ঢাকা : বিদায়ি ২০২২ সালে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে ৫৯ কোটি মার্কিন ডলার। শতকরা হিসাবে যা ২০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে দেশে এফডিআই এসেছে ৩৪৮ কোটি ডলার। আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে যা ছিল ২৮৯ কোটি ডলার। তবে নতুন বিনিয়োগ বাড়লেও বিনিয়োগের স্টক কমেছে। সামগ্রিকভাবে বিশ্বে বিনিয়োগ কমেছে। আর একক দেশ হিসাবে বিনিয়োগে এগিয়ে রয়েছে চীন ও কম্বোডিয়া।
এ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ায় বেড়েছে ২০ শতাংশ। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সংস্থাটির ওয়েব সাইটে বুধবার এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে। এটি ইতিবাচক। তবে এই সংখ্যা এখনও সন্তোষজনক নয়।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের খারাপ অবস্থা। এর মূল কারণ অবকাঠামোগত সমস্যা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অন্যতম। বর্তমান অবস্থায়, বিনিয়োগ বাড়ানো অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। কারণ বিদেশিরা অনেক কিছু দেখে বিনিয়োগ করে।
এর মধ্যে অন্যতম হলো, বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস (সহজে ব্যবসা করা সংক্রান্ত) রিপোর্ট। এটি রিপোর্টে বাংলাদেশকে আরও ভালো করতে হবে।
বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি : প্রতিবেদনে মোট বিনিয়োগকে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে নতুন বিনিয়োগ, কোম্পানির আয় পুনরায় বিনিয়োগ এবং কোম্পানিগুলোর মধ্যে নিজস্ব ঋণ। প্রতিবেদন অনুসারে, আগের বছরের ২৮৯ কোটি ডলারের বিপরীতে এবার ৩৪৮ কোটি ডলার মোট এফডিআই এসেছে। এছাড়াও ২০২০ সালে বিনিয়োগ এসেছিল ২৫৬ কোটি ডলার, ২০১৯ সালে ২৮৭ কোটি, ২০২৮ সালে ৩৬১ কোটি এবং ২০১৭ সালে ২১৫ কোটি ডলারে এফডিআই এসেছে।
চ্যালেঞ্জ : আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তিনটি চ্যালেঞ্জকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় জমির অভাব, অবকাঠামো স্বল্পতা এবং বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুইং (বিজনেস সহজ ব্যবসা করার সূচক) র্যাংকিং বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকা। বর্তমানে ১৯০টি দেশের মধ্যে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬।
দক্ষিণ এশিয়ার বিনিয়োগ পরিস্থিতি : প্রতিবেদন অনুসারে আলোচ্য সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ৫ হাজার ৭৩৭ কোটি ডলার বিনিয়োগ এসেছে। আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে যা ছিল ৫ হাজার ২৬৮ কোটি। আলোচ্য বছরে ভারতে এফডিআই এসেছে ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ডলার। আগের বছরের চেয়ে যা ১০ শতাংশ বেশি। পাকিস্তানে, শ্রীলংকা এবং আফগানিস্তানে বিনিয়োগ কমেছে। তবে বিনিয়োগ বেড়েছে নেপালে ও মালদ্বীপে।
বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিস্থিতি : প্রতিবেদন আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালে সারা বিশ্বে মোট এফডিআই এসেছে ১ ট্রিলিয়ন ৩ ডলার। কিন্তু ২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। ২০১৮ সালে এ বিনিয়োগ ছিল ১ দশমিক ৩৭ এবং ২০১৭ সালে ১ দশমিক ৬৪ ট্রিলিয়ন ডলার।
শীর্ষ দেশ : আঙ্কটাডের রিপোর্টে অনুসারে ২০২২ সালেও সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮৫ বিলিয়ন ডলার। তবে প্রথম অবস্থানে থাকলেও যুক্তরাষ্টে আগের বছরের চেয়ে বিনিয়োগ কমেছে। আগের বছর দেশটিতে এফডিআই ছিল ৩৮৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে এফডিআইতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল চীন। দেশটিতে এ সময়ে বিনিয়োগের পরিমাণ ১৮৯ বিলিয়ন ডলার। আগের বছর যা ১৮১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে বিনিয়োগ ৮ বিলিয়ন বেড়েছে। তৃতীয় সিঙ্গাপুর ১৩১ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ১৪১ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। চতুর্থ অবস্থানে হংকং, ১৪০ ডলার থেকে কমে ১১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে ব্রাজিল ৫১ থেকে বেড়ে ৮৬ বিলিয়ন ডলার, অস্ট্রেলিয়া ২১ থেকে ৬২ বিলিয়ন, কানাডা ৬৬ থেকে ৫৩, ভারত ৪৫ থেকে ৪৯, সুইডেন ২১ থেকে ৪৬ বিলিয়ন এবং ফ্রান্সে বিদেশি বিনিয়োগ ৩১ থেকে ৩৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। সূত্র : যুগান্তর
সোনালীনিউজ/এমটিআই