• ঢাকা
  • শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

শরীয়তপুরের মাছচাষিদের ৫০০ কোটি টাকা ব্যবসার স্বপ্ন


শরীয়তপুর প্রতিনিধি জুন ১৯, ২০২২, ০৩:৩৪ পিএম
শরীয়তপুরের মাছচাষিদের ৫০০ কোটি টাকা ব্যবসার স্বপ্ন

শরীয়তপুর : পদ্মাসেতু উদ্বোধনের অপেক্ষার প্রহর গুণছেন শরীয়তপুরের মৎস্য খামারিরা। আগে যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের মাছ ঢাকায় নেওয়া ছিল কষ্টকর ও ব্যয়বহুল। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের অন্যতম মৎস্য উৎপাদনকারী শরীয়তপুর জেলার মৎস্য খাতের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।

আগামীতে জেলায় এ মৎস্য ব্যবসা প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা খামারি ও মৎস্য বিভাগের। এতে মৎস্য উৎপাদনকারীরা শুধু অর্থনৈতিক ভাবেই লাভবান হবেন না , তৈরি হবে অনেক নতুন উদ্যোক্তা, সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ।

জেলার খামারি ও মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানাযায়, জেলার ৬টি উপজেলা থেকেই মাছ সড়ক পথে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু ফেরিঘাটে যানজটে পড়ে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় বিনষ্ট হয় অনেক মাছ, ন্যায্য মূল্য পায়না তারা। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে আমুল পরিবর্তন আসবে মৎস্য ব্যবসায়। বাড়বে মাছের দাম ও সাশ্রয় হবে পরিবহন খরচ ও সময় । যার সুফল পাবে পাইকার থেকে শুরু করে প্রান্তিক জেলেরাও।বর্তমানে ঢাকা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বাজারে বছরে প্রায় ৩১৫ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হলে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন খামারিরা।

শরীয়তপুর সদরের মৎস্য খামারি মোঃ শাহীন মাদবর বলেন, রাজধানী ঢাকা থেকে স্থান ভেদে শরীয়তপুরের দূরত্ব ৭৩ কিলোমিটার। এরমধ্যে পদ্মা নদী থাকায় ফেরি পার হয়ে ঢাকায় যেতে অনেক সময় লাগে ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ কারণে শরীয়তপুরের মৎস্য খামারিরা তাদের উৎপাদিত মাছ কাঙ্খিত মূল্যে ঢাকায় বিক্রি করতে পারছে না। তাই তারা চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে মাছ বিক্রি করে আসছিলেন। বর্তমানে শরীয়তপুর থেকে ওই বাজারগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৭০ মেট্রিক টন মাছ পাঠানো হয়। প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে ওই মাছের বাজারমূল্য এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বছরে বিক্রি দাঁড়ায় ১২৬ লাখ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য অন্তত ৩১৫ কোটি টাকা। তবে পদ্মাসেতু চালু হলে উৎপাদন বেড়ে বিক্রি ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের পাচক গ্রামের মৎস্য খামারি শহিদুল ইসলাম সিকদার বলেন, ফেরিঘাটের বিড়ম্বনার কারণে আমরা ঢাকায় মাছ পাঠাতে পারছি না। তাই চাঁদপুরে পাঠাই। পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের এ অঞ্চলের মাছচাষিরা ঢাকার বাজার ধরতে পারবেন। এতে করে পরিবহন ব্যয় কমবে ও দাম বেশি পাওয়া যাবে।

নড়িয়া পৌরসভার লোনসিং গ্রামের মাছের খামারি শহিদুল ইসলাম বাবু রাড়ী বলেন, ঢাকার বাজারে মাছ বিক্রি করতে পারলে আমরা বেশি লাভবান হবো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকায় মাছ পাঠানো সহজ হবে। ফলে এ খাতে বিনিয়োগ অনেকগুণ বাড়বে।

শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার বলেন, প্রতিবছর জেলায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ভালো বাজারের অভাবে খামারিরা খুব বেশি লাভের মুখ দেখতে পারছেন না। পদ্মা সেতু চালু হলে খামারিরা খুব সহজেই ঢাকার বাজার দখল করতে পারবেন।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে শরীয়তপুরে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে জেলায় ব্যাপক শিল্পায়নের প্রস্ততি চলছে। পদ্মা সেতু চালু হলে সম্ভাবনাময় খাত মৎস্য, গবাদিপশু, পরিবহন, শিক্ষা-সংস্কৃতির ব্যাপক উন্নয়ন হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!