• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

বর্তমানে নতুন ফান্ড আনা বড় চ্যালেঞ্জ : ইস্তাক শিমুল


নিজস্ব প্রতিনিধি মার্চ ৫, ২০২৩, ০৭:০২ পিএম
বর্তমানে নতুন ফান্ড আনা বড় চ্যালেঞ্জ : ইস্তাক শিমুল

ইস্তাক আহম্মেদ শিমুল, ছবি : সোনালীনিউজ

ঢাকা : দেশের শেয়ারবাজারে চলছে উত্থান-পতন। বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে মন্দাভাব কাটছে না। এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস দিয়েও যেন থামাতে পারছে মন্দাভাব। এতো চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সব শেষ নতুন ট্রেক পাওয়া ব্রোকার হাউজগুলোর মধ্যে একটি থ্রিআই সিকিউরিটিজের ব্যবসায়িক পরিস্থিতি, গত এক বছরে তাদের প্রাপ্তি বা সামনের দিনগুলোতে কি ধরণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে এসব বিষয়ে সোনালী নিউজের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ইস্তাক আহম্মেদ শিমুল। সাক্ষাৎকার নিয়েছে সোনালী নিউজের স্টাফ রিপোর্টার আবদুল হাকিম।

সোনালী নিউজ : প্রথম বছরে থ্রিআই সিকিউরিটিজের অর্জন কি?

ইস্তাক আহম্মেদ শিমুল : বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নতুন বিনিয়োগ আনা। সব কিছু শর্তেও আমরা প্রথম বছরে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ আনতে সক্ষম হয়েছি। এটা সিইও হিসেবে আমার প্রথম টার্গেট ছিলো যা বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে বাজার মন্দা থাকায় বিনিয়োগ পাওয়া বা পুরনো বিনিয়োগকারীদের ফান্ড বৃদ্ধি করানো খুবই কঠিন কাজ। যারা ইতোমধ্যে বিনিয়োগ করেছে তারা বলে যেটা আছে সেটাই থাক। বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগ করতে কোনভাবেই রাজি নয় তারা। যাদের আগের ফান্ড আছে তারা ফান্ড বৃদ্ধি করতেছে না। যেটা বাজারে আছে সেটা তুলে নিতে পারলে বাঁচে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। 

সোনালী নিউজ: বর্তমান সময়ে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পরিপূর্ণভাবে কমপ্লায়েন্স মেনে চলা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন?

ইস্তাক আহম্মেদ শিমুল : ব্রোকার হাউজে যদি কমপ্লায়েন্স ম্যানটেইন করে তাহলে দুর্নীতিমুক্ত থাকা সম্ভব। ব্রোকার হাউজের দুইটা কাজ গুরুত্বপূর্ণ, প্রথমটা হলো গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট রক্ষণাবেক্ষণ করা দ্বিতীয় হলো সিডিবিএলের সঙ্গে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে শেয়ার ঠিক আছে কিনা ম্যাইনটেন করা। এই বিষয়গুলো ঠিক থাকলে বাকি যেসমস্ত সমস্যা আছে সেগুলো খুব বড় সমস্যা তৈরি করতে পারবে না। ইতোমধ্যে সিডিবিএল একটি প্রশংসনীয় কাজ করেছে। প্রতি মাসে ১ তারিখে তারা অ্যাকাউন্টের তথ্য বা আপডেট তথ্য গ্রাহককে পাঠায়, এটা কিন্তু বড় একটা উপকারি উদ্যোগ বিনিয়োগকারীদের জন্য। হতাশার দিক হলো আমরা এখনো এসমস্ত বিষয়গুলোর সঙ্গে অভ্যস্ত না। সিডিবিএলের চেয়ারম্যান আক্ষেপ করে একটা কথা বলেছেন, যে শতাংশেও ভাগ করা যাচ্ছে না এতো কম লোক আপডেট দেওয়া তথ্যগুলো খুলে দেখে। অথচ যে সকল বিনিয়োগকারীরা নিয়মিত ট্রেড করে না এবং যারা ব্রোকার হাউজেও আসে না তাদের উচিত প্রতিমাসে সিডিবিএলের দেওয়া তথ্যটা দেখা। তাহলে তার শেয়ার ঠিক আছে কিনা বুঝতে পারবে। সন্দেহ থাকলে তাৎক্ষণিক সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারবে। কিন্তু সেটাও করছে না। তাই আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। যত সচেত থাকা যাবে ততটা তার বিনিয়োগ নিরাপদ থাকবে।

ইস্তাক আহম্মেদ শিমুল, ছবি : সোনালীনিউজ

সোনালী নিউজ: বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগের নিরাপত্তায় ব্রোকার হাউজ কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন?

ইস্তাক আহম্মেদ শিমুল : যে কোন ব্রোকার হাউজের কতৃপক্ষ সৎ থাকলে, সেখানে কারো বিনিয়োগ হারানোর ভয় নেই। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ওই ব্রোকার হাউজের পরিচালক বা কতৃপক্ষ কতটুকু সৎ। এখন পর্যন্ত যতগুলো ব্রোকার হাউজ বলেছে দূর্নীতির জন্য তাদের কর্মচারীরা দায়ী এটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ দায়িত্বশীল ব্যক্তি সৎ থাকলে সেখানে অন্য কেউ অপরাধ করতেই পারে না। সুযোগটা থাকে তখন যখন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অসৎ হয় বা দুর্নীতিবাজ হয়। সেখানে তার কর্মকর্তা কর্মচারীরাও এই সুযোগটা নেয়। এজন্য সৎ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোন বিনিয়োগকারীর টাকা হারানোর ভয় কম থাকে।

সোনালী নিউজ: বিনিয়োগকারীদের টাকার নিরাপত্তায় সতর্কতার জন্য আপনার কি পরামর্শ থাকবে?

