ঢাকা: পোশাক খাতে চলমান অস্থিরতায় এখন পর্যন্ত ২৫টি ফ্যাক্টরিতে ভাঙচুরের ঘটনা এবং ১৩০টি ফ্যাক্টরি বন্ধ আছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
রোববার (১২ নভেম্বর) দুপুরে উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান।
বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, মজুরি বৃদ্ধির পরও আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় কারখানা ভাঙচুর করা হচ্ছে। মজুরি ঘোষণার পর থেকে বেশ কিছু কারখানায় অজ্ঞাতপরিচয় কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক অযৌক্তিক দাবিতে বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করে কর্মকর্তাদের মারধর করেছে, কারখানার ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলো এ ব্যাপারে আমাদেরকে ভিডিও ফুটেজ দিয়েছে, মামলার কপিও আমাদেরকে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা যখন বৈশ্বিক ও আর্থিক চাপের মধ্যে থেকেই টিকে থাকার সংগ্রাম করছি, ঠিক তখন শিল্পকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা অপতৎপরতা। বিশেষ করে আমাদের শান্ত শ্রমিক গোষ্ঠীকে উসকানি দিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আশুলিয়া, কাশিমপুর, মিরপুর ও কোনাবাড়ি এলাকার প্রায় ১৩০টি পোশাক কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে কারখানার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেসব কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করতে আগ্রহী, সেগুলোতে কাজ চলছে। তাদের কাজ চলমান থাকবে। দুঃখের বিষয় যে, যখন মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কাজ করছিল, তখনও কারখানা ভাঙচুর, কারখানায় অগ্নি-সংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
ফারুক হাসান বলেন, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার ৮৮৫টি পোশাক কারখানা বিজিএমইএ এর সদস্যপদ গ্রহণ করলেও কালের পরিক্রমায় ৩ হাজার ৯৬৪টি সদস্য কারখানা বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ২ হাজার ৯২১টি সদস্য কারখানার মধ্যে ২ হাজার ৩৩৯টি কারখানা বিজিএমইএ-তে তাদের সদস্যপদ নবায়ন করেছে। এই ২ হাজার ৩৩৯টি সদস্য কারখানার মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৬০০টি সদস্য কারখানা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার এনে কাজ করছে। অর্থাৎ আমাদের এ মুহূর্তে সরাসরি রপ্তানিকারক কারখানার সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ৬০০টি।
তিনি আরও বলেন, সদস্যপদ নবায়ন করা ২ হাজার ৩৩৯টি কারখানার মধ্যে ১ হাজার ৬০০ কারখানা বাদে বাকি কারখানাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানা বিভিন্ন ব্যাংক দেনা ও দায়ের কারণে সরাসরি ব্যাক-টু-ব্যাক খুলতে পারছে না। ফলে তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার নিতে পারছে না। এই সদস্য কারখানাগুলো মূলত সাব-কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে। অবশিষ্ট কারখানাগুলো ব্যাংক দেনা ও আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে তারা আগামীতে দেনা পরিশোধ করে ব্যবসায় ফিরে আসতে ইচ্ছুক।
বিভিন্ন সংকটের কারণে শিল্পের উত্থানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বন্ধ কারখানার সংখ্যাও বাড়ছে। শুধু করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২১ সালে বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা ৩১৭টি এবং পরবর্তীতে অন্যান্য কারণে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে না পারার কারণে ২৬০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে, বলেও জানান বিজিএমইএ সভাপতি।
ওয়াইএ