• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

কোরবানির অজুহাতে দাম বাড়ছে পেঁয়াজের


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২, ২০২২, ১০:১০ এএম
কোরবানির অজুহাতে দাম বাড়ছে পেঁয়াজের

ঢাকা : আসন্ন ঈদুল আজহায় পেঁয়াজের চাহিদা বাড়বে সেই সুযোগে দাম আরো বাড়তে পারে আশায় পর্যাপ্ত উৎপাদন ও নিয়মিত সরবরাহ থাকার পরও বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম।

সূত্র জানিয়েছে, অতিবৃষ্টি, বন্যা এবং ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) মেয়াদ শেষ হওয়ায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। আমদানিকারকদের কাছে আইপি না থাকায় তারা পেঁয়াজ আমদানি করতে পারছে না বিধায় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি আপাতত বন্ধ আছে। ব্যবসায়ীদের দাবি ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। এই সুযোগটি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ঈদুল ফিতরের পর থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন দেশি পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়তে শুরু করছে। ঈদুল আযহার আগে দাম আরো বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় দিনাজপুরের হিলি বন্দরের খুচরা বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের দামপ্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। গত দুদিন আগে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রয় হয়েছে ৩০ টাকা কেজি দরে। এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রয় হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।

জানতে চাইলে পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মাজেদ জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। গত দুদিনের ব্যবধানে পাইকারিতে কেজিপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দুইদিন আগে মানভেদে পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলাম ৩০-৩৫ টাকা, সেটি এখন ৪০-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। জানতে চাইলে কাওরানবাজারের ব্যবসায়ী এখলাস উদ্দিন জানান, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়লে খুচরা বাজারে দাম বাড়বে এটি খুবই স্বাভাবিক। তবে এই সময়ে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার সুযোগ নাই। কারণ দেশে এবার পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। তিনি আরো জানান, দেশে পেঁয়াজের বাজারে প্রভাব বিস্তার করে ভারতীয় পেঁয়াজ। কোনোভাবে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি এক ঘণ্টা বন্ধ থাকলেই স্থলবন্দরে এর প্রভাব পড়ে। আর সেটি এসে পড়ে দেশের প্রতিটি বাজারে। চাহিদা ব্যাপক কিন্তু সরবরাহ নাই এমন অজুহাত দিয়ে সুযোগটি নেয় পাইকারি ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে তার প্রভাব এসে পড়ে খুচরা বাজারে। এবারো তেমন হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর রশিদ জানিয়েছেন, ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। নতুন করে আইপি ইস্যু করছে না কর্তৃপক্ষ। তাই এই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ঈদুল ফিতরের পর পরই ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন দেশি পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ কিছুটা কমেছে। ফলে দাম বাড়তে শুরু করছে। ঈদুল আযহার আগে দাম আরো বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে দাম কমে আসবে। হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য সব সময় প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তারা।

তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার কৃষকের স্বার্থেই এই মুহূর্তে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার পক্ষে। কৃষকের লাভের কথা চিন্তা করে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কৃষকের পরিবর্তে এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছেন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার সুফল পাচ্ছেন না কৃষকরা। দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের সরবরাহ থাকার পরও কোনও কারণ ছাড়াই পাইকারি ব্যবসায়ীরা কেজিতে ১০ টাকা বাড়ি দিয়েছে। এতে কৃষকরা কোনোভাবেই লাভবান হচ্ছেন না। বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিৎ। সরকারকে এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে। তা না হলে সামনে ব্যবসায়ীরা আরো সুযোগ নিতে পারে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী হেমায়েত আলী বলেন, বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেক বেড়েছে। বর্তমানে খুচরা বিক্রি করছি ৫০ টাকা কেজি দরে। দুদিন আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে।

উল্লেখ্য, দেশে বছরে পেয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ মেট্রিক টন। প্রতিবছর শুধু রমজান মাসেই চাহিদা থাকে ৪ থকে ৫ লাখ মেট্রিক টন। স্থানীয়ভাবে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৭ থেকে ২৫ শতাংশ পচে যায়। যা স্বাভাবিক। ভারত থেকে প্রতিবছর ৬ থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।

এদিকে দিনাজপুরের বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোকামে দাম বাড়ায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।দিনাজপুর বাহাদুর বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা নাইম ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, সামনে কোরবানির ঈদ। এর আগেই বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে এক কেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। সেটা আজ কিনলাম ৪০ টাকা দিয়ে।

বাহাদুর বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা মাজেদুর রহমান বলেন, বর্তমানে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না। আমাদের পেঁয়াজ আনতে হচ্ছে নাটোর ও পাবনার মোকাম থেকে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও মোকামেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। পাবনার পেঁয়াজ মোকামেই প্রতি মণ কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে। এজন্য পরিবহন খরচ ও সামান্য লাভ রেখে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, বর্তমানে বাজার বৃদ্ধি থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন। দিনাজপুরে পেঁয়াজের উৎপাদন কম হওয়ায় পাবনা ও নাটোরের ওপর নির্ভর করতে হয় ব্যবসায়ীদের। তাই সেখানে পেঁয়াজের দাম বাড়লে এর প্রভাব পড়ে এই জেলাতে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!