ঢাকা: দেশের বাজারে আমদানি পণ্য আসায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে। পাঁচদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৩৫-৪০ টাকা কমে এখন ৬০-৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। স্বস্তি এসেছে সবজির দামেও। পটল ও ঢেঁড়সের কেজি ৫০ টাকার মধ্যে এসেছে। তবে স্বস্তি ফিরেনি মাছ ও আদার দামে।
শুক্রবার (৯ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
আগের তুলনায় বেড়েছে মাছের দাম। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, লোডশেডিংয়ের কারণে বরফ সংকট দেখা দিয়েছে। এতে মাছের সংরক্ষণ খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দামে।
এদিকে পেঁয়াজের দাম কমলেও বাজারে আদার দাম কমছে না। প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। বিশেষ করে চীন থেকে আমদানি করা আদার দাম বেশি। মসলার বাজারে আরও কিছু পণ্যের দামে ঊর্ধ্বমুখী। জিরার কেজি ৯০০ টাকা। মাসখানেক আগেও জিরার কেজি ছিল ৬০০ টাকা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরাপর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আরও কম। ভারতীয় এ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
ভারতের পেঁয়াজ আসায় প্রতিদিন দাম কমছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকারও বেশি কমে গেছে। আমদানি বেশি হলে দাম হয়তো আগের মতো হবে। ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে কিনতে পারবেন ভোক্তারা।
অন্যদিকে মুদি বাজারে ক্রেতার কাছে চিনি এখনো ‘তেতো’। বাজারে কোথাও কোথাও প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। বড় বাজারগুলোতে খুচরা ব্যবসায়ীরা খোলা চিনি বিক্রি করছেন ১৩৫ টাকা দরে। পাড়া-মহল্লার বেশিরভাগ মুদি দোকানে চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। যেখানে সরকার খুচরাপর্যায়ে খোলা চিনির কেজি ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দর ১২৫ টাকা নিধার্রণ করে দিয়েছে।
এদিকে, চিনি নিয়ে খোদ খুচরা বিক্রেতারাই উষ্মা জানিয়েছেন। হাজীপাড়ার ভাই ভাই স্টোরের একরামুল ইসলাম বলেন, কোম্পানি চিনি দেয় না। পাইকারি বাজার থেকে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। অথচ চিনির দাম নিয়ে ক্রেতারা আমাদের কথা শোনান। তারা বেশি দিতে চান না। অনেক সময় বাগবিতণ্ডা হয়। এ কারণে চিনি বিক্রি বন্ধ রাখি। শুধু রেগুলার কাস্টমারকে (নিয়মিত ক্রেতা) দেয়।
গত রমজানে ২৫০ টাকায় ঠেকেছিল ব্রয়লার মুরগির দাম। ঈদের পর তা কিছুটা কমে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। শুক্রবার অনেক বাজারে তার চেয়েও ১০ টাকা কমে, অর্থাৎ ২১০-২২০ টাকা দরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লারের সঙ্গে সোনালি জাতের মুরগির দামও কমেছে। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও ৩০০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দামে তেমন কমেনি। বড় বাজারে ডজন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। পাড়া-মহল্লার দোকানে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
কয়েকমাস চড়া সবজির বাজার কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতায় এসেছে। গ্রীষ্মকালীন বেশিরভাগ সবজি এখন ৫০ টাকার মধ্যে। সজনে, কাকরোল, বরবটি, কচুর লতিসহ কয়েক ধরনের সবজি এখনো ৭০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে আলুর দামে পরিবর্তন দেখা যায়নি। ৪০ টাকার আশপাশে আটকে আছে আলুর কেজি, যা বছরের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি।
মাছের বাজারে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।মাছের বাজারের বিক্রেতা আবু হানিফ মিয়া বলেন, ‘কয়েকদিন লোডশেডিংয়ে বরফের দাম বেড়েছে। এ কারণে সব ধরনের মাছ কেজিতে প্রায় ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
বাজারে ‘সস্তা মাছ’ হিসেবে পরিচিত তেলাপিয়া ও পাঙাসের দামও বেড়েছে। এ দুই ধরনের মাছের দাম এখন প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা।
অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের রুইয়ের দাম প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা। এ মাছের দামও গত সপ্তাহের চেয়ে এখন কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া পাবদা, বোয়াল, চিতল, আইড় ও ইলিশ মাছের যে দাম, তা শুধু নিম্নবিত্ত নয়, নিম্ন-মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে চলে গেছে। এসব মাছ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।
সোনালীনিউজ/এএইচ/আইএ