ইস্তাক আহম্মেদ শিমুল : বিনিয়োগকারীদের আমি একটি কথাই বলবো। যেকোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আপনি যে মাধ্যমেই টাকা দেন না কেন। ক্যাশ বা ব্যাংকের মাধ্যমে বা রিয়েল-টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) অথবা বাংলাদেশ ইলেকট্রনি ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন) সঙ্গে মানি রিসিটটা বুঝে নিবেন অথরাইজড স্বাক্ষরসহ। এটা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি বিশ্বাস ভিন্ন বিষয় কিন্তু টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে এটা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

ইস্তাক আহম্মেদ শিমুল, ছবি : সোনালীনিউজ

সোনালী নিউজ: প্রথম বছরের টার্গেট পূরণ করেছেন এবার নতুন কি পরিকল্পনা করছেন?

ইস্তাক আহম্মেদ শিমুল : কোম্পানির যাত্রা শুরু থেকে আমার টার্গেট ছিল ১০০ কোটি টাকার পোর্টফোলিও গঠন করা, সেটা হয়েছে এটা অনেক বড় প্রাপ্তি। এরপর এখন গুরুত্ব দিবো কোয়ালিটি সার্ভিসের দিকে। কারণ ভালো সাপোর্ট না পেলে বিনিয়োগকারীরা থাকবে না। যারা আছে হয়তো তারাও চলে যাবে। এটা হওয়াটাও স্বাভাবিক কারণ গ্রাহকের চাহিদার আলোকে কাজ করতে না পারলে তারা আপনার প্রতিষ্ঠানে থাকবে কেন? এজন্য আমাদের সার্ভিসের মান বাড়াবো। পাশাপাশি ২০২৩ সালে বড় একটা কাজ হবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আনা। বেশ কয়েকটা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের জন্য কাজ করছি। ইতোমধ্যে কথা হয়েছে আশা করছি সেটা সফল হবো। এখন পর্যন্ত আমি যেসব ফান্ডগুলো পেয়েছি সব নতুন বিনিয়োগ। এমন না যে কোথাও থেকে লিঙ্ক করে বা অন্যভাবে নিয়ে আসছি। ফ্রেশ ফান্ডের সুবিধা হচ্ছে বেশি ট্রানজেকশন করা যায়। কিন্তু কোন লিঙ্ক ফান্ডে সেটা পারবো না কারণ বর্তমান সময়ে শেয়ারের দর কমায় সবার শেয়ার ক্রয় মূল্যের নিচে নেমে আছে। এই অবস্থায় লেনদেন করা সম্ভব না। তাহলে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিয়মতো কম দামে কেনা বেশি দামে বিক্রি করা তবেই গ্রাহক লাভবান হবে।

সোনালী নিউজ: ব্রোকার হাউজে কমিশন কম বেশি নিয়ে আপনি কি বলবেন?

ইস্তাক আহম্মেদ শিমুল : প্রথম বিষয় হচ্ছে আমরা বিনিয়োগ করি লাভের আশায়। তবে পুঁজি টিকিয়ে রেখে তবেই লাভ করতে হবে। এজন্য আগে বিশ্বস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে হবে| ভালো ব্রোকার হাউজে বিনিয়োগ করতে হবে। দেখা গেছে, কম কমিশন নেয় এজন্য এমন একটা হাউজে গেলেন এরপর দেখলেন আপনার পুঁজিই নেই। আবার আরেক জন দেখা যায়- এমন হাউজে গেছে সেখানে কমিশন বেশি কিন্তু পুঁজি হারায়নি। তাহলে কোনটা ভালো অবশ্যই কমিশন বেশি হলেও পুঁজি ধরে রাখতে সবাই চাইবে। এজন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ না যে কত টাকা কমিশন। আপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে ব্রোকার হাউজটা কতটা নিরাপদ বা বিশ্বস্ত। 

সোনালী নিউজ : বর্তমানে বাজার খারাপ যাচ্ছে এমতাবস্থায় ব্রোকার হাউজের জন্য কতটুকু চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন?

ইস্তাক আহম্মেদ শিমুল : বর্তমান সময়ে বা কিছুদিন আগেও বাজারে যে লেনদেন হয়েছে বা হচ্ছে সেটা হতাশাজনক। কারণ ব্রোকার হাউজগুলো চলে লেনদেনের উপর কমিশন পায় সেটা দিয়ে। এখন লেনদেন যদি এতো কম হয় তাহলে কিভাবে তারা প্রতিষ্ঠানের ব্যয় চালাবে। এটা বাজারের জন্য যতটা খারাপ, ততটাই মন্দা অবস্থা ব্রোকার হাউজের জন্য। তবুও আমি বলবো বাজার ভালো হলে সবাই প্রফিট করবে খারাপ হলে লস করবে। কিন্তু একটা খরাপ অভ্যাস আমাদের আছে সেটা হলো টার্গেট ভিত্তিক ট্রেডার বা ট্রেড টার্গেট দিয়ে সিইও নিয়োগ। এটা কখনো কাম্য নয়। কারণ মার্কেট ভালো হলে এরা ভালো করতে পারে কিন্তু মার্কেট খারাপ হলে এদের টার্গেট পুরণ করতে গিয়ে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এই পন্থা থেকে আমাদের ব্রোকার হাউজগুলো ফিরে আসা দরকার।

সোনালীনিউজ/এএইচ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!