• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
ব্রয়লার প্রতারণা 

ভোক্তার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেল কারা?


লাইজুল ইসলাম মার্চ ২৯, ২০২৩, ০৯:২৪ পিএম
ভোক্তার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেল কারা?

ঢাকা: দেশে বড় চাহিদা রয়েছে ব্রয়লার মুরগীর। নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সবার আমিষের চাহিদা মেটে এই ব্রয়লার মুরগীর মাংস দিয়ে। কিন্তু হঠাৎ করে এর দাম বৃদ্ধি পায় লাফিয়ে লাফিয়ে। ১২০ টাকা কেজির মুরগী কয়েক ধাপে দাম বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হতে থাকে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। কিছুদিন আগেও এই দামে বিক্রি হচ্ছিলো ব্রয়লার মুরগী।

তথ্য বলছে, ছোট ফার্মগুলোর একটি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদেনে খরচ ১৬০ ও বড় মিলগুলোর খরচ ১৪০ টাকা। কিন্তু এর থেকে অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়েছে ব্রয়লার মুরগী। পুরো লাভটাই নিয়ে গেছে কর্পোরেট ফার্মিংয়ের সঙ্গে জড়িতরা। 

পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের দাবি, গত দুই মাসে প্রায় হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে ব্রয়লার মুরগির করপোরেট ব্যবসায়ীরা। এতে বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পরেছেন সাধারণ ক্রেতারা। কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে কর্পোরেট কারসাজিতেই মুরগীর দামে আগুন লাগে বলে দাবি সংগঠনটির।   

গত কয়েকদিনে অবশ্য কমেছে ব্রয়লার মুরগীর দাম। প্রতিদিন ১০ টাকা করে কমছে। এতে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগীর দাম দাঁড়িয়েছে ১৯০ টাকা। এতে কিছুটা বাজারে স্বস্তি এসেছে। কিন্তু গত দুই মাসে ব্রয়লার মুরগীর দাম নিয়ে যে নৈরাজ্য চলেছে তার কি হবে? এই দুই মাসে সাধারণ ভোক্তাদের পকেট কেটেছে কে? এটাই খোঁজ করে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ দাম আসলে কে বৃদ্ধি করেছে তাই ধরতে পারেনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তারা কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করেনি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেই সমস্যার সমাধান করেছেন তারা। 

বিভিন্ন বাজারে গিয়ে অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কিন্তু তাদের সঙ্গে চোর পুলিশ খেলা খেলেছেন ব্যবসায়ীরা। যখন বাজারে ভোক্তার অভিযান চলেছে তখন মুরগীর দাম ছিলো এক ধরনের আর ভোক্তার অভিযান শেষে হয়ে যাওয়ার পর দাম আরেক ধরণের।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দাম তারা বৃদ্ধি করেনি। বেশি দামেই কিনতে হয়েছে তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়েছিলো ব্রয়লার মুরগী। 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পোল্ট্রি মুরগী ব্যবসায়ীরা বলেন, আগে একজন মানুষ বাজারে আসলে মুরগী কিনতেন ৫টি বা ৬ থেকে ৮ কেজি। কিন্তু এখন তা কমে গেছে। অনেকে মুরগীর গিলা-কলিজা কিনেই চলে যান। মুরগীর এই অস্বাভাবিক দামে তারও সমস্যা পরেছেন। সিন্ডিকেট করে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।

মুরগীর উৎপাদন মূল্য ও বিক্রির মূল্যের যে ব্যবধান তা তুলে ধরে বানিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানে ৮টি সুপারিশ করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, একটি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে ছোট খামারিদের খরচ ১৪০ ও বড় খামারিদের ১৬০ টাকা। কিন্তু বাজারে ২৮০ টাকা। এটা হতে পারে না। এই বিষয়গুলো সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। তারপরই দাম কমতে শুরু করেছে। 

বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, একটি হিসেবে দেখা গেছে ৫২ দিনে প্রায় হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। দুই হাজার টন মুরগির দাম ধরা হয়েছে এই হিসেবে। প্রতি কেজিতে যদি ৬০ টাকা করে লাভ করে তাহলে এই ৫২ দিনে অতিরিক্ত লাভ করেছেন ৬২৪ কোটি টাকা। প্রতিদিন ২৫ লাখ বাচ্চা উৎপাদন হয় খামারগুলোতে। সেখানে প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা বেশি ধরলে ৩১২ কেটি টাকা। সব মিলিয়ে কর্পোরেট মাফিয়া চক্র হাতিয়ে নিলো ৯৩৬ কোটি টাকা। 

তবে কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা বলছেন এই মুনাফাটা মধ্যসত্বভোগীরা করছেন। কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা দেড় থেকে তিন মাস মুরগী লালন পালন করে। তারা এখানে এতটা লাভ করে না। আর মধ্যসত্বভোগীরা এক রাতেই ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ করে নিচ্ছে। এতে কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!