ঢাকা : বিশ্ববাজারে তেলের দাম গতকাল আবারও কমেছে। এ নিয়ে টানা দুই সপ্তাহ তেলের দাম কমল। গত সপ্তাহে সৌদি আরব নিজে থেকে তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেও বাজারে তেলের দামের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। মূলত চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি কমে যাওয়ার কারণে তেলের চাহিদা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ১৭ ডলার কমে দাঁড়ায় ৭৪ দশমিক ৭৯ ডলারে। সেই সঙ্গে ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ১২ ডলার কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ১৭ ডলারে।
তবে চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ধীরগতির সঙ্গে আরেকটি বিষয় তেলের দাম কমার পেছনে কাজ করেছে। সেটি হলো, গত বৃহস্পতিবার এই খবর ছড়িয়ে পড়ে যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পারমাণবিক চুক্তি প্রায় আসন্ন। এ খবরে বৃহস্পতিবারের পর অপরিশোধিত তেলের উল্লিখিত দুই মানদণ্ডের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৩ ডলার করে কমে যায়। তবে উভয় দেশ এই সংবাদে সত্যতা অস্বীকার করলে দাম আবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়।
ইউবিএসের বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাওনোভো বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবারের ঘটনায় দেখা যায়, তেলের বাজার কতটা ভঙ্গুর। সৌদি আরবের উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণায় তেলের দাম কিছুটা বেড়ে গেলেও ইরানের তেল আবার বাজারে ঢুকবে—এমন খবরে দাম অনেকটা পড়ে যায়। বড় বড় তেলের ভান্ডারের মজুত না কমলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীরা তেমন কিছুই করবে না।’
ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সৌদি আরব নিজে থেকে তেল উৎপাদন আরও হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে গত সপ্তাহে তেলের দাম কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তেল কোম্পানিগুলোর স্টকের মূল্যবৃদ্ধি ও চীনের রপ্তানি তথ্য-উপাত্তের প্রভাব বাজারে পড়েছে।
ইউএস ব্যাক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের জ্যেষ্ঠ বিনিয়োগ কৌশলবিদ রব হওয়ার্থ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল শুরু হতে যাচ্ছে। শুরু হবে গাড়ি চালানোর মৌসুম; ফলে ওই সময় উত্তর গোলার্ধের মানুষের তেলের চাহিদা কেমন থাকবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।’
এদিকে গত মে মাসে চীনের কারখানা ফটকে পণ্যের মূল্য সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে কমেছে। মূলত চাহিদা কমার কারণেই এটি ঘটেছে।
আবার অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ১৩-১৪ জুন অনুষ্ঠেয় মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকে নীতি সুদহার বৃদ্ধি না করলে তেলের দাম বাড়তে পারে। ফেডের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে সৌদি আরব পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
তবে এত কিছুর পরও বিশ্ববাজারে তেলের দাম ৮০ ডলারের নিচে থাকা সৌদি আরবের জন্য হতাশাজনক।
এদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের এক সংবাদে বলা হয়েছে, বাজেট-ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উচ্চাভিলাষী অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে অপরিশোধিত তেলের দর প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারের ওপরে রাখা সৌদি আরবের জন্য জরুরি।
যদিও গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এসব করে সৌদি আরব তেলের দাম বড়জোর ১ থেকে ৬ ডলার বাড়াতে পারে। কিন্তু তাতে ভোক্তাদের তেমন কিছু আসবে–যাবে না, অথবা যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসোলিনের দাম সে কারণে রাজনৈতিকভাবে হুমকিতে পড়বে না। কারণ, সে দেশের পাম্পগুলোয় তেলের দাম এমনিতেই গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম।
বিশ্লেষকেরা বলেন, রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশটি যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি চাঙা রাখতে বাজারে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল ছাড়ছে। ফলে বাজারে তেলের অভাব হচ্ছে না। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথগতির কারণে, বিশেষ করে চীনের শ্লথগতির কারণে তেলের তেমন দাম বাড়ছে না।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :