও চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষার পর দেখা মিলছে টিসিবির ট্রাকের। রাজধানীর বংশাল এলাকায় লাইনে দাঁড়ানো নারী সাবিনা আক্তার তিন মাসের শিশু সন্তান বাসায় রেখে এসেছেন টিসিবির পণ্য কিনতে।

তিনি জানালেন, পাঁচ সদস্যের পরিবারে উপর্জনক্ষম মাত্র একজনই। বিগত তিন বছরে তার আয় বাড়েনি কিন্তু সঙ্কট দিন দিন বাড়ছে। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে তাকেই খুঁজতে হয় একটু কম মূল্যের পণ্য।   

অন্যদিকে টিসিবির স্বল্প পরিমাণ পণ্যতে অনেকেরই আবার প্রয়োজন মিটছে না। পরিমাণ কম, তাই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অনেক ক্রেতাকে। তাই টিসিবির ট্রাকে পণ্যের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে ক্রেতারা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!