• ঢাকা
  • শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ বাড়াতে সুকুক বন্ডে কর রেয়াতের সিদ্ধান্ত


নিজস্ব প্রতিনিধি অক্টোবর ১৭, ২০২১, ০৯:৫২ এএম
শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ বাড়াতে সুকুক বন্ডে কর রেয়াতের সিদ্ধান্ত

ফাইল ছবি

ঢাকা : শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ বাড়াতে শরিয়াহভিত্তিক সুকুক বন্ডে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছে সরকার। এ লক্ষ্যে সঞ্চয়পত্রের মতো ব্যক্তি পর্যায়ে শরিয়াহভিত্তিক সুকুক বন্ডে বিনিয়োগে আয়কর রেয়াতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) একটি চিঠি দিয়েছে। যদিও সুবিধাটি পেতে বিনিয়োগকারীদের আগামী অর্থবছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার ইস্যুকৃত সুকুক বন্ডে কিছু ব্যক্তি করদাতা বিনিয়োগ করেছেন। কোনো ব্যক্তি করদাতা সরকারি সিকিউরিটিজ যেমন ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করলে আয়কর রেয়াত পান। সুকুকও ট্রেজারি বন্ডের মতো সরকারের একটি ইসলামি সিকিউরিটিজ। কিন্তু ব্যক্তি করদাতাদের সুকুকে বিনিয়োগকে আয়কর রেয়াতযোগ্য হিসাবে বিবেচনার বিধান চালু হয়নি। তাই ট্রেজারি বন্ডের মতো সুকুকে বিনিয়োগকৃত অর্থকে রেয়াতযোগ্য হিসাবে বিবেচনা করা সমীচীন।

তথ্যমতে, ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে নগদ অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিডিএমসি) সভা হয়। এতে সুকুক বন্ডের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আয়কর রেয়াত ও ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়া হয়েছে।

এনবিআরের আয়কর নীতি অণুবিভাগের সদস্য আলমগীর হোসেন এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, সিডিএমসির সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যেহেতু কর আরোপ ও প্রত্যাহার সংসদের এখতিয়ার। তাই সুকুক বন্ডে কর রেয়াত সুবিধা দিতে হলে আগামী বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

জানা যায়, বর্তমানে সঞ্চয়পত্রসহ ৯টি খাতে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত পাওয়া যায়। একজন করদাতা বছরের মোট আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ বা দানকে কর রেয়াতযোগ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এর বেশি বিনিয়োগ করলে অতিরিক্ত অংশের কর রেয়াত পাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে করদাতার বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকার কম হলে বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ কর ছাড় পাওয়া যাবে। আর আয় ১৫ লাখ টাকার বেশি হলে ১০ শতাংশ হারে কর ছাড় পাওয়া যাবে। 

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন ব্যক্তি বছরে মোট ৮ লাখ টাকা আয় করেন। এ টাকা থেকে ২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনলেন। অর্থাৎ মোট আয়ের ২৫ শতাংশের মধ্যেই আছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ। আর আয়সীমাও ১৫ লাখ টাকার মধ্যে আছে। তাই বিনিয়োগ করা ওই দুই লাখ টাকার ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩০ হাজার টাকা কর রেয়াত পাবেন বিনিয়োগকারী।

যেসব খাতে বর্তমানে বিনিয়োগ করলে কর ছাড় পাওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে- জীবন বীমার প্রিমিয়াম; সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা; স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা; কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বীমা তহবিলে চাঁদা; সুপার এনুয়েশন ফান্ডে প্রদত্ত চাঁদা; সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে বছরে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা ডিপোজিট করলে; সঞ্চয়পত্র ক্রয়; স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিভেঞ্চারে বিনিয়োগ; সরকার অনুমোদিত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করলে কর ছাড় পাওয়া যায়।

সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ সংগ্রহের অংশ হিসাবে গত অর্থবছর দেশে প্রথমবারের মতো সুকুক বন্ড ইস্যু করা হয়। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যৌথভাবে এ বন্ড ছেড়েছে। ৮ হাজার কোটি টাকার এই বন্ডের অর্থ দুই দফায় বাজার থেকে তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ অর্থ সরকারের পানি পরিশোধন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এর মুনাফার হার ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও এসব বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকার কিনতে হবে।

শরিয়াহভিত্তিক অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাপী সুকুক বন্ড বেশ জনপ্রিয়। গত বছরের শেষ পর্যন্ত সুকুক বন্ডের স্থিতির পরিমাণ ছিল ৫৮ হাজার কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০ লাখ কোটি টাকা।

এর মধ্যে মালয়েশিয়া সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে। বিশ্বব্যাপী মোট বিনিয়োগের ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ। সৌদি আরবের ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ, তুরস্কের ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, কুয়েতের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৬ দশমিক ১ শতাংশ, ইরানের ৪ দশমিক ৭ শতাংশ, কাতারের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং বাহরাইনের ২ দশমিক ৬ শতাংশ।

বাজারে এ বন্ডের চাহিদা থাকায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, হল্যান্ড, সিঙ্গাপুরও সুকুক বন্ড ইস্যু করেছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক ও আইএফসিও এ বন্ড ইস্যু করেছে।

সোনালীনিউজ/এমএইচ

Wordbridge School
Link copied!