• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নিয়ন্ত্রণ নেই ডিমের দামে


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২০, ২০২৩, ০৯:১৯ এএম
নিয়ন্ত্রণ নেই ডিমের দামে

ঢাকা: মাসের পর মাস ধরে ডিম নাগালের বাইরে থাকছে। ফলে সহজলভ্য এই প্রাণিজ আমিষ খেতে পারছেন না নিম্ন আয়ের মানুষ। শুধু ডিম নয়, চড়া মাছ ও মাংসের বাজারও। ফলে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষও বিপাকে রয়েছে। 

ছোট ও মাঝারি খামারিরা বলছেন, ডিমের দাম নির্ধারণে তাদের ভূমিকা নেই। বাজারে ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে উঠেছে। তারা যে দাম ঠিক করে দেয়, সেই দরেই বিক্রি হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ১৩ আগস্ট ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে না এলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।

একই দিন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, দেশে যে ডিমের উৎপাদন, তাতে সঠিক ব্যবস্থায় বিন্যাস হলে আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই।

মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর বাজারে অভিযান চালানো শুরু হয়। কিন্তু ডিমের দাম কমেছে ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এখন বড় বাজারে এক ডজন ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দাম ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। পাড়া–মহল্লার মুদিদোকান থেকে এক হালিডিম কিনতে হচ্ছে ৫৫ টাকায়। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে ডিমের দাম অনেকটাই কম।

পাকিস্তানের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ১৭ আগস্ট দেশটিতে প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল প্রায় ২৯৪ রুপি। তাতে প্রতিটি ডিমের দাম পড়ে ২৪ দশমিক ৪৭ রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৯ টাকার মতো।

মূল্যস্ফীতিতে জর্জরিত শ্রীলঙ্কায় ডিমের দাম বাংলাদেশের চেয়ে এখন বেশি। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে, ১৮ আগস্ট সেখানে একটি ডিমের দাম ছিল ৪১ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪ টাকার কিছু কম। অবশ্য কয়েক দিন আগেই বাংলাদেশের মানুষকে একটি ডিম ১৫ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে।

বছরজুড়ে ডিমের দাম সাধারণত ১০০ টাকার আশপাশে থাকত। তবে ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ সময় ডিমের ডজন ১৫০ টাকার আশপাশে ছিল।

কেন নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না, জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় একটি অনুষ্ঠানের থাকার কথা উল্লেখ করে পরে কথা বলবেন বলে জানান। কিন্তু আর সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এমদাদুল হক তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে ফোন রেখে দেন।

ডিমের মূল্যবৃদ্ধির জন্য তিনটি বিষয়কে দায়ী করছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা: ১. পোলট্রি খাবারের মূল্যবৃদ্ধি। ২. উৎপাদন কমে যাওয়া। ৩. বাজারে কারসাজি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মূলত ডিমের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। আগস্টে ডজন ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর পর থেকে কখনো দাম ১০ টাকা বেড়েছে, কখনো কমেছে, কিন্তু বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

বাজারে কারসাজি কীভাবে হয় তার উদাহরণ দিলেন নরসিংদীর মরজাল মাঝারি খামারের মালিক ফারুক আহমেদ। তিনি জানান, ১২ হাজার মুরগির খামারটি থেকে তিনি দিনে ১০ হাজারের মতো ডিম পান। সর্বশেষ গত শুক্রবার তিনি খামার থেকে ডিম বিক্রি করেছেন। ওই দিন মরজাল এলাকার খামারিরা প্রতিটি ডিমের দাম পেয়েছেন ১০ টাকা ৭০ পয়সা।

তিনি আরো বলেন, ঢাকার ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন খুদে বার্তা (এসএমএস) দিয়ে ডিমের দাম জানিয়ে দেন। ওই দামে ডিম বিক্রি করতে চাইলে স্থানীয় মিডিয়াম্যান (মধ্যস্থতাকারী) খামারে গাড়ি নিয়ে আসেন। দাম বাড়তি চাইলে ডিম নেন না। তিনি আরও বলেন, খামারিরা দাম কম পেলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি মুনাফা করেন। এ কারণে ক্রেতাকে ১৪ টাকা দিয়ে ডিম কিনতে হয়।

একই ধরনের বক্তব্য দেন জয়পুরহাটের ছোট খামারি মেজবাউল মারফি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিম বাজারে নিয়ে গেলে আমাদের যে দাম দেওয়া হয়, সেই দামেই বিক্রি করতে হয়।’

এআর

Wordbridge School
Link copied!