ঢাকা: তীব্র গ্যাস সংকটে নাকাল নারায়ণগঞ্জের রপ্তানিমুখী নিট পোশাক কারখানাগুলো। সংকট উত্তরণে নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিকেএমইএ জরুরি সভা করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিকেএমইএ’র সভাপতি সেলিম ওসমান বলেছেন, গ্যাস সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে কারখানা বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
ক্ষতি পোষাতে না পেরে মালিকরা কতদিন কারখানা চালু রাখবেন তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। যে কোনো সময় কারখানা বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শিল্প-কারখানার প্রায় তিন লাখ শ্রমিক চাকরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন।
কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে গ্যাসনির্ভর ছয় শতাধিক শিল্প-কারখানা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অনেক কারখানা নির্বাচনের কারণে পণ্য রপ্তানি করতে পারেনি। অন্যদিকে জানুয়ারি মাসের বেতন দেওয়ার সময় চলে আসছে। একইসঙ্গে বেতন বাড়ানোর চাপও রয়েছে। এ অবস্থায় কারখানা বন্ধ করে দিতে পারেন মালিকরা।
ফতুল্লার বিসিক এলাকার এসরোট্যাক্স গ্রুপের ডাইং ম্যানেজার উবায়দুল বলেন, ‘কয়েক মাস ধরেই আমরা গ্যাস পাচ্ছি না। গত কয়েকদিন ধরেই একেবারেই গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে আমাদের ডাইংয়ের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় চলছে। বিগত ১০ বছর ধরে আমি ডাইং সেক্টরে আছি। কখনো এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি।’
ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘গ্যাস সংকটের কারণে কোনো কাজই করতে পারছি না। আমাদের পণ্য উৎপাদন করতে হয় প্রতিদিন দেড় লাখ। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১০-১৫ হাজার। এজন্য আমরা শিপমেন্ট করতে পারছি না। অবস্থা খুব খারাপ।’
বায়ার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘কারখানাগুলো সঠিকভাবে গ্যাস পাচ্ছে না। যে কারণে তারা বায়ারকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করতে পারছেন না। সারাদেশেই এরকম অবস্থা চলছে।’
শনিবার (২০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) পরিচালনা পর্ষদের সভার আয়োজন করা হয়। সভা শেষে বিকেএমইএ সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বহুবার গ্যাসের সমস্যা চেষ্টা করেও দূর করতে পারছি না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় তিন লাখ শ্রমিক বিপদগ্রস্ত হয়েছে।
আমরা চেষ্টা করেছি ডিসেম্বর মাসের বেতনগুলো তাদের দিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা এক্সপোর্ট করতে পারিনি। আমরা আমাদের মালগুলো নির্দিষ্ট সময়ে তৈরি করতে পারিনি। তার ওপর নির্বাচন ছিল, এখন আবার জানুয়ারি মাসের বেতন দেওয়ার সময় চলে আসছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ওপর প্রেশার আসছে বেতনটা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। এই বেতন আমরা কোথা থেকে দেব? আমরা এগ্রি করেছিলাম গ্যাসের দাম বেড়ে যাবে, বাড়লে কোনো আপত্তি থাকবে না যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাই। আমরা বিদ্যুৎ যদিও একটু ঠিকমতো পাচ্ছি কিন্তু গ্যাসের ব্যাপারে একেবারে হতাশ হয়ে গেছি।’
ক্রোনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এইচ আসলাম সানি বলেন, ‘আমাদের ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বায়ারদের সঙ্গে কমিটমেন্ট রাখতে পারছি না। আমাদের শিপমেন্টের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এখন আমরা টোয়েন্টি ফাইভ পার্সেন্টও ফ্যাক্টরি চালাতে পারছি না। শিপমেন্টের বাকি মালগুলো ক্যানসেল হচ্ছে। ব্যাংকের পেমেন্ট দিতে পারবো না। এয়ার শিপমেন্ট হচ্ছে না। যে পরিমাণ অর্থ লোকসান আমরা করছি, সাত বছরেও এ ক্ষতি পোষাতে পারবো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মারাত্মকভাবে লসের সম্মুখীন হচ্ছি। শ্রমিকদের কাজ নেই। (অথচ) মাস শেষে তাদের বেতন দিতে হবে। গ্যাস না পেয়েও আমাকে গ্যাস বিল দিতে হবে। এটা অমানবিক। এ ব্যাপারে আমরা সরকারকে বারবার বলছি। বিকেএমইএ কথা বলছে। কেউ শুনছে না, আমাদের প্রবেলেমটা কারও দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।’
এআর