ঢাকা : সারা দেশে আগের তুলনায় এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গ্রাহকের আস্থা বেড়েছে। এলাকায় এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন গ্রাহকরা। এজেন্ট শাখায় বাড়ছে আমানত ও ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সবচেয়ে বেশি মানুষ আমানত রেখেছেন ইসলামী ব্যাংকে। বেশি ঋণ নিয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংকের আউটলেটগুলো থেকে।
এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২২ সালের মার্চ প্রান্তিকের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে এজেন্ট শাখাগুলোর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৬ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৬১ কোটি টাকা (৬৩.২৪ শতাংশ) বিতরণ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
একই সময়ে গ্রাহকরা ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখাগুলোতে আমানত রেখেছে ৯ হাজার ৭২২ কোটি টাকা (৩৮.৬৩ শতাংশ)। এছাড়া রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্সও এনেছে ব্যাংকটি। চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকটির এজেন্ট শাখাগুলোতে ৪৪ হাজার ১৬৫ কোটি টাকার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গ্রামীণ পর্যায়ে যারা ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিলেন এজেন্ট শাখাগুলোর মাধ্যমে তারাও ব্যাংক সেবার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। রেমিট্যান্সও আসছে সহজে। ঋণও পাওয়া যাচ্ছে। বলা যায় ব্যাংকিং হচ্ছে ঘরের কাছেই।
এ বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংক এশিয়া গ্রামীণ জনপদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে ২০১৪ সাল থেকে কাজ করছে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে ভূমিকা রাখছে এজেন্ট শাখাগুলো। সামনের দিনে আরো পরিসর বাড়বে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের।
গত এক বছরে এজেন্ট শাখাগুলোতে গ্রাহক বেড়েছে ৪১ লাখ ৭০ হাজার। তিন মাসে বেড়েছে ১১ লাখেরও বেশি। এখন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক ছাড়িয়েছে এক কোটি ৫১ লাখ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী সমপ্রতি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট, ঋণ, আমানত ও রেমিট্যান্স সংগ্রহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এজেন্ট শাখাগুলোতে আমানত হিসেবে জমা আছে ২৫ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। এই শাখাগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৬ হাজার ৪২১ কোটি টাকা।
এছাড়া, মার্চ পর্যন্ত এজেন্টের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৪ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা রাখছে এজেন্ট ব্যাংকিং। প্রযুক্তিনির্ভর ও সাশ্রয়ী এ সেবায় গ্রাহকরা এজেন্ট আউটলেটে আঙুলের স্পর্শেই হিসাব পরিচালনা করতে পারছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এখন ২৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ১৪ হাজার ১৬৬টি এজেন্টের আওতায় ১৯ হাজার ৫৩০টি আউটলেটে এ সেবা দিচ্ছে। ২০২১ সালের মার্চ শেষে আউটলেট ছিল ১৬ হাজার ৪২১টি। এক বছরে বেড়েছে ৩ হাজার ১০৯টি।
২০২১ সালের মার্চে আমানত ছিল ১৭ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। এক বছরে বেড়েছে ৭ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা।
আবার মার্চ শেষে ৬৪২ কোটি ১৪ লাখ টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে এজেন্ট আউটলেট থেকে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ঋণ দেওয়া হয়েছিল ৫৩৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ১০৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
জানা গেছে, বিশ্বে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ব্রাজিলে। বাংলাদেশে চালু হয় ২০১৪ সালে। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংক এশিয়া পাইলট প্রকল্প হিসেবে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য আরো বলছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আউটলেট রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের। সবচেয়ে বেশি একাউন্ট রয়েছে ব্যাংক এশিয়ার।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